কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
কুড়িগ্রামের চর রাজীবপুরে স্বামীর ধার আনা টাকা দিতে না পারায় এক গৃহবধূকে ধর্ষণ করে আসছিলেন পাওনাদার ও তাঁর সহযোগীরা। মাতবরদের কাছে বিচার চেয়েও লাভ হয়নি। ক্ষোভে-অপমানে গত ২৪ মে বিষপান করে ওই দম্পতি। ২৯ মে মৃত্যু হয় স্ত্রীর। গতকাল শুক্রবার মামলা করেন গৃহবধূর মামা। রাতেই দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তার দুই আসামি হলেন জয়নাল কসাই ও তাঁর সহযোগী আলম কসাই।
রাজীবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতৃা (ওসি) আশিকুর রহমান জানান, দলবদ্ধ ধর্ষণ ও আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগের ধারা উল্লেখ করে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে গতকাল মধ্যরাতে মামলা নথিভুক্ত করেছে পুলিশ।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, বিষপানে অসুস্থ হয়ে মারা যাওয়া গৃহবধূর মামা বাদী হয়ে চারজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। আসামিরা হলেন জয়নাল আবেদীন, শুক্কুর আলী, আলম হোসেন ও সোলায়মান। এরা সবাই পেশায় কসাই। রাজীবপুরের বিভিন্ন বাজারে এদের মাংসের দোকান রয়েছে। এঁদের মধ্যে জয়নাল পাওনা টাকা আদায়ের নামে ওই গৃহবধূকে ধর্ষণ করেন। একপর্যায়ে ধর্ষণের ভিডিও করে ওই গৃহবধূকে জিম্মি করেন। এরপর অপর সহযোগীদের নিয়ে দিনের পর দিন দলবদ্ধ ধর্ষণ করেন। গত রমজান মাস থেকে ওই গৃহবধূর ওপর এই পাশবিক নির্যাতন চলতে থাকে। স্থানীয় মাতবরদের কাছে বিচার না পেয়ে ক্ষোভ ও অভিমানে গৃহবধূ ও তাঁর স্বামী প্রকাশ্যে বিষপান করেন। চার দিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে অর্থসংকটে বাড়ি ফেরেন। গত বুধবার (২৯ মে) বাড়িতেই মারা যান ওই গৃহবধূ।
ওসি আশিকুর রহমান বলেন, মামলা হয়েছে। প্রধান অভিযুক্তসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ নিয়ে পরে বিস্তারিত জানানো হবে।
এর আগে ঘটনার পর ভুক্তভোগী পরিবার ও মাতবররা কেউ কিছু জানাননি দাবি করে ওসি বলেছিলেন, ‘ভিকটিমের (গৃহবধূর) মামা আমাদের বলেছেন যে তিনি বিষ খেয়েছেন। তাই অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।’
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিষপানের পর গুরুতর অবস্থায় তাঁদের প্রথমে রাজীবপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে জামালপুর হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় চিকিৎসক তাঁদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে বলেন। কিন্তু আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় এই দম্পতি বাড়িতে চলে আসেন। বুধবার বাড়িতেই গৃহবধূর মৃত্যু হয়। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে থানায় নেয়।
ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ঘটনা গোপন ছিল। আমরা জানতাম না। আর ওই চ্যাংড়া (গৃহবধূর স্বামী) একেকবার একেক কথা কয়। বিষ খাওয়ার পর চিকিৎসার জন্য জয়নাল (প্রধান আসামি) ২০ হাজার টাহা দিছে। হের স্বামী নেয় নাই।’