গভীর রাতে ডাবল ইঞ্জিন নৌকা নিয়ে তুরাগ নদীতে দস্যুতার জন্য ঘুরে বেড়াতো একদল দস্যু। ইট, বালু বোঝাই ট্রলার, যাত্রীবাহী নৌকা, লঞ্চ আটকে ডাকাতি করত তাঁরা। তাই এই দলের নাম গাংচিল গ্রুপ। তবে গাংচিল গ্রুপের সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী কার্যক্রম শুধুমাত্র নদীতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। ছড়িয়ে পড়েছিল মোহাম্মদপুর, আমিনবাজার, সাভার পর্যন্ত। সেই গাংচিল গ্রুপের মূল হোতা লম্বু মোশাররফ ও তাঁর ৫ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
আজ সোমবার সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন। তিনি জানান, ‘রোববার রাতে মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—মো. মোশাররফ ওরফে লম্বু মোশাররফ, মো. বিল্লাল, মো. মোহন, সাহাবুদ্দিন সাবু, মো. রুবেল ও মো. সুমন মিয়া।’
তিনি বলেন, গ্রেপ্তারের সময় তাঁদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, ৪ রাউন্ড গুলি,৩টি বড় ছোরা,২টি চাপাতি,২টি চাকু,১টি চাইনিজ কুড়াল,১টি দা,১টি হেক্সো ব্লেড,১টি গ্রিল কাটার,১টি কাটার প্লাস, ৪২৩ পিচ ইয়াবা,৫টি মোবাইল ও নগদ অর্থ উদ্ধার করা হয়েছে।
খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘গত কিছুদিন আগে মোহাম্মদপুরের সন্ত্রাসী কবির হোসেনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে লম্বু মোশাররফ ও তাঁর সহযোগীদের গ্রেপ্তার করা হয়। মোহাম্মদপুরের স্থানীয়রা দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে আসছিলেন। মোশাররফের নেতৃত্বে গাংচিল গ্রুপ মোহাম্মদপুর, আমিনবাজার, সাভার ও তুরাগ এলাকায় মার্কেট, বাসস্ট্যান্ড, হাউজিং প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি, অপহরণ, ছিনতাই, মাদক ব্যবসা, খুন, ধর্ষণসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত।’
র্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, এই গ্রুপের সদস্য সংখ্যা ২৫ থেকে ৩০ জন। স্থানীয় প্রভাবশালীদের পক্ষে তাঁরা কাজ করে। মোশাররফের সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘২০১৭ সালে গাংচিল গ্রুপের প্রধান আনারের মৃত্যুর পর গাংচিল গ্রুপ কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। মূল অংশটি মোশাররফের নেতৃত্বে পরিচালিত হতে থাকে।’
‘মোশাররফের নির্দেশে বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদীতে বালু ভর্তি ট্রলার, ইটের কার্গো, জাহাজ, লঞ্চ আটকে চাঁদাবাজি ও ডাকাতি করত তাঁর সহযোগীরা। নদীর পাশের ইটের ভাটা থেকে মাসিক চাঁদা আদায় করত। মোহাম্মদপুর ও আশপাশের এলাকায় নির্মাণাধীন ভবন, বাড়ি ও জমির মালিকদের থেকেই চাঁদা আদায় করত। অন্যথায় জমি দখল, খুনের হুমকি, মারধর করত তাঁরা।’
গ্রেপ্তার মোশারফের উত্থান প্রসঙ্গে তিনি জানান, ‘মোশারফ ১৯৯০ সালে জীবিকার তাগিদে ঢাকায় আসে। প্রথমে সে বেবি ট্যাক্সি ও সিএনজি চালাতো। পরবর্তীতে সে হাউজিং প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে। ২০০০ সালে কাফরুলে ছিনতাইয়ের মাধ্যমে অপরাধ জগতে তাঁর প্রবেশ। পরবর্তীতে গাংচিল বাহিনীর প্রধান আনারের মাধ্যমে তাঁর গাংচিল বাহিনীতে প্রবেশ। মারামারিসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সময় ভুক্তভোগীকে গলায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করার কারণে সে ‘গলাকাটা মোশারফ' হিসেবে পরিচিতি পায়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার কারণে সে বিভিন্ন সময়ে মোহাম্মদপুর, কেরানীগঞ্জ, কাফরুলসহ বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে থাকত। তাঁর বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় হত্যাচেষ্টা, ছিনতাই, ডাকাতি, অবৈধ অস্ত্র, মাদক ব্যবসা, ধর্ষণ, অপহরণ, পুলিশ অ্যাসল্টসহ বিভিন্ন অপরাধে ১৫ টির অধিক মামলা রয়েছে। সে বিভিন্ন মেয়াদে একাধিকবার কারাবরণ করেছেন।’
এ ছাড়া গ্রেপ্তার বিল্লালের বিরুদ্ধে ১০ টি, মো. মোহনের বিরুদ্ধে ৮ টি, সাহাবুদ্দিন সাবুর বিরুদ্ধে ৬ টি, মো. রুবেলের বিরুদ্ধে ৩টি ও মো. সুমন মিয়ার বিরুদ্ধে ২ টির অধিক মামলা রাজধানীর বিভিন্ন থানায় রয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। তাঁরা প্রত্যেকেই বিভিন্ন মেয়াদে বিভিন্ন সময়ে কারাবরণ করেছেন। গ্রেপ্তার আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।