সাভারের আশুলিয়ার ডিশ ব্যবসায়ী ইলিম সরকারের চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডে জড়িত আরও এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে তাঁকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এর আগে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ইলিম সরকারের স্ত্রী ও তাঁর পরকীয়া প্রেমিককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেন ঢাকা জেলা পিবিআইয়ের উপপরিদর্শক সালেহ ইমরান।
গ্রেপ্তারকৃত আসামি হলেন আশুলিয়া থানার ইয়ারপুর গ্রামের আ. হকের ছেলে সাইফুল ইসলাম ওরফে ইউসুফ (৩১)। গত বুধবার রাতে ঢাকার উত্তরা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পিবিআইয়ের তথ্যমতে, নাটোর জেলার গুরুদাসপুর থানার তেলটুপি গ্রামের আ. সামাদের ছেলে মো. রবিউল করিম পিন্টু (৩৫) আশুলিয়া এলাকায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে লাইনম্যান হিসেবে চাকরি করতেন। চাকরির সুবাদে ইলিম সরকারের বাসায় বিদ্যুতের মিটার লাগানোর কাজ করতে গিয়ে তাঁর স্ত্রী কেমিলির সঙ্গে ২০১৯ সালে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে পিন্টুর। এদিকে সাইফুল ইসলাম ওরফে ইউসুফ একজন পল্লী বিদ্যুতের ঠিকাদার ব্যবসায়ী। কাজের সুবাদে পিন্টু ও ইউসুফের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বন্ধু পিন্টুর কথায় তাঁকে সহায়তা করতেই হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন ইউসুফ। শুধু বন্ধুত্ব রক্ষা করতেই বন্ধুর কাজে সহায়তা করেন ইউসুফ। এ কাজের বিনিময়ে তাঁদের মধ্যে কোনো আর্থিক লেনদেন হয়নি।
পিবিআই আরও জানায়, পরকীয়ার বিষয়টি কেমিলির স্বামী টের পেয়ে গেলে তিনি তাঁর স্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের ডেকে তা প্রকাশ করে দেবেন বলে জানান। এ ঘটনা নিয়ে তাঁদের মধ্যে দাম্পত্য কলহের সৃষ্টি হয়। উক্ত পরকীয়ার বিষয়টি যাতে অন্য কেউ জানতে না পারে, তার জন্য ঘটনার এক সপ্তাহ আগে কেমিলি ও তাঁর প্রেমিক পিন্টু মিলে ইলিম সরকারকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী পিন্টু ইলিম সরকারের কাঠগড়া এলাকার বাসায় দুজন ভাড়াটিয়া খুনিকে বাসা ভাড়া করে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। তারা কাজটি সফল না করতে পারায় পিন্টু নিজেই হত্যার পরিকল্পনা করেন। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন ২৮ মার্চ সকাল ৯টার দিকে কেমিলির পরামর্শে পিন্টু তাঁর এক বন্ধুকে নিয়ে বাসায় প্রবেশ করেন। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কেমিলি রাতের বেলা দইয়ের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে ইলিম সরকারকে খাইয়ে দেন। ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে ইলিম সরকার নিস্তেজ হয়ে গেলে সকালবেলা পিন্টু তাঁর বন্ধু ইউসুফকে নিয়ে বাসায় এসে চাকু দিয়ে কুপিয়ে ইলিম সরকারকে হত্যা করে পালিয়ে যান। পালিয়ে যাওয়ার আগে ইলিম সরকারের বাসার সিসিটিভি ফুটেজের ডিভিআর মেশিন খুলে নিয়ে যান তাঁরা।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সালেহ ইমরান জানান, গ্রেপ্তারকৃত আসামি ইউসুফকে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। হেডকোয়ার্টার্সের নির্দেশে গত ২১ জুলাই পুলিশ মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে। এর আগে গ্রেপ্তারকৃত আসামি পিন্টু ও কেমিলি হত্যাকাণ্ডে তাঁদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি প্রদান করেন। এ নিয়ে এই মামলায় জড়িত মোট তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা জানান।
বিষয়টি ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে কেমিলির স্ত্রী ডিশ ব্যবসার বিরোধকে কেন্দ্র করে উক্ত ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে প্রচার করতে থাকেন। এমনকি স্বামীর হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে সংবাদ সম্মেলনও করেন তিনি।