হোম > অপরাধ > রাজশাহী

বন্ধুর জমি বিক্রির টাকা আত্মসাতে ফাঁদ, ফাঁসলেন নিজেরাই

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

চাঁপাইনবাবগঞ্জে হেরোইন আর জাল টাকা রেখে অন্যকে ফাঁসাতে গিয়ে নিজেরাও হয়েছেন মাদক মামলার আসামি। মো. শফি ওরফে শফি ডাকাত ও তাঁর সহযোগী মো. গোকুল খান গাজু নামে দুজনকে মাদক এবং জাল টাকা উদ্ধারের মামলায় আসামি করা হয়েছে। এরপর থেকেই পলাতক রয়েছেন শফি ও গাজু। মো. শফি রাজশাহীর তানোর উপজেলার বাধাইড় ইউনিয়নের সাইধাড়া গ্রামের বাসিন্দা। 

এর আগে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের ঝিলিম বাজার থেকে ৯৬ গ্রাম হেরোইন ও ১৮ হাজার ৫০০ টাকার জাল নোট উদ্ধার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। ওই ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন রাজশাহীর তানোর উপজেলার বাধাইড় ইউনিয়নের জুমারপাড়ার মো. সারোয়ার মোল্লা রুমন ও একই গ্রামের মো. শরিফুল ইসলাম। 

জানা গেছে, শফি ও গাজু পরিকল্পিতভাবে মো. সারোয়ার মোল্লা রুমনকে ফাঁসাতে হেরোইন ও জাল টাকা তাঁর মোটরসাইকেলে রাখেন। পরে সোর্স পরিচয় দিয়ে শফি ডিবি পুলিশে ফোন দিয়ে জানান, রুমন নামের এক ব্যক্তি মোটরসাইকেলের সিটের নিচে রেখে হেরোইন পাচার করছে। সেখানে জাল টাকাও আছে। পরে শফির দেওয়া তথ্যে মোটরসাইকেলের সিটের নিচ থেকে হেরোইন ও জাল টাকা উদ্ধার করা হয়। এ তথ্য জানিয়েছেন জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আসগর আলী। 

আসগর আলী আরও জানান, ঘটনাস্থলে উদ্ধার হওয়া টাকাগুলো রুমন নিজের জানালেও হেরোইন সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে জানান। তাঁর মোটরসাইকেলটি গাজু নামে কেউ নিয়ে গেছিল বলেও জানান। বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ তৈরি হলে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। তদন্ত ও স্থানীয়দের সাক্ষ্যপ্রমাণে সোর্স পরিচয়ে মাদকের তথ্য দেওয়া ব্যক্তিই শফি বলে জানা যায়। তদন্তে গোকুল খাঁন নামে আরেকজনকে এ ঘটনায় জড়িত বলে নিশ্চিত হয় পুলিশ। পরে তাঁদের দুজনকেও মামলার আসামি করা হয়েছে। পলাতক শফি ও গাজুকে গ্রেপ্তার অভিযান চলছে। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মোটরসাইকেল থেকে হেরোইন ও জাল টাকা উদ্ধারের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া আসামি রুমন মাদকাসক্ত। কয়েক মাস আগে আমনুরার দেশি মদের ভাটিতে পরিচয় হয় মো. শফির সঙ্গে। ধীরে ধীরে গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠে। রুমন শফিকে ধর্মের বাবা ডাকতেন। মাদকের টাকা জোগাড়ে রুমনকে জমি বিক্রিতে উৎসাহ দেয় শফি। 

অনুসন্ধান আরও বলছে, বাধাইড় ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. মুকুল হোসেনের কাছে দেড় বিঘা জমি বিক্রির জন্য কয়েক দফায় ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা নেয় রুমন। আর জমি বিক্রির মাধ্যম ছিলেন মো. শফি। দেড় বিঘা জমির মূল্য নির্ধারণ করা হয় ১২ লাখ টাকা। ২২ ফেব্রুয়ারি তানোর উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি অফিসে দলিল সম্পাদিত হয়। বাকি ৬ লাখ ৪০ হাজার টাকার মধ্যে ৬ লাখ টাকা গ্রহণ করেন শফি। ওই টাকা আত্মসাতের উদ্দ্যেশ্যে পরিকল্পিতভাবে রুমনের মোটরসাইকেলে মাদক ও জাল টাকা রেখে পুলিশকে খবর দেন তিনি। তাঁর সহযোগিতায় ছিলেন গোকুল খাঁন গাজু। 

এদিকে জমির ক্রেতা ইউপি সদস্য মুকুল হোসেনের পরিকল্পনা অনুযায়ী রুমনকে ভরপুর মদ খাইয়ে সাবরেজিস্ট্রি অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। দেড় বিঘা জমির কথা বলে সোয়া ৩ বিঘা জমি রেজিস্ট্রি করে নেন ইউপি সদস্য মুকুল হোসেন। 

গ্রেপ্তার সারোয়ার মোল্লা রুমনের ফুফা অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর মো. নিজাম উদ্দীন জানান, ইউপি সদস্য মুকুল পরিকল্পিতভাবে রুমনকে মদ খাইয়ে প্রায় ৩০ লাখ টাকা মূল্যের জমি লিখে নিয়েছে। তবে মাত্র ৫ লাখ ৪০ হাজা টাকা দিয়েছে বলে শুনছি। টাকা ও জমি আত্মসাতের উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে সারোয়ার মোল্লা রুমনকে ফাঁসিয়েছেন ইউপি সদস্য মুকুল হোসেন, মো. শফি ও গোকুল খাঁন। রুমনে সঙ্গে থাকায় শরিফুল ইসলামও গ্রেপ্তার হয়েছেন। 

কারাবন্দী শরিফুল ইসলামের স্ত্রী মোসা. জরিনা বেগম বলেন, বেলা ১১টার দিকে আমার স্বামী বাসায় ঘুমিয়ে ছিল। এ সময় শফি ডাকাত আমার স্বামীর মোবাইল ফোনে কল দিয়ে আমনুরা বাজারে ডেকে নিয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পরেই শুনতে পাই রুমনের সঙ্গে আমার স্বামীকে ডিবি পুলিশ হেরোইনসহ আটক করেছে। আমার স্বামী কোনো দিন হেরোইনের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল না। তাকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে। 

শরিফুল ইসলামের ছেলে মো. হৃদয় ইসলাম বলেন, বাবা কাপড়ের ব্যবসার সুবাদে ঢাকার গাজীপুরে থাকেন। কয়েক দিন আগে বাড়িতে এসেছেন। এসেই এমন ষড়যন্ত্রের শিকার হলেন। ইউপি সদস্য মুকুল হোসেন আমাদের পাশের এলাকার রুমন নামে একজনের কাছে জমি কিনেছেন। জমি বিক্রির টাকা নিয়ে ঝামেলার কারণে তাঁর কাছে মাদক ও জাল টাকা রেখে পুলিশ ডেকে ধরিয়ে দিয়েছেন। রুমনের সঙ্গে থাকায় আমার বাবাকেও পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। 

জানতে চাইলে বাধাইড় ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. মুকুল হোসেন অভিযোগ অস্বীকার বলেন, ‘আমি টাকা দিয়ে জমি কিনে এখনো জমি বুঝে পাইনি। আমার বিরুদ্ধে মদপান করিয়ে অতিরিক্ত জমি লিখে নেওয়ার অভিযোগটি ভিত্তিহীন।’ 

মামলার এজাহারে যা বলা হয়েছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গোয়েন্দা পুলিশ জানতে পারে, কতিপয় মাদক ব্যবসায়ী মোটরসাইকেলযোগে মাদকদ্রব্য হেরোইনের চালান ও জাল টাকাসহ তানোর থানা এলাকা থেকে সদর মডেল থানাধীন আমনুরার দিকে আসছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে নুরতাজ হোটেলের সামনে পাকা রাস্তার ওপর উপস্থিত হলে চালকের আসনে বসে থাকা গোকুল খাঁন গাজু পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মোটরসাইকেল রেখে পালিয়ে যায়। 

যাত্রীর আসনে বসে থাকা সারোয়ার মোল্লা রুমন ও শরিফুল ইসলামকে আটক করা হয়। এ সময় সাক্ষীসহ অন্যান্য লোকের উপস্থিতিতে আসামিদের দেহ তল্লাশি করা হয়। তাদের তথ্যমতে মোটরসাইকেলটির সিটের নিচে অভিনব কায়দায় ১টি টিস্যু ব্যাগের ভেতর পলিথিনে প্যাকেট করা অবস্থায় ৯৬ গ্রাম হেরোইন এবং সাদা কাগজ দিয়ে মোড়ানো ১টি বান্ডিলে ৩৭টি বাংলাদেশি ৫০০ টাকার জাল নোট উদ্ধার করে। 

সাক্ষীদের উপস্থিতিতে ধৃত আসামিদের জব্দকৃত মাদকদ্রব্য হেরোইন ও জাল টাকার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা জব্দকৃত মাদকদ্রব্য হেরোইন ও জাল টাকার প্রকৃত মালিক পলাতক আসামি মো. শফি ওরফে শফি ডাকাত বলে জানায়। 

রাজশাহীতে দলীয় সভা শেষে ফেরার পথে ট্রাকচাপায় যুবদল কর্মী নিহত

যমুনার বালুচরের নতুন ফসল চিনাবাদাম

নাটোরে ট্রাক-মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত তিন

বাঘায় আম গাছে ঝুলছিল গৃহবধূর লাশ

কামারখন্দে কিশোরীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

অধ্যক্ষের অপসারণ দাবি, রাজশাহী নার্সিং কলেজের প্রশাসনিক ভবনে তালা

যমুনায় মিলল নিখোঁজ মাদ্রাসাছাত্রের লাশ

নাটোরে চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে মধ্যবয়সীর মৃত্যু

রাজশাহীতে সম্মেলনের পর ব্যানার-ফেস্টুন সরিয়ে নিল জামায়াত

হামলা মামলায় রাজশাহী ছাত্রলীগের সাবেক নেতা অমি গ্রেপ্তার

সেকশন