গাজীপুরে শ্রীপুরে আল আমিন (৩৫) নামের এক পোশাককর্মী তুলে নিয়ে দুই দফা পিটিয়ে আহত করার পর মারা গেছেন। স্বজনদের অভিযোগ, নিহতের সঙ্গে এক নারী পোশাককর্মীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এরই জেরে প্রেমিকার বাড়ির মালিকের ছেলে সাইফুল ইসলাম (৩৮) চুরির অপবাদ দিয়ে আল আমিনকে তুলে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।
এদিকে ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন অভিযুক্ত যুবক সাইফুল ইসলাম।
গতকাল সোমবার (৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় উপজেলার রাজাবাড়ি ইউনিয়নের সাটিয়াবাড়ি গ্রামে মারধরের ঘটনা ঘটে। পরবর্তী রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
আল আমিন ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার পাগলা থানার টাঙ্গাব ইউনিয়নের মুন্তাজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি শ্রীপুর উপজেলার রাজাবাড়ি ইউনিয়নের ধলাদিয়া গ্রামের আফাজ উদ্দিনের বাড়িতে ভাড়া থেকে স্থানীয় একটি পোশাক কারখানায় শ্রমিকের কাজ করতেন।
অন্যদিকে অভিযুক্ত সাইফুল ইসলাম উপজেলার রাজাবাড়ি ইউনিয়নের সাটিয়াবাড়ি গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে।
নির্যাতনের ঘটনায় নিহত পোশাক কারখানার শ্রমিকের বড় ভাই হিরণ মিয়া বলেন, ‘একটি মেয়ের সঙ্গে আমার ভাইয়ের সম্পর্ক ছিল। সাইফুল ইসলামের বাড়িতে ভাড়া থেকে সেও স্থানীয় একটি পোশাক কারখানায় শ্রমিকের কাজ করত। কারখানায় আসা যাওয়ার পথে তাদের মধ্যে কথাবার্তা হতো। তাতে ক্ষিপ্ত হয়ে এর আগেও আমার ভাইকে বেশ কয়েকবার মেরে ফেলার হুমকি দেয় সাইফুল। এর জের ধরে গতকাল সোমবার সকালে সাটিয়াবাড়ি বাজারের পাশে এক দফা মারধর করে। এরপর সন্ধ্যায় আমার ভাই স্থানীয় আয়েশা ক্লিনিকে ওষুধ কিনতে যায়। এ সময় সাইফুর তাঁকে তুলে নিয়ে বাড়ির পাশে একটি বাগানের ভেতর গাছের সঙ্গে বেঁধে দুই ঘণ্টাব্যাপী প্রচুর মারধর করে। মারধর করে রক্তাক্ত ও অজ্ঞান অবস্থায় ফেলে যায়। পরবর্তীতে ভাইকে উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজ উদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করান স্থানীয়রা। এরপর ওই দিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।’
এদিকে এ ঘটনায় আল আমিনের প্রেমিকাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। এ কারণে তাঁর বক্তব্য নেওয়া যায়নি।
রাজাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আব্দুল কাদির বলেন, ‘ঘটনার পরপরই আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই যুবককে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছি। এরপর পুলিশে খবর দেই। রাত ৯টার দিকে তাঁর স্বজনরা মৃত্যুর খবর জানাই।’
অভিযুক্ত যুবক সাইফুল ইসলামের বক্তব্য নিতে তার বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তার বাবা মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। আমি আমার মতো করে থাকি। সে কখন কী করে আমি বলতে পারব না।’ আক্ষেপ করে তিনি আরও বলেন, ‘সন্তান বড় হয়ে গেলে বাবা-মার প্রয়োজন হয় না।’
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, ‘ঘটনার পরপরই রাতে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার ও কথিত প্রেমিকাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। এ ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করতে কাজ করছে পুলিশ।’