রংপুরের বদরগঞ্জে সালিস বৈঠকে দুই নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় করা মামলায় সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানসহ তিনজনের ১৪ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সেই সঙ্গে দুজনের তিন বছর ও চারজনের এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
আজ বুধবার দুপুরে রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক রোকনুজ্জামান এই রায় দেন।
রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর পিপি জাহাঙ্গীর আলম তুহিন জানান, উপজেলার মধুপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আয়নাল হোসেন, তাঁর সহযোগী মহুবুল ইসলাম, চিকনা এনামুলকে ১৪ বছর, মোটা এনামুল, সাবেক ইউপি মেম্বার ইলিয়াসকে ৩ বছর, সেকেন্দার মণ্ডল, রউফ মণ্ডল, মজম আলী ও বাবলুকে ১ বছরের করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া ৫০ হাজার করে টাকা জরিমানা করা হয়। এ সময় মামলার বাকি ৪৫ আসামিকে বেকসুর খালাস দেন আদালত।
মামলার নথিপত্র সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের ২৫ জুন উপজেলার মধুপুর ইউনিয়নের রাজারামপুর কাশিপুর লিচু বাগান এলাকায় চরিত্রহীনতার অভিযোগ এনে স্থানীয় হাফিজা বেগম হ্যাপি ও সাহিদা বেগমকে সালিস বৈঠকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন এবং ভিডিও ধারণ করা হয়। বিষয়টি সেই সময় গণমাধ্যমে আসলে হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল দেয়।
পরবর্তীতে হ্যাপী বাদী হয়ে মামলা করলে ৫৪ আসামির বিরুদ্ধে দুই দফায় পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদন দেয়। তদন্ত প্রতিবেদনে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। দীর্ঘ সাড়ে ১১ বছর পর ১৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য শেষে মামলাটির রায় দেওয়া হয় আজ।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেছেন, এই রায়ে তারা সন্তুষ্ট। খালাস প্রাপ্তদের বিষয়ে নথিপত্র ঘেঁটে আপিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অন্যদিকে বাদী পক্ষের আইনজীবী আব্দুল হক প্রামাণিক বলেছেন, রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন তাঁরা।
রায় পাওয়ার পর হাফিজা বেগম হ্যাপি বলেন, ‘রায়ে মাত্র ৯ জনের দণ্ড হয়েছে। বাকিদের খালাস দেওয়া হয়েছে। তবুও আমি সন্তুষ্ট। তবে আমি অনিরাপদ। কারণ দণ্ড প্রাপ্ত এবং খালাস পাওয়া সবাই ক্ষমতাধর ব্যক্তি। আমি ঠিকভাবে বাড়ি যেতে পারব কিনা জানি না। আমাকে তারা মেরেও ফেলতে পারে। সে জন্য সরকারের কাছে নিরাপত্তা দাবি করছি।’
সাহিদা বেগম বলেন, ‘মামলার পর আদালতের আদেশ থাকলেও শুধু হ্যাপির বাড়িতে পুলিশ পাহারা দিয়েছে। আমি সব সময় অনিরাপত্তায় আছি। রায়ের পর আমি আরও নিরাপত্তাহীন হলাম। আমি পুলিশের কাছে আমার নিরাপত্তা চাই। তা না হলে ওরা আমার জীবননাশ করতে পারে।’