খালিয়াজুরী (নেত্রকোনা): খালিয়াজুরী উপজেলা সদরের বানিয়াহাটি এলাকার একটি রাস্তা। এ রাস্তা দিয়ে প্রতি বর্ষায় হাঁটুসমান কাদা হতো। বাঁশের সাঁকো ডিঙিয়ে যাতায়াত করত এলাকাবাসী। রাস্তাটি পাকা করার সময় এলাকাবাসী বেশ খুশিই হয়েছিলেন। কিন্তু এক মাসের মাথায় তাদের হতাশ হতে হলো। ৬২ লাখ টাকায় নির্মিত কংক্রিটের (আরসিসি) সড়কটি বৃষ্টিতে ধসে যাচ্ছে। অথচ এখনো সড়কটি উদ্বোধনই করা হয়নি।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধীনে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে হাওরাঞ্চলের বন্যা ব্যবস্থাপনা ও জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থায়নে সড়কটি নির্মিত হয়েছে। খালিয়াজুরী এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী মো. ইউনূস আলী বলেন, ওই সড়ক নির্মাণকাজের নাম দেওয়া হয় খালিয়াজুরী গ্রোথ সেন্টার (জিসি) কৃষ্ণপুর জিসি ভায়া বানিয়াহাটি রাস্তা পাকাকরণ। এর দৈর্ঘ্য ৩৩৫ মিটার, প্রস্থ ১৪ ফুট। নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৬২ লাখ ৯ হাজার টাকা। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৯ সালের ১২ অক্টোবর কাজটি শেষ করার কথা। কাজের ঠিকাদার নেত্রকোনার মদন উপজেলার সারোয়ার জাহান।
বানিয়াহাটি গ্রামের বাসিন্দা ও ‘খালিয়াজুরী উন্নয়নে নাগরিক আন্দোলনের’ সাধারণ সম্পাদক স্বাগত সরকার শুভ ক্ষোভ নিয়ে বলেন, ওই সড়কটি নির্মাণে ভরাট করা মাটি ভালোভাবে দুরমুজ না করেই সিসি ব্লক বসানো হয়েছে। ব্লকগুলো তৈরিতেও ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের বালু ও পাথর। এসব ব্লক বসানোর সময় একটির সঙ্গে আরেকটি সঠিক নিয়মে সংযুক্তও করা হয়নি। তাই সাম্প্রতিক সময়ে কয়েক দিনের বৃষ্টিতে সড়কটির অধিকাংশ স্থান ধসে পড়েছে।
খালিয়াজুরী সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি নিহারেন্দু দেব রায় তপু বলেন, নির্মাণকাজে অনিয়মের কারণে শুধু এখন নয় এর আগেও একবার ধসে পড়েছিল সড়কটি। পরে কোনো রকমে ধামাচাপা দিয়ে কিছু অংশের কাজ বাকি রেখেই সড়ক এলাকা ত্যাগ করেন ঠিকাদার। এসব বিষয়ে একাধিকবার এলজিইডি কর্তৃপক্ষকে জানালেও তাঁরা রহস্যজনক কারণে অনিয়ম রুখতে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
এ বিষয়ে জানতে ঠিকাদার সারোয়ার জাহানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি জবাব দেননি।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে খালিয়াজুরীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ এইচ এম আরিফুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। এটি আমাদের সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্ট না হওয়ার পরেও অভিযোগ পেয়ে রাস্তাটি পরিদর্শন করেছি। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা বলেছেন, ঠিকাদারদের সঙ্গে কথা বলে রাস্তাটি সংস্কারের ব্যবস্থা করা হবে।
তবে উপজেলা প্রকৌশলী মো. ইউনূস আলীর দাবি কাজে কোনো অনিয়ম হয়নি। দ্রুতই এই রাস্তা নির্মাণকাজ শেষ করা হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।