ভারতের মুম্বাইয়ে পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর থানেতে নিকেশ ঘাগে (৪৫) নামে এক ব্যক্তি তাঁর ৪০ বছর বয়সী স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছেন। কারণ সকালের নাশতায় সাগু দানা দিয়ে বানানো খিচুড়িতে লবণ বেশি হয়েছিল। ওই দম্পতির ১২ বছর বয়সী ছেলে ছিল ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। গত মাসের ঘটনা এটি। পরে স্বামী থানায় আত্মসমপর্ণ করেন এবং দায় স্বীকার করেন। অজুহাত হিসেবে উচ্চ রক্তচাপের কথা বলেন তিনি।
খাবার নিয়ে ঝগড়ার জেরে স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন ভারতে নিয়মিত ঘটনা। সাম্প্রতিক কয়েকটি দৃষ্টান্ত তেমন চিত্র দিচ্ছে—গত জানুয়ারিতে রাজধানী দিল্লির শহরতলির নয়ডায় রাতের খাবার পরিবেশন করতে অস্বীকার করার অভিযোগে স্ত্রীকে হত্যা করেন এক ব্যক্তি। পরে তিনি গ্রেপ্তার হন। ২০২১ সালের জুনে উত্তর প্রদেশে খাবারের সঙ্গে সালাদ পরিবেশন না করায় স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগ পাওয়া যায়। এ ঘটনার চার মাস পর বেঙ্গালুরুতে মুরগির মাংস ঠিকমতো ভাজা না হওয়ার কারণে স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যা করেন এক ব্যক্তি। ২০১৭ সালে বিবিসিতে একটি ঘটনার প্রতিবেদন প্রকাশ পায়। যেখানে বলা হয়, খাবার দিতে দেরি হওয়ায় ৬০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি তাঁর স্ত্রীকে গুলি করে হত্যা করেন।
নারী অধিকার কর্মীরা বলছেন, অস্বাভাবিক মৃত্যু গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। কিন্তু এই লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার ঘটনা সব সময় কম গুরুত্ব পায় বা অজানাই থেকে যায়।
ভারতে নারীদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে মারাত্মক হিংসাত্মক অপরাধগুলোর মধ্যে প্রধান— পারিবারিক সহিংসতা। পুলিশ বিভাগের ২০২০ সালের তথ্য অনুযায়ী, ১ লাখ ১২ হাজার ২৯২ জন নারী পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন। সে হিসাবে প্রতি পাঁচ মিনিটে প্রায় একটি করে পারিবারিক সহিংসতার অভিযোগ পেয়েছে পুলিশ।
অবশ্য এ ধরনের সহিংসতা শুধু ভারতেই ঘটে, এমন নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বব্যাপী প্রতি তিনজনের একজন নারী লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার শিকার হয়। যার বেশির ভাগই ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজনের দ্বারা সংঘটিত হয়। ভারতের ক্ষেত্রে সংখ্যাটি একই রকম।
ভারতের ক্ষেত্রে সমস্যা হলো, এখানে নারী অধিকার কর্মীদের ‘নীরবতার সংস্কৃতির’ বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়। এখানকার সমাজে খুবই দুঃখজনকভাবে এ ধরনের সহিংসতার জন্য অপ্রতিরোধ্য অনুমোদন রয়েছে।
স্ত্রীকে মারধর করাকে ন্যায়সংগত মনে করার ক্ষেত্রে বেশির ভাগ রাজ্যে পুরুষদের চেয়ে নারীদের সমর্থনই বেশি দেখা গেছে। প্রতিটি রাজ্যে (একমাত্র ব্যতিক্রম কর্ণাটক) পুরুষের চেয়ে বেশি নারী মনে করেন, রান্না ঠিকমতো করতে না পারলে স্বামী তাঁর স্ত্রীকে মারধর করতে পারেন। এটা ঠিক আছে।
অমিতা পিত্রে বিবিসিকে বলেন, ‘নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা এবং এর ন্যায্যতা দানের মনোভাব পিতৃতন্ত্রের মধ্যে নিহিত। লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার প্রতি এখানে খুব বেশি গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, কারণ ভারতে নারীদের অধস্তন লিঙ্গ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এখানে নারীর আচরণ কেমন হওয়া উচিত, সেটি নির্ধারণ করে দেয় সমাজ। মনে করা হয়, নারী অবশ্যই পুরুষের অধীন থাকবে। সিদ্ধান্ত গ্রহণে তার কোনো অংশগ্রহণ থাকবে না, সে সব সময় সেবা করবে।’
স্ত্রী পেটানোর পক্ষে নারীদের অবস্থানের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে এ নারী অধিকার কর্মী বলেন, পিতৃতন্ত্র লিঙ্গভিত্তিক সামাজিক অনুশাসনকে শক্তিশালী করে। নারীরা একই ধারণা পোষণ করেন। তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবার এবং সমাজ দ্বারা তৈরি হয়।