রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের গাড়িচালক সম্রাট হোসেনকে (৩০) হত্যার মামলায় তাঁর বন্ধু আব্দুল মমিনকে (৩২) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গতকাল রোববার রাতে ঢাকার হাতিরঝিল থানার বাংলামোটর এলাকা থেকে মমিনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। গ্রেপ্তারকৃত মমিন পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার বাঁশেরবাদা মধ্যপাড়া (দোকানপাড়া) গ্রামের বাহাদুর খাঁর ছেলে। নিহত সম্রাট একই উপজেলার মধ্য অরনকোলা রিফুজি কলোনী এলাকার আবু বক্কার সিদ্দিকের ছেলে।
এ নিয়ে চাঞ্চল্যকর এই মামলায় এখন পর্যন্ত মোট দুজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর আগে মমিনের স্ত্রী সীমা খাতুনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এ দিকে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্কের কারণে ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে সম্রাট হোসেনকে হত্যা করা হয়েছে। সম্রাট হত্যা মামলার প্রধান আসামি আব্দুল মমিন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ তথ্য দিয়েছেন বলে জানিয়েছে র্যাব। তবে, কিভাবে, কোন পরিকল্পনায়, কাদের সাহায্যে সম্রাটকে হত্যা করা হয়েছে সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি র্যাব।
র্যাব-১২–এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মারুফ হোসেন (পিপিএম) বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে ঈশ্বরদী থানায় গত শনিবার রাতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় সম্রাটের বন্ধু মমিনকে এক নম্বর ও তাঁর স্ত্রী সীমাকে দুই নম্বর আসামিসহ আরও ৩ থেকে ৪ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
র্যাব জানায়, হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই আসামি মমিন আত্মগোপনে চলে যান। পলাতক আসামি মমিনকে গ্রেপ্তারের ব্যাপারে র্যাব উদ্যোগী হয়ে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রাখে। তারই ধারাবাহিকতায় আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় র্যাব-১২–এর একটি দল র্যাব-৩–এর সহযোগিতায় ঢাকার হাতিরঝিল থানার বাংলামোটর এলাকায় আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় মমিনকে গ্রেপ্তার করে।
মারুফ হোসেন বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃত আসামি মমিনকে আজ সোমবার ঈশ্বরদী থানায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করা হবে। তারপর আইনগত প্রক্রিয়া তাঁরা করবেন।’
র্যাব জানায় নিহত সম্রাট প্রায় তিন বছর যাবৎ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিকিম কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইউরি ফেদারোপের গাড়িচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। চালক সম্রাট প্রতিদিন রাত সাড়ে ১০টার মধ্যে ডিউটি শেষে বাড়িতে ফেরত যেতেন। কিন্তু গত ২৩ মার্চ সম্রাট ডিউটি শেষে বাড়িতে ফেরেননি এ সময় তাঁর মোবাইল ফোনও বন্ধ পায় পরিবারের লোকজন।
পরদিন ২৪ মার্চ নিকিম কোম্পানির অন্য চালকদের কাছে নিহতের বাবা সম্রাটের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তাঁরা জানান সম্রাট ২৩ মার্চ রাত ৮টা ১০ মিনিটে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ডিউটি শেষ করে অফিসের গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেছেন। তখন পরিবারের লোকজন বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে জানতে পারেন, সম্রাট অফিসের গাড়িসহ বাঁশেরবাদা মধ্যপাড়ায় তাঁর পূর্ব পরিচিত বন্ধু আব্দুল মমিনের বাসায় গিয়েছিলেন। সেই সূত্র ধরে সম্রাটের পরিবারের লোকজন মমিনের বাসায় গিয়ে মমিনকে না পেয়ে তাঁর স্ত্রী সীমা খাতুনের কাছে সম্রাটের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি উত্তেজিত হন এবং সম্রাটের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলা থেকে বিরত থাকেন।
সম্রাট ও তাঁর চালানো গাড়ি খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে গত শনিবার (২৫ মার্চ) সকালে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার আড়ুয়াবান্দা গ্রামের শিলাইদহ ঘাট নামক স্থান থেকে পুলিশ একটি সাদা জিপ গাড়িসহ সম্রাটের বস্তাবন্দী মরদেহ উদ্ধার করে।
এর আগে শুক্রবার রাতে বিভিন্ন সূত্রে ধরে পুলিশ ঈশ্বরদী উপজেলার বাঁশেরবাদা এলাকার নিখোঁজ সম্রাটের বন্ধু আব্দুল মমিনের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাঁর স্ত্রী সীমা খাতুনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে।
সীমা পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানান, গত বৃহস্পতিবার রাতে সম্রাট তাঁদের বাসায় গিয়ে তাঁর মাথা ধরেছে বলে বিছানায় শুয়ে পড়েন। তাঁর স্বামী মমিন ওষুধ আনতে বাইরে গেলে সম্রাট সীমার শরীরে হাত দেন। তখন তিনি রাগে ও ক্ষোভে হাতুড়ি দিয়ে মাথায় ও গোপনাঙ্গে আঘাত করলে সম্রাট মারা যান। পরে তাঁর স্বামী বাসায় ফিরলে লাশ বস্তায় ভরে ওই গাড়িতে তুলে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করেন। পরে মমিন তাঁর স্ত্রী সীমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে শিলাইদহ ঘাটে লাশসহ গাড়ি রেখে পালিয়ে যান।
এ দিকে সম্রাট হোসেন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারকৃত সীমা খাতুনকে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ঈশ্বরদী থানার এসআই তৌহিদ হোসেন জানান, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সীমা খাতুনকে গতকাল রোববার দুপুরে আদালতে সোপর্দ করে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন জানানো হয়। পাবনা আমলি আদালত-২–এর বিচারক শামসুজ্জামান দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।