রাজধানীর হাতিরপুল এলাকার মোবাইল ফোন মার্কেট, মোতালেব প্লাজার পেছনের এক বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে তৈরি করা হচ্ছিল নকল নকিয়া ও স্যামসাং ব্র্যান্ডের ফিচার ফোন। পঞ্চম শ্রেণি পাস দুজন মোবাইল মেরামতকারীর নেতৃত্বে ছয়জনের একটি চক্র এসব মোবাইল প্রস্তুত ও বাজারজাত করে আসছিল কয়েক বছর যাবৎ। এসব ব্রান্ডের দেশীয় প্রস্তুতকারক ও পরিবেশকদের একটি মামলার প্রেক্ষিতে গত শনিবার অভিযান চালিয়ে মোতালেব প্লাজা ও মোতালেব টাওয়ার থেকে চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর)।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, মশিউর রহমান, সাগর হোসেন, রহমত আলী, সুজন আলী, তরিকুল ইসলাম বাবু ও মনির হোসেন। আজ সোমবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবি প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
অভিযানের সময় নকল কারখানা থেকে নকিয়া ব্রান্ডের ৩১৩টি ফোন, স্যামসাংয়ের ২০৬টি ফোন ও নকল মোবাইল তৈরির কাজে ব্যবহৃত একটি মেশিনসহ বিপুল পরিমাণ যন্ত্রাংশ উদ্ধার করা হয়। ডিবি প্রধান জানান, এসব নকল ফোন বিক্রির কারণে সরকার ৮ থেকে ১০ কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে।
নকল মোবাইল তৈরির জন্য নষ্ট মোবাইল মেরামত করার কথা বলে চায়না থেকে যন্ত্রপাতি কিনে আনতো চক্রটি। যা খালাস হতো চট্টগ্রাম বন্দরে। এই যন্ত্রপাতি এক জায়গায় করে কোনো নিয়ম না মেনে অবৈজ্ঞানিকভাবে প্রস্তুত করা হতো নকিয়া ও স্যামসাংয়ের মতো ব্রান্ডের মোবাইল। এসব মোবাইল এক থেকে দুই মাসে নষ্ট হয়ে যেত। প্রস্তুতকারক নিয়ম না মানায় মোবাইলের রেডিয়েশন তারতম্য বা নিয়ন্ত্রণ ঠিক থাকে না তাই ব্যবহারকারীর চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকে। এসব মোবাইল বিস্ফোরণের সম্ভাবনাও থাকে সব থেকে বেশি। আইএমইআই নম্বর বদলে মোবাইল তৈরি করার কারণে এসব মোবাইল ব্যবহার করে অপরাধীরা সহজেই অপরাধ করতে পারে। এতে তাদের চিহ্নিত করতে অসুবিধা হয়।
ব্র্যান্ড নকল করে এভাবে মোবাইল তৈরির কারণে এসব ব্র্যান্ড বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এতে দেশীয় গ্রাহকেরা উন্নত প্রযুক্তির মোবাইল ব্যবহারের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে বলে মনে করেন ইউনিয়ন লিমিটেড গ্রুপের ফাইন্যান্সিয়াল কন্ট্রোলার আসিফ মোহাম্মদ আবিদ। বাংলাদেশে নকিয়া মোবাইলের অনুমোদিত প্রস্তুতকারক ও পরিবেশক ইউনিয়ন লিমিটেডের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘বাইরের যে স্বনামধন্য ব্রান্ডের মোবাইল প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান আছে তাঁরা কিন্তু আমাদের এক্সপোর্টের পারমিশন দিতে দ্বিধা দ্বন্দ্বে আছে। তাঁরা প্রশ্ন তুলছে অনুমতি দিলে তোমাদের এখানে কোয়ালিটি ইনশিয়োর করতে পারবা কী না? তোমাদের মার্কেটের এসব সমস্যা আগে সমাধান করো।’