Ajker Patrika
হোম > অপরাধ > রাজশাহী

‘নির্বাচন করতে মন্ত্রী আমাকে এনেছেন, অন্য কারো কথা শুনি না’: এখন যা বলছেন সেই ওসি 

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

‘নির্বাচন করতে মন্ত্রী আমাকে এনেছেন, অন্য কারো কথা শুনি না’: এখন যা বলছেন সেই ওসি 

পাঁচ লাখ টাকা দিলে অবাধে মাদক কারবার করতে দেবেন রাজশাহীর চারঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুল আলম। শুধু তাই নয়, আরও ২ লাখ টাকা দিলে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার ওসিকে বদলির ব্যবস্থা করবেন তিনি। এক ‘মাদক কারবারীর’ স্ত্রীর সঙ্গে আলাপের এমন অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়েছে। 

ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডে ওসি মাহবুবুল আলমকে বলতে শোনা যায়, ‘নির্বাচন করতে মন্ত্রী আমাকে গাইবান্ধা থেকে এখানে নিয়ে এসেছেন। আমি তাঁর কথা ছাড়া কারও কথা শুনি না।’ 

এ বিষয়ে গত শনিবার রাজশাহীর এসপি বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী ওই নারী। অভিযোগের অনুলিপির সঙ্গে ৬ মিনিটি ৫৩ সেকেন্ডের কথোপকথনের অডিও রেকর্ডও পেনড্রাইভে দিয়েছেন। এই সংবাদ আজকের পত্রিকায় প্রকাশের পর মাহবুবুল আলমকে চারঘাট থেকে প্রত্যাহার করা হয়। 

কিন্তু ৬ মিনিটি ৫৩ সেকেন্ডের কথোপকথনের অডিও রেকর্ডে একজন মন্ত্রীর কথা বলা হলেও তার নাম উল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু কে সেই মন্ত্রী?

জানা গেছে, রাজশাহী জেলায় একজন মাত্র প্রতিমন্ত্রী আছেন। তিনি রাজশাহী-৬ (চারঘাট-বাঘা) আসনের সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। কিন্তু অডিওতে তার নাম উল্লেখ করা হয়নি। 

জানতে চাইলে আজ সোমবার রাতে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার নির্বাচনী এলাকার কোনো নিয়োগে আমি সুপারিশ করি না। যত দূর মনে পড়ে তিনি (ওসি) যোগদান করেছেন অনেক দিন আগেই এবং অসুস্থতার কারণে চিকিৎসার জন্য কয়েক দফা কর্মক্ষেত্রে দীর্ঘসময় অনুপস্থিত ছিলেন বলে শুনেছি। পুলিশ প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই যে তারা তাৎক্ষণিক বিভাগীয় ব্যবস্থা নিয়েছে। তদন্তে আশাকরি পুরো বিষয়টা বের হয়ে আসবে।’ 

অডিও রেকর্ড সম্পর্কে জানতে চাইলে আজ সোমবার রাতে পুলিশ পরিদর্শক মাহবুবুল আলম বলেন, ‘এই অডিও রেকর্ডটা মিথ্যা। সাহারা তাঁর প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করতে এসেছিল। কিন্তু যে অভিযোগ, তাতে মামলা হয় না। বড়জোর সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়। এ কারণে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। যাওয়ার পরে ওরা কীভাবে কি করেছে তা বলতে পারব না।’ 

মন্ত্রী প্রসঙ্গে আসা কথা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো মন্ত্রী কিংবা প্রতিমন্ত্রীকে নিয়েই কথা বলিনি। তিনি যদি আমাকে নিয়েই আসতেন, তাহলে তো এ অবস্থায় তিনি কথা বলতেন।’ 

মাহবুবুল আলম বলেন, যে পরিবার অভিযোগ করেছে তারা পুরো পরিবারই মাদকের সঙ্গে যুক্ত। আব্দুল আলীম কালুর বিরুদ্ধে ১০-১২টা মাদকের মামলা আছে। তার স্ত্রী সাহারার বিরুদ্ধেও আছে তিন-চারটা। এখন সবকিছুর তদন্ত হচ্ছে। আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তদন্ত করছে। এ নিয়ে আমার আর কিছু বলার নেই।’ 

শনিবার সংবাদ প্রকাশের পর রাতেই ওসি মাহবুবুলকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে গতকাল রোববার তিন সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হয়েচে। কমিটির প্রধান করা হয় জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. আশরাফকে। অন্য দুই সদস্য হলেন-বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল আলম এবং চারঘাট সার্কেলের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার প্রণব কুমার। 

তদন্ত কমিটির সদস্য ও জেলা পুলিশের মিডিয়া সেলের মুখপাত্র রফিকুল আলম বলেন, ‘তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। মঙ্গলবার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ভুক্তভোগীসহ প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে। যথাসময়েই তদন্ত শেষ করা হবে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ সেপ্টেম্বর দুপুরে ওসি তাঁর কোয়ার্টারের শয়নকক্ষে ডেকে নিয়ে সাহারা বেগম (২৮) নামে ওই নারীর কাছে ৫ লাখ টাকা দাবি করেন। এ ঘটনার পর থেকে ভয়ে বাড়ি ছাড়া ওই গৃহবধূ। 

গৃহবধূ সাহারা বেগম চারঘাট থানার চামটা গ্রামের আব্দুল আলিম কালুর স্ত্রী। মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কালু বেশ কিছুদিন ধরে কারাগারে। জেলা ডিবি পুলিশের ওসি তাঁকে গ্রেপ্তার করেছিলেন। কালু গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে শলুয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে সদস্য পদে নির্বাচন করেন। এতে স্থানীয় প্রতিপক্ষের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। এর জেরে মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে অভিযোগ করেছেন সাহারা বেগম।

লিখিত অভিযোগে সাহারা বলেছেন, গত ১৩ সেপ্টেম্বর থানায় চাঁদাবাজির অভিযোগ করতে গেলে গৃহবধূ সাহারা বেগম ও তার ছেলে রাব্বিকে নিজের শয়নকক্ষে ডেকে নেন ওসি মাহবুবুল আলম। প্রথমে ওসি তাঁদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন নিয়ে নেন। এরপর কথা বলতে শুরু করেন। 

ফাঁস হওয়া ওই অডিও রেকর্ডে ওসি মাহবুবুল আলমকে বলতে শোনা যায়, ‘নির্বাচন করতে মন্ত্রী আমাকে গাইবান্ধা থেকে এখানে নিয়ে এসেছেন। আমি তাঁর কথা ছাড়া কারও কথা শুনি না।’ চারঘাট এলাকায় গিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের ধরে মামলা দেওয়ার কারণে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসির সমালোচনা করেন তিনি। এরপর বলেন, ‘দুই লাখ টাকা দেন, কালকেই ডিবির ওসিকে বদলি করে দেব।’

এরপর গৃহবধূ সাহারা বেগমকে ওসি বলেন, ‘আপনার স্বামী আমার অনেক ক্ষতি করে গেছে (ওসির বিরুদ্ধে এসপি অফিসে অভিযোগ করেছিলেন)। এবার আপনার পরিবারের কাউকে ধরলে ১০ লাখ টাকার কমে ছাড়াতে পারব না।’

এরপর ওসি বলেন, ‘এখনো তোমার গায়ে আঁচড় দেইনি। বহুত ফাঁকি দিয়েছ। কালকে ৫ লাখ টাকা নিয়ে আসবা। এখন সেরকম সময় নয় যে কেউ পয়সা খায় না। সবাই পয়সা খাচ্ছে। এমন কেউ বাদ নেই যে পয়সা খাচ্ছে না। পুরো জেলা পয়সা খাচ্ছে। এখানে আমার থানা চালাতে মাসিক অনেক টাকা লাগছে। আমি স্যারকে কথা দিয়ে এসেছি। স্যারকে বলেছি, এখানে মাদক ছাড়া কিছু নেই।’

ওসি আরও বলেন, ‘মুক্তা (চারঘাটের মাদক সম্রাট নামে পরিচিত) অ্যাকশন নিতে পারবে না, শুভ (ছাত্রলীগ নেতা ও মাদক কারবারি) অ্যাকশন নিতে পারবে না। তোমরা ৫ লাখ টাকা দিতে পারবা? ধরে ওদের চালান দিয়ে দেব। থাকি না থাকি ওদের সাইজ করব। তোমরা বাইরে থেকে ব্যবসা (মাদক ব্যবসা) করবে।’ 

জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি আতিকুর রেজা সরকার আতিকের আবারও সমালোচনা করে ওসিকে বলতে শোনা যায়, ‘নির্বাচনের আগে শুভকে ধরতে পারব না। কথা সব ভেঙে বলব না। কথা সব হয়ে গেল; যদি আতিকের বদলি চাও ২ লাখ টাকা দাও। কালকেই আতিকের বদলি হয়ে যাবে।’

চারঘাট থানার ওসি মাহবুবুলকে আরও বলেন, ‘৫ লাখ আর ২ লাখ— ৭ লাখ টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করো। আতিক বাদ, ওই দুইজনকে (মুক্তা ও শুভ) ট্যাকেল দেওয়ার দায়িত্ব আমার। নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পরে মন্ত্রীকে বলে ওই দুইজনকে ধরে অ্যারেস্ট করে চালান করে দেব। আমার সব ওপরের লাইন। যে টাকা দিবা এই টাকাই ওপরে কাজ করবে।’

অডিওতে গৃহবধূ সাহারা বেগমের ‘সুন্দর চেহারা’ নিয়েও মন্তব্য করতে শোনা যায় ওসিকে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাহারা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী দীর্ঘদিন ধরে পুলিশ ও র‍্যাবের সোর্স হিসাবে কাজ করেন। চারঘাট এলাকায় তাঁর সোর্সের মাধ্যমে অনেক মাদক র‍্যাব-পুলিশ জব্দ করেছে। গত ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে তিনি সদস্য পদে নির্বাচন করেন। এরপর থেকে এলাকার মুক্তা, শুভ ও সাব্বিরের সঙ্গে আমার স্বামীর বিরোধ বাঁধে। এর জের ধরে আমার স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করায় তারা।’

সাহারা আরও বলেন, ‘চারঘাটের চামটা গ্রামের মুক্তা, শিবপুর গ্রামের সাব্বির ও শলুয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ শুভ আমার কাছে ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। একই সঙ্গে টাকা না দিলে মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেয়। সেই অভিযোগ করতে থানায় গেলে ওসি ৭ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করে আমাকে মাদকের ব্যবসা করতে বলে। তাতে আমি রাজি না হলে মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেয়।

‘ঢাবি আধিপত্যের’ প্রতিবাদে রাবি শিক্ষার্থীদের রেলপথ অবরোধ

ইউএনওর কক্ষে জামায়াত নেতাদের মারধর, বিএনপির ৪ নেতাকে শোকজ

বার কাউন্সিলের পরীক্ষার ফি কমানোর দাবি রাবি শিক্ষার্থীদের

পেট্রল ঢেলে পুড়িয়ে দেওয়া হলো বিএনপি নেতার কৃষিযন্ত্র

প্রসবকালে মাথা বিচ্ছিন্ন হয়ে নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ, তদন্ত কমিটি গঠন

ধামইরহাটে সরকারি জমির মাটি কাটায় জরিমানা

বগুড়ায় আ.লীগ নেতার বাড়িতে আগুন, নাশকতার অভিযোগ

রাজশাহীতে ভটভটি-মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে প্রাণ গেল কলেজছাত্রের

৭ মাস পর কলেজছাত্র আসিফের লাশ পেল পরিবার

জয়পুরহাটে অটোরিকশা-মোটরসাইকেল সংঘর্ষে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা নিহত