নীলফামারী প্রতিনিধি
পাঁচ বছর ধরে মালয়েশিয়ায় কর্মরত নীলফামারীর জলঢাকার যুবক খায়রুল ইসলাম। মায়ের অসুস্থতার কথা জেনে চলতি সপ্তাহে বাড়ি ফেরার কথা ছিল তাঁর। এর মধ্যে অপহরণের শিকার হয়েছেন। মালয়েশিয়ায় কর্মরত তাঁরই ছয় সহকর্মীর বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে। অপহরণকারীরা ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছেন বলে অভিযোগ করছে খায়রুলের পরিবার।
খায়রুল ইসলাম নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার দক্ষিণ দেশীবাড়ি রাজারহাট এলাকার মো. আব্দুল হামিদের ছেলে।
পরিবারের সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সাল থেকে মালয়েশিয়ার এফজিভি হোল্ডিংসে কোম্পানিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন খাইরুল। মায়ের অসুস্থতার জন্য ছুটি নিয়ে দেশে আসবেন—গত ২২ জুলাই পরিবারের লোকজনকে সে কথা জানান খায়রুল। এর দুই দিন পরে সোমবার (২৪ জুলাই) দুপুরে তাঁর এক সহকর্মীর মোবাইল নম্বর থেকে জানানো হয়—খায়রুলকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। খবর পেয়ে মালয়েশিয়ায় পরিচিতদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁর খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা চালায় খায়রুলের পরিবার। মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) ভোরে ফোনকল দিয়ে অপহৃত হওয়ার কথা জানান খায়রুল নিজেই। তিনি জানান, তাঁরই ছয় সহকর্মী একটি জঙ্গলে তাঁকে আটকে রেখেছে। ২০ লাখ টাকা দাবি করছে তারা। টাকা না দিলে হত্যা করে জঙ্গলেই ফেলে রেখে যাওয়ার হুমকি দিচ্ছে।
এ বিষয়ে সেলফোনে যোগাযোগ করা হয় অপহৃত খায়রুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার সহকর্মীরা একটা জঙ্গলে বেঁধে রাখছে। আমি তিন দিন কিছু খাইনি। তারা ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চাইছে। এখানে জাহাজ ছাড়া কিছু দেখা যাচ্ছে না। এটা আমার অফিসের আশপাশেই হবে। আমার মোবাইল থেকে শুরু করে সব কেড়ে নিয়েছে। এটা একটা পুরাতন ফোন, পকেটে ছিল। এটা না থাকলে কারও সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে পারতাম না। গত তিন দিনের মধ্যে দুই দিন আমার সহকর্মীরা আসছিল আমার কাছে। আজ আসে নাই। এভাবে না খেয়ে থাকলে আমি শেষ হয়ে যাব!’
ছেলের এমন খবর পাওয়ার পর থেকে চরম উদ্বেগে রয়েছেন বাবা-মা, স্ত্রী ও স্বজনেরা। মূর্ছা যাচ্ছেন খায়রুলের মা ছবিলা বেগম।
খায়রুলের ছোট বোন হালিমা বেগম বলেন, ‘আমার বড় ভাই পাঁচ বছর আগে মালয়েশিয়া গেছে। আমার ভাইকে তার ছয় বন্ধু পারভেজ, তপু, সামিউল, রুহুল, মনজু, ও ছোটন অপহরণ করে ২০ লাখ টাকা দাবি করছে। টাকা না দিলে ওরা আমার ভাইকে মেরে ফেলবে।’
এদিকে এফজিভি হোল্ডিংস কোম্পানিতে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের প্রতিনিধি মোহাম্মদ হৃদয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি খায়রুল নিখোঁজ হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘মালয়েশিয়া পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তারা খায়রুলের সহকর্মীদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।’
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে নীলফামারীর পুলিশ সুপার (এসপি) গোলাম সবুর বলেন, ‘নিখোঁজের বিষয়টি মালয়েশিয়ায় হওয়ায় এদেশ থেকে তা বুঝতে পারা কঠিন। বিষয়টি দেশের হলে জিডি করলে আমরা খতিয়ে দেখতাম।’ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার পাশাপাশি খায়রুলের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করতে পরিবারকে পরামর্শ দিয়েছেন।