ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে যৌতুকের দাবিতে সুরজানা খাতুন (২২) নামের এক গৃহবধূকে নির্যাতনের একপর্যায়ে মুখে বিষ ঢেলে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে শ্বশুর বাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন সুরজানার বাবা আবদুর রহিম। আজ বৃহস্পতিবার কোটচাঁদপুর থানায় জামাইসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেন তিনি।
সুরজনা খাতুন ঝিনাইদহ সদর থানার ওয়ারিয়া গ্রামের আবদুর রহিমের মেয়ে। বর্তমানে তিনি কোটচাঁদপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চিকিৎসাধীন রয়েছেন। থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কামরুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘অভিযোগ হিসেবে নেওয়া হয়েছে। তদন্তের পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মেয়ের পিতা আবদুর রহিম বলেন, ‘পলাশ মণ্ডলের সঙ্গে ৩-৪ বছর আগে আমার মেয়ে সুরজানা খাতুন (২২) এর বিয়ে হয়। সে কোটচাঁদপুর উপজেলার ভগবানপুর গ্রামের জসিম উদ্দিনের ছেলে। বিয়ের পর তাঁদের নগদ টাকা ও বিভিন্ন আসবাবপত্র দেওয়া হয়। এরপরও বিভিন্ন বাহানায় আমার মেয়েকে মারধর করেন। সম্প্রতি তারা আমার মেয়ের কাছে ২ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। মেয়ে আমার কথা ভেবে টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এতে তাঁরা রাগান্বিত হয় এবং মারপিট করেন।’
আবদুর রহিম আরও বলেন, ‘একপর্যায়ে গত মঙ্গলবার সাড়ে ৩টার দিকে জোর করে মেয়ের মুখে বিষ ঢেলে দেয় শাশুড়ি নাজমা বেগম। এ সময় জামাই পলাশ মণ্ডল মেয়ের এক হাত ধরে থাকেন, শ্বশুর জসিম উদ্দীন ধরেন আরেক হাত। আর ভাশুর শিমুল মণ্ডল মেয়ের দুই পা চেপে ধরে রাখেন। তখন মেয়ের চিৎকারে স্থানীয়রা ছুটে আসলে তাঁরা মেয়েকে কোটচাঁদপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। খবর পেয়ে আমরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে দেখতে পাই, তারা মেয়েকে ফেলে রেখে পালিয়েছে। তাঁরা আমার মেয়েকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। আমি এর বিচার চাই।’
এ বিষয়ে গৃহবধূ সুরজনা বলেন, ‘বিয়ের পর থেকে তাঁরা আমার ওপর বিভিন্ন কারণে নির্যাতন করেন। গেল মঙ্গলবার দুপুরে তাঁরা আমাকে মেরে মুখে বিষ ঢেলে দেয়। এ সময় আমার চিৎকার স্থানীয়রা ছুটে আসলে তাঁরা ছেড়ে দেন। পরে ভয়ে হাসপাতালে এনে ফেলে রেখে চলে যায়।’
তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন সুরজনার স্বামী পলাশ মণ্ডল ও তাঁর পরিবারের লোকজন। পলাশ মণ্ডল বলেন, ‘স্ত্রীর সঙ্গে কিছুই হয়নি আমার। ঘটনার দিন আমি ঘর থেকে বের হয়ে পাশে গরু বের করতে যাই। এরপর ফিরে এসে ঘর থেকে ফোন নিতে যাই। এ সময় স্ত্রী ব্যাগে থাকা বিষের বোতল মুখে ঢেলে দেন। ওই সময়ই আমরা তাঁকে উদ্ধার করে কোটচাঁদপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করি। তাঁরা আমাদের ফাঁসানোর জন্য মিথ্যা অভিযোগ করেছেন।’
এ ব্যাপারে কোটচাঁদপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কামরুজ্জামান বলেন, ‘এ ঘটনায় একটা এজাহার হয়েছে। তবে আমরা অভিযোগ আকারে নিয়েছি। ওসি স্যার এসে দেখবেন। এরপর তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’