ফরিদপুরের গড়াই নদের লংকারচর বালুমহাল ইজারায় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এতে বিক্রি হওয়া ১৯টি দরপত্রের মধ্যে জমা পড়েছে মাত্র একটি। ঠিকাদারদের দরপত্র জমাদানে বাধা সৃষ্টি করে এক যুবলীগ নেতাকে ইজারা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সাবেক সংসদ সদস্য ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় নেতা খন্দকার নাসিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করেছেন মেসার্স মোহনা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী শেখ আজিজুল হক। এতে ১০ জন ঠিকাদারের স্বাক্ষর রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বোয়ালমারী উপজেলার লংকারচর বালুমহাল ইজারা দিতে ৬ ফেব্রুয়ারি দরপত্র আহ্বান করে জেলা প্রশাসন। এতে বালুমহালের সরকারি মূল্য নির্ধারণ করা হয় ১ কোটি ২০ লাখ ৭৩ হাজার ৪১৮ টাকা। ২৬ ফেব্রুয়ারি ছিল দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। এর মধ্যে দরপত্র ক্রয় করে ১৯টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু শেষ মুহূর্তে মাত্র একটি দরপত্র জমা দেন কান্দাকুল গ্রামের বাসিন্দা ও মেসার্স রবিউল ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী রবিউল ইসলাম। পরে জেলা বালুমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্তে এবং সরকার নির্ধারিত মূল্য থেকে প্রায় ৩৬ লাখ টাকা বেশি হওয়ায় ইজারাটি তাঁকে দেওয়া হয়।
অন্য ঠিকাদারদের অভিযোগ, দরপত্র জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁদের হুমকিসহ বাধা দেওয়া হয়। ফরিদপুর-১ (মধুখালী, আলফাডাঙ্গা ও বোয়ালমারী) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলাম হুমকি দেন ও ভয়ভীতি দেখান। যে কারণে অন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দেয়নি। তিনি যুবলীগ নেতা রবিউলকে ইজারাটি পাইয়ে দেওয়ার বন্দোবস্ত করেন।
রবিউল ফরিদপুর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ। তিনি বোয়ালমারী উপজেলা যুবলীগের সদস্য এবং ময়না ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি।
এ নিয়ে সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগে শেখ আজিজুল হক বলেন, ‘রবিউলের সঙ্গে বিএনপির ঊর্ধ্বতন নেতা জড়িত হয়ে আমাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে দরপত্র জমা না দেওয়ার জন্য বলা হয়। আমরা এহেন অবস্থায় আপনার কাছে দরপত্র জমা দিতে ব্যর্থ হই এবং বিভিন্নভাবে তাঁদের গুন্ডা বাহিনী দিয়ে দরপত্র ছিনিয়ে নিয়ে যায়। বিষয়টি যেন কারও কাছে প্রকাশ না করি, সে জন্য প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়।’
আজিজুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘খন্দকার নাসিরুলের সঙ্গে আমাদের শর্ত ছিল, আওয়ামী লীগের কোনো লোক ইজারা নিতে পারবে না। বিষয়টি নিয়ে নাসিরুল ভাইয়ের কাছের লোক রিপনকে দেওয়ার জন্য চুক্তি হয়। কিন্তু তাঁকে না দিয়ে বেশি টাকার বিনিময়ে ওই যুবলীগ নেতাকে দেওয়া হয়। আমরা যাঁরা দরপত্র ক্রয় করেছিলাম, প্রত্যেককে হুমকি দেওয়া হয়। এমনকি মৃত্যুঞ্জয় নামক একজনকে তুলে নিয়ে যায় তাঁর লোকজন। পরে তাঁকে ভয়ভীতি দেখানো হয়।’
এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কৃষক দলের নেতা খন্দকার নাসিরুল। তিনি বলেন, ‘আমি তো কোনো বালুর ব্যবসা করি না। কেন বাধা দিতে যাব? আমি বাধা দিয়েছি, কোনো প্রমাণ দিতে পারবে? যারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে, তারা মূলত আওয়ামী লীগ ও বিএনএমের লোক। ষড়যন্ত্র করে শিডিউল কিনে আমাকে হয়রানি করছে।’
ইজারা পাওয়া রবিউলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এই বালুমহাল আমার। বিগত দিনে এর মালিক ছিলাম আমি। বর্তমান মালিক আমি এবং ভবিষ্যতের মালিকও আমি। আমি সরকারের রাজস্ব বিভাগে ৫০ লাখ টাকা বেশি দিয়েছি। তাহলে আমাকে দেবে না, কাকে দেবে?’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান মোল্যা বলেন, ‘আমার কাছে অভিযোগ আসেনি এবং অভিযোগ আমলে নেওয়ার কিছু নেই। শিডিউল কিনে কেউ যদি ডিসি, ইউএনও অফিসে না দিতে পারে তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের জানাবে, কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে জানায়নি। তারা যদি আমার দপ্তরে এসে বাধা পেয়ে আমাকে জানাত, তাহলে আমি দেখতাম কোন সেই পাওয়ারফুল লোক, কে সেই মাস্তান। বাইরে থেকে কেউ যদি বাধা সৃষ্টি করে, সে বিষয়ে তো আমার মাথাব্যথা না।’
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ‘বালুমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভার সিদ্ধান্তে নীতিমালা অনুযায়ী ইজারা দেওয়া হয়েছে। নিয়ম রয়েছে, সরকারি মূল্যের চেয়ে যদি বেশি হয় এবং একক কেউ থাকে, তাহলে তাকে দেওয়া যায়। আমরা সরকারি মূল্যের চেয়ে প্রায় ৩৬ লাখ টাকা বেশি পেয়ে ইজারা দিয়েছি। এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অনিয়ম হয়নি, স্বচ্ছতার সঙ্গে টেন্ডার হয়েছে।’