দরিদ্র ও বেকার তরুণ-যুবকদের টার্গেট করেন তাঁরা। অস্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপে চাকরি লোভ দেখিয়ে রাজি করান। এরর মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে পাচার করেন ভারতে। আবার সেখানে আটকে রেখে আদায় করা হয় মুক্তিপণ। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে এই আন্তর্জাতিক মানবপাচার চক্রের অন্যতম তিন হোতাকে আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে ভুয়া পাসপোর্ট, জাল ভিসা, দলিল এবং নগদ টাকাসহ মানবপাচার সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র উদ্ধার করা করা হয়।
গতকাল সোমবার দিবাগত মধ্যরাতে র্যাব-৪ রাজধানীর মিরপুর পল্লবী ও উত্তরা এলাকা থেকে তাঁদের আটক করে। আটককৃতরা হলেন-মল্লিক রেজাউল হক সেলিম (৬২), মো. বুলবুল আহমেদ মল্লিক (৫৫) এবং (নিরঞ্জন পাল (৫১)।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-৪-এর অধিনায়ক মোজাম্মেল হক।
মোজাম্মেল হক বলেন, ‘২০২০ সালের নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়া পাঠানোর কথা বলে জাহাঙ্গীরকে ভারতে পচার করে দেওয়া হয়। বেশ কিছুদিন কলকাতায় আটক থাকেন তিনি। কলকাতার টর্চার সেলে তাঁকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে দেশে পরিবারের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করে পাচারকারী চক্র। দেশে এসে জাহাঙ্গীর র্যাব-৪-এর কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগে তিনি মানবপাচার চক্রের ফাঁদে পড়ে কীভাবে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার হয়েছিলেন, আটক অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন, তাঁর জীবনে ঘটে যাওয়া হৃদয় বিদারক কাহিনি ও শেষ পর্যন্ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কীভাবে কৌশলে দেশে ফিরে আসেন তার বর্ণনা দেন। মানবপাচার চক্র সম্পর্কে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্যও দিয়েছেন তিনি। প্রাথমিক তদন্তে সেসব তথ্যের সত্যতা পায় র্যাব।’
র্যাব জানায়, এই চক্র রাজধানীসহ দেশের বেশ কয়েকটি এলাকায় সক্রিয় রয়েছে। ফেনী, কুমিল্লা, নবাবগঞ্জ, শরিয়তপুর, মাদারীপুর এবং ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে লোক সংগ্রহ করা হয় বলে জানিয়েছেন আটককৃতরা। ভারতে মানব পাচারকারী চক্রের সদস্য রাজিব খান ও মানিক কলকাতায় এবং রবিন সিং দিল্লিতে টর্চার সেলের/সেফহোমে ভুক্তভোগীদের আটক রাখার মূল দায়িত্ব পালন করে থাকেন। চক্রটি এ পর্যন্ত শতাধিক ব্যক্তিকে এভাবে ভারতে পাচার করেছে।
আটকদের জিজ্ঞাসাবাদে তথ্যের বরাত দিয়ে র্যাব জানায়, অস্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপে চাকরি দেওয়ার নামে প্রথমে ১২-১৫ লাখ টাকা নেওয়া হয়। এরপর ভারতের দিল্লি ও কলকাতার টর্চার সেলে আটক রেখে মুক্তিপণ হিসেবে আরও ১৫-২০ লাখ টাকা আদায় করে তারা। অভিযোগকারী জাহাঙ্গীরও পাচারের শিকার ও নিঃস্ব হয়েছেন।
জাহাঙ্গীর র্যাবকে জানান, বিদেশে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে বিভিন্ন উপায় খুঁজছিলেন তিনি। ২০১৯ সালে রেজাউল হক সেলিম ও বুলবুল আহমেদ মল্লিকের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। তাঁরা জাহাঙ্গীরকে অস্ট্রেলিয়া এবং জাহাঙ্গীরের ভাগনে আকাশকে নেদারল্যান্ডসে পাঠানোর জন্য ৩৪ লাখ টাকা দাবি করেন। চক্রের মূল হোতা রেজাউলকে নগদ ৮ লাখ টাকা এবং কিছুদিন পর আরও ৬ লাখ টাকা দেন জাহাঙ্গীর। চক্রটি ২০২০ সালের ডিসেম্বরে জাহাঙ্গীর ও তাঁর ভাগনেকে ভারতে পাচার করে। উভয়ে ভারতে নিরঞ্জন ও অন্যান্য সহযোগীর কাছে আটক ছিলেন। এ সময় তাঁদের ওপর অকথ্য নির্যাতন করা হয়।