নবাবগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ের নিরাপত্তা প্রহরীর বিরুদ্ধে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর এক নারীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত রোববার বিকেলে ওই গৃহবধূ যৌন হয়রানির কথা উল্লেখ করে ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম মো. বেলাল হোসেন (৪৫)। ওই নারী উপজেলার অদূরে আলোকধুতি গ্রামের অধিবাসী।
এ বিষয়ে ইউএনও অনিমেষ সোম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘উপজেলার কর্মচারী কর্তৃক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পরিবারের এক নারীকে যৌন হেনস্তার অভিযোগ পেয়েছি। ওই নারীকে সুষ্ঠু বিচার পাওয়ার ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছি।’
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, হেনস্তার শিকার ভূমিহীন ওই নারী স্বামী-সন্তানসহ বন বিভাগের জায়গায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছিলেন। সম্প্রতি বন বিভাগ তাঁদের উচ্ছেদ করে। পাশেই টিনের বেড়া দিয়ে অস্থায়ী ঝুপড়িঘর বসবাস করছেন। ওই নারী প্রধানমন্ত্রীর ঘর দেওয়ার কথা লোকমুখে শুনে স্বামীসহ উপজেলা পরিষদে যান। এ সময় ইউএনও কার্যালয়ের নিরাপত্তা প্রহরী বেলাল হোসেন ওই নারীর ফোন নম্বর নেন এবং প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তাঁর সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন।
গত ৩ মে ঈদের দিন বিকেলে স্বামীর অনুপস্থিতির সুযোগে ওই নারীর বাড়ি যান নিরাপত্তা প্রহরী বেলাল হোসেন। সেখানে আপত্তিকর কথা বলে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করেন। এ সময় তাঁদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। মুখে কাপড় গুঁজে দেওয়ার চেষ্টা করেন বেলাল। তাঁর চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে এলে বেলাল দ্রুত সটকে পড়েন।
এক সন্তানের জননী ওই নারী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওই দিন সন্ধ্যায় উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনওর কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ করি। ঈদের ছুটি শেষ হলে ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ দেই। অভিযোগ না দিতে বলে বেশ কয়েকজন ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। কিন্তু এলাকায় আমার মানসম্মান সবই তো গেছে, আমার তো আর কোনো ভয় নাই। ইউএনও স্যার সঠিক বিচার করার আশ্বাস দিয়েছেন। আশা করি, ন্যায্য বিচার পাব।’
ওই নারীর প্রতিবেশী ইলিয়াস মুর্মু জানান, দুই বছর আগে এখানে ওই নারীর বিয়ে হয়। স্বামী কখনো অন্যের জমিতে কাজ করেন, কখনো ভ্যান চালিয়ে সংসার চালান। অভাবের সুযোগ নিয়ে এই পরিবারে এমন ঘটনা ঘটাল।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও কার্যালয়ের নিরাপত্তা প্রহরী বেলাল হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঈদের দিন আমি ওই নারীর বাসায় যাইনি। আমার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ মিথ্যা।’
উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আতাউর রহমান বলেন, ‘উপজেলা পরিষদের কোনো কর্মচারীর দ্বারা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পরিবারের নারী হেনস্তার শিকার হওয়া খুবই দুঃখজনক। অভিযোগ নেওয়া হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’