Ajker Patrika
হোম > অপরাধ > ঢাকা

দেশীয় পর্নোগ্রাফিতে নারী বিদ্বেষ বেশি: গবেষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

দেশীয় পর্নোগ্রাফিতে নারী বিদ্বেষ বেশি: গবেষণা

বাংলাদেশে বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, ওয়েব সিরিজ কিংবা নাটক-সিনেমায় পর্নোগ্রাফির মতো যেসব পরিবেশনা রয়েছে, সেগুলোতে অশ্লীলতার চেয়ে নারীর প্রতি নিন্দা, নির্যাতন বা অপমানসূচক উপাদানই বেশি। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমন তথ্য।

২০২১-এর অক্টোবর থেকে ২০২২-এর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পরিচালিত এই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একদিকে যেমন দেশীয় অনলাইন ও মিডিয়াতে নারীর প্রতি অবমাননাকর, নারীর অশালীন দেহ প্রদর্শন, যৌন আবেদনময় ও পর্নোগ্রাফিক কনটেন্ট বাড়ছে, অন্যদিকে অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহার করে কিছু অল্পবয়সী মেয়ে বা প্রাপ্তবয়স্ক নারী ছেলেদের প্রলুব্ধ করে জনপ্রিয়তা অর্জনের চেষ্টাও করছে। 

আটটি বিভাগের ১৬টি জেলায় ৫১৮ জন বিভিন্ন স্তরের মানুষ এই গবেষণায় অংশ নেন। তাঁদের মধ্যে ৮১ শতাংশ মনে করেন, যেসব পর্নোগ্রাফিক কনটেন্ট দেশীয়ভাবে নির্মাণ করা হয়, সমাজে সেগুলোর প্রভাব ও বিস্তার খুব বেশি। আর এখানে দেশীয় পর্নোগ্রাফিতে অশ্লীলতার চাইতেও বেশি থাকে নারীকে নিন্দা, নির্যাতন ও অপমান। 

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত ‘বাংলাদেশে ইন্টারনেটে পর্নোগ্রাফির সহজ বিস্তার এবং নারীর প্রতি সহিংসতা’ শীর্ষক গবেষণাটির ফলাফল তুলে ধরা হয়। 

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ গবেষণা করেছে। গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, সমাজে নারীর প্রতি সহিংস ও নির্যাতনমূলক আচরণ বেড়েছে। গবেষণায় অংশ নেওয়া ৮২ শতাংশ মানুষ এমনটা মনে করেন। এমন মত দেওয়ার ব্যক্তিদের মধ্যে নারী ৪০ শতাংশ এবং পুরুষ ৪২ শতাংশ। 

এ ছাড়া মতামত জরিপে দেখা গেছে, ৮১ শতাংশ মানুষ স্বাধীনচেতা মেয়েদের খারাপ মনে করেন। সেসব মেয়েদের নিয়ে অপমানসূচক মন্তব্য ও বাজে ধারণা রাখেন ৩৯ শতাংশ নারী ও ৪২ শতাংশ পুরুষ। 

দেশে অনলাইন পর্নোগ্রাফির গতিপ্রকৃতি ও গভীরতা বোঝা এবং অনলাইনে যেসব মর্যাদাহানিকর বা অবমাননাকর কনটেন্ট আছে সেগুলো কী? যৌনতা এবং কামোত্তেজনা উসকে দেওয়ার কাজে কীভাবে প্রযুক্তি বা তথ্যপ্রযুক্তিকে ব্যবহার করা হচ্ছে, তা বোঝার জন্য মূলত গবেষণাটি করেছে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন। 

সেই সঙ্গে এ ধরনের কনটেন্টের যারা ভোক্তা তাঁদের প্রাথমিক উদ্দেশ্য জানা—কেন তাঁরা নারী সম্পর্কে নেট দুনিয়াতে যেসব অবমাননাকর কনটেন্ট প্রচারিত হচ্ছে, তা দেখছে বা গ্রহণ করছে। পর্নোগ্রাফি দেখার পর এবং কনটেন্টগুলো নারীর প্রতি অবমাননাকর, এটি জানার পর মানুষ কীভাবে নারীর প্রতি আচরণ করে বা তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে কেমন প্রভাব পড়ে—তা বিশ্লেষণ করাও এ গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল। 

অনলাইন পর্নোগ্রাফির সহজ প্রবেশগম্যতা এবং নারীর প্রতি অবমাননাকর মন্তব্য বা কনটেন্টের সঙ্গে নারীর প্রতি সহিংসতার কী সম্পর্ক এবং এর অন্তর্নিহিত কারণ বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছেন গবেষকেরা। এ গবেষণা করতে গিয়ে গবেষকদের দৃষ্টিতে পর্নোগ্রাফি নতুন আঙ্গিকে ও ভিন্নভাবে ধরা পড়েছে। 

বাংলা ভিডিওতে অশ্লীল গল্প বলা, যৌনপল্লি থেকে সরাসরি, অশ্লীল খবর ও গল্প, বাংলা ইমোতে ভিডিও সেক্স, ওয়েব সিরিজগুলোতে অশ্লীলতা, বাংলা যৌন কামনা উদ্রেককারী ব্লগ, বাংলা ইমো ভিডিও সেক্স প্রমোশন, রিয়াল অ্যান্ড ভার্চ্যুয়াল সেক্স সার্ভিস গ্রুপস ইন ফেসবুক, ইমো সেক্স সার্ভিস কাস্টমার ফেসবুক অ্যান্ড অথেনটিকেশন ইত্যাদি উৎস থেকে দেশে পর্নোগ্রাফি ছড়ানো হচ্ছে। 

গবেষকেরা বলছেন, অনলাইনে নারীর অবমাননাকর যে ভাবমূর্তি দেখানো হয়, তা সমাজে প্রচলিত ‘মন্দ মেয়ের’ ভাবমূর্তিকে আরও পাকাপোক্তভাবে প্রতিষ্ঠিত করছে। বাংলাদেশে পর্নোগ্রাফি ও অনলাইনে নারীবিষয়ক কী কী কনটেন্ট রয়েছে, তা খুঁজতে গিয়ে দেখা গেছে, নারীর প্রতি টিটকারি, অবমাননা, প্রতিশোধ, ভার্চ্যুয়াল সেক্স, সেক্স ট্রেড প্রোমো, অশ্লীলতা এবং নিউজ প্রোমো এতে স্থান পাচ্ছে। 

জরিপে দেখা গেছে, সমাজে ছাঁচে ফেলা ‘ভালো’ ও ‘মন্দ’ মেয়ের ধারণা লালন করেন ৭৯ শতাংশ মানুষ। ৫২ শতাংশ মানুষ মনে করেন, নারীদের মিডিয়ায় বা সিনেমায় কাজ করা, পুরুষের সঙ্গে রাতের শিফটে কাজ করা বা দূর-দুরান্তে একসঙ্গে ভ্রমণ বা কাজে যাওয়া ঠিক নয়। এর মধ্যে ২১ শতাংশ নারী এবং ৩১ শতাংশ পুরুষ এমন ধারণা পোষণ করেন। 

এ ছাড়া যেসব মেয়ে আচরণে ও পোশাকে সামাজিক প্রথা মানে না, স্বাধীনভাবে চলতে চায় এবং আচরণে নারী-পুরুষ ভেদ করে না বলে মনে হয়, তাদের প্রতি মানুষ কটূক্তি, সমালোচনা, তির্যক মন্তব্য ও অপমানজনক আচরণ করতেই পারে—এমন মনে করেন ৬৪ শতাংশ মানুষ। এর মধ্যে নারী শতকরা ২৯ জন ও পুরুষ শতকরা ৩৪ জন। 

গবেষণায় উঠে এসেছে, ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা স্মার্টফোনে মোবাইল ডেটা বেশি ব্যবহার করে। তবে মন্দ কনটেন্ট যেমন, প্রাপ্তবয়স্কদের সিনেমা, ন্যুডিটি, পর্নোগ্রাফি দেখে ৭৫ শতাংশ ছেলে। আর টিকটক, লাইকি ও ইনস্টাগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোর প্রতি নারী-কিশোরীদের আগ্রহ বেশি। 

যেসব মেয়ে স্বাধীনচেতা, সমাজে যাদের মন্দ মেয়ে হিসেবে বিবেচনা করা হয় তাদের কারণে অন্য ছেলে-মেয়েরা নষ্ট হয়ে যাবে বলে ধারণা পোষণ করেন ৭৯ শতাংশ মানুষ। এর মধ্যে নারী ৪৪ শতাংশ ও পুরুষ ৪৬ শতাংশ। আর তাই অনলাইনে ‘মন্দ মেয়ের’ মতো আচরণ যারা করে, তাদের এসব কাজ থেকে বিরত রাখার জন্য তাকে হেয় করা, মন্দ বলা ও অপমানজনক আচরণ করা সমাজের জন্য উপকারী বলে মনে করেন ৪৪ শতাংশ মানুষ। এর মধ্যে নারী ১৮ ভাগ ও পুরুষ ২৫ ভাগ। 

যখন কেউ ‘মন্দ’ মেয়ে বা নারীর মতো আচরণ করেন, তখন তার প্রতি বিরূপ মন্তব্য, টিটকারি দেয় ৭১ শতাংশ পথচারী, এর মধ্যে শতকরা ৩৩ জন নারী ও ৩৮ জন পুরুষ। শতকরা ৭৫ জন প্রতিবেশী, পরিবারের সদস্য শতকরা ৪৮ জন, আত্মীয় শতকরা ৬৪ জন এবং অপরিচিত মানুষ ৬৩ জন। 

গবেষণা উপস্থাপন অনুষ্ঠানটি মডারেট করেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম। বক্তব্য দেন অধ্যাপক ড. শাহনাজ হুদা, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সিপি অ্যান্ড সিআরজি, রেহনুমা ই জান্নাত, সাইকোলজিক্যাল কাউন্সিলর এবং সিনিয়র সাংবাদিক নওরোজ ইমতিয়াজ।

৩ কোটি টাকার আইসিইউ বিভাগ, জনবলসংকটে অচল

বাহারি খাবারে সেজেছে বেইলি রোডের ইফতার বাজার

দক্ষিণখানে ওভারটাইমের টাকা কম দেওয়ায় নিপা গার্মেন্টসে ভাঙচুর, আহত ৬

খারাপ প্রকৃতির মানুষকে ছাড় দেওয়া হবে না: ডিবি প্রধান

হাতের টানেই উঠে যাচ্ছে কার্পেটিং

জোরপূর্বক মানুষের ফসলি জমি কেটে মাছের খামার তৈরি, যুবদল নেতা আটক

বসুন্ধরায় ছিনতাইকারী সন্দেহে ২ বিদেশি নাগরিককে মারধর

যবিপ্রবির সাবেক উপাচার্যসহ ৪ শিক্ষকের নামে মামলা

ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ: বিক্ষোভের মুখে ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থগিত

নারীর প্রতি সহিংসতা-নিপীড়নের প্রতিবাদে জাবিতে মানববন্ধন