নিজস্ব প্রতিবেদক, সাভার (ঢাকা)
মাদকসেবনের প্রতিবাদ করেছিলেন ঢাকার সাভারের কতিপয় যুবক ও তরুণ। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মাদকসেবীরা দুজনকে ছুরিকাঘাত করেন। এরপর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ বুধবার সকালে তাঁদের একজনের মৃত্যু হয়েছে।
নিহত যুবকের নাম কৃষ্ণ সরকার (৪০)। তিনি সাভার পৌর এলাকার আড়াপাড়া মহল্লার ননী গোপাল সরকারের ছেলে। ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানে ফটোগ্রাফির কাজ করতেন কৃষ্ণ সরকার। তাঁর স্ত্রী ও আট বছরের এক ছেলে রয়েছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে কৃষ্ণ সরকারের বাসার কাছে জঙ্গলে বসে একই এলাকার নয়ন, সোহেল ওরফে বুলেট, আকাশ ওরফে টারজান ও শেপাল বাশার মাদক সেবন করছিলেন। বাসায় ফেরার পথে কৃষ্ণ এর প্রতিবাদ করলে নয়নসহ অন্যরা তাঁকে মারধর এবং তাঁর পেটে ও বুকে ছুরিকাঘাত করেন। তাঁর চিৎকারে লোকজন এগিয়ে গেলে পালিয়ে যাওয়ার সময় তাঁরা পাশের ড্রেন মার্কেট এলাকার বিপ্লব দাসের বাড়িতে গিয়ে তাঁর ছেলে বিপুল দাসের তলপেটে ও বাঁ পায়ে ছুরিকাঘাত করেন। এ সময় বিপুলের ভাই বিকাশ দাস এগিয়ে এলে তাঁকেও মারধর করেন মাদকসেবীরা।
কৃষ্ণ সরকারের ছোট ভাই গোবিন্দ সরকার জানান, ছুরিকাঘাতে আহত তাঁর ভাইকে চিকিৎসার জন্য সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ বুধবার সকাল ৮টার দিকে তিনি মারা যান। এ ব্যাপারে তিনি সাভার থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
ঘটনাস্থলের পাশের বাসিন্দা স্বপন সাহার স্ত্রী বিষকা সাহা বলেন, ‘ঘটনার দিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে কৃষ্ণ আমাদের বাড়ির সামনে দিয়েই বাড়ির দিকে যান। এর কয়েক মিনিট পর কয়েক যুবক পেছন থেকে কৃষ্ণকে ধাওয়া করছিলেন। কৃষ্ণ বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার করতে করতে পেটে হাত চেপে ধরে দৌড়ে এসে আমাদের ঘরের বারান্দায় বসে পড়েন। এ সময় তাঁর পেট থেকে রক্ত ঝরছিল। লোকজন জড়ো হতেই ওই যুবকেরা পালিয়ে যান।’
কৃষ্ণ সরকারের বাড়ির মালিক রতন সাহার ছেলে পার্থ সাহা ও হামলার শিকার বিপুল দাসসহ এলাকার লোকজন জানান, নয়ন ও তাঁর ভাই শামীম হোসেন ওরফে মাইকেল আড়াপাড়া ও পাশের ড্রেন মার্কেট এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারি ও ছিনতাইকারী। সোহেল ওরফে বুলেট, আকাশ ওরফে টারজান ও শেপাল বাশার তাঁদের সহযোগী। তাঁরা মাদক বিক্রি ও ছিনতাইয়ের পাশাপাশি এলাকার বিভিন্ন স্থানে বসে নিয়মিত মাদক সেবন করতেন।
তাঁরা বলেন, নয়নের বাড়ি কুষ্টিয়া শহরের মণ্ডলপাড়া এলাকায়। বেশ কয়েক বছর আগে তিনি ড্রেন মার্কেট এলাকার গেদা ব্যাপারীর মেয়েকে বিয়ে করেন। তাঁর ভাই শামীম পাশের আড়াপাড়া এলাকায় বিয়ে করে সেখানেই বসবাস করেন। বৈবাহিক সূত্রে তাঁরা সাভারে আস্তানা গেড়ে নানা অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়েন। কেউ প্রতিবাদ করলেই তাঁকে মারধর ও ছুরিকাঘাত করেন তাঁরা, যাতে তাঁদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস না পায়।
সাভার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মাইনুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল মর্গে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।’