হোম > অপরাধ > যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা

৪ লাখ ডলার চুরি ঢাকতে ফাহিমকে খুন করেন হাসপিল, গবেষণা চালান কয়েক সপ্তাহ

অনলাইন ডেস্ক

২০২০ সালের ১৪ জুলাই নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে নিজ অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বাংলাদেশের রাইড শেয়ারিং অ্যাপ পাঠাও–এর সহপ্রতিষ্ঠাতা ফাহিম সালেহর খণ্ড–বিখণ্ড মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী টায়রেস হাসপিল (২৫) দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। গত সোমবার (২৪ জুন) নিউইয়র্কের ম্যানহাটন সুপ্রিম কোর্টের বিচারকেরা হাসপিলকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। 

আদালতের এই রায়ের আগে হাসপিল দাবি করেছিলেন, ফরাসি প্রেমিকাকে খুশি করতে দামি উপহার কেনার জন্য ফাহিমের টাকা চুরি করেন। চুরির কথা প্রকাশ পেলে প্রেমিকা তাঁকে ছেড়ে  যেতে পারেন—এই আশঙ্কায় তিনি ফাহিমকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। তবে বিচারকেরা তাঁর এই দাবি খারিজ করে দিয়েছেন। 

কেন বিচারকেরা হাসপিলের দাবি খারিজ করে দিয়েছেন, তা দীর্ঘ পরিকল্পনা ও হত্যাকাণ্ডের ধরনেই বোঝা যায়। হাসপিল কতটা ঠান্ডা মাথার খুনি তা তাঁর পরিকল্পনা ও হত্যার কায়দায় ফুটে উঠেছে। আদালতের রায়ের বিবরণীতে সেসব বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে। 

হত্যার পরিকল্পনা
টাইরেস হাসপিল ২০১৮ সালে ফাহিম সালেহের টাকা চুরি করার পরিকল্পনা শুরু করেন। কিন্তু ২০২০ সালের জুলাইয়ে এসে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন। নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাসপিল ফরাসি প্রেমিকার জন্য দামি উপহার কেনার জন্য সালেহর কোম্পানি থেকে টাকা চুরি করেন। 

হাসপিল টাকা চুরির জন্য একটি ভুয়া করপোরেট আইডি এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তৈরি করেন। তবে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে সালেহ টাকা চুরির বিষয়টি টের পান। হাসপিল তখন চুরির টাকা পরিশোধে সম্মত হন। তবে পরে সেই অবস্থান থেকে সরে যান। একটি ভুয়া পেপ্যাল অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ফাহিমের আরও টাকা চুরি করা শুরু করেন। এভাবে তিনি প্রায় ৪ লাখ মার্কিন ডলার চুরি করেন। একপর্যায়ে ফাহিমের সব টাকা নিয়ে নির্ঝঞ্ঝাট বিলাসবহুল জীবনের আশায় তাঁকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। 

হাসপিল সোশ্যাল মিডিয়াতে সালেহর অবস্থানের ওপর নজর রাখতে শুরু করেন। আলামত গোপন করার জন্য কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রযুক্তি, অস্ত্র, টেজার এবং রক্ত ধোয়ামোছা নিয়ে গবেষণা করেন। পরিচয় গোপন করার জন্য বিশেষ ধরনের পোশাক কেনেন, যাতে সালেহ তাঁকে চিনতে না পারেন।

অন্তত তিনটি পৃথক অনুষ্ঠানে সালেহকে হত্যার পরিকল্পনা করেন হাসপিল। ২০২০ সালের মার্চে নাইজেরিয়ার লাগোসে ছুরি নিয়ে সালেহর পিছু নিয়েছিলেন। তবে হত্যার সুযোগ পাননি। এরপর নিউইয়র্কে ফিরে হোপওয়েল জংশনেও দুইবার সালেহর পিছু নেন। সালেহর বাড়ি পুড়িয়ে ফেলার বা জগিংয়ের সময় তাঁকে ছুরিকাঘাতে হত্যার পরিকল্পনা করেন। 

২০২০ সালের মে মাসে হাসপিল সালেহকে তাঁর বাড়িতে হত্যা করবেন বলে ঠিক করেন। তিনি ঘাড়ে ছুরিকাঘাত নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। ১৭ জুন হাসপিল আবর্জনা ফেলার পলিব্যাগ, একটি সুইফার ওয়েটজেট এবং একটি বৈদ্যুতিক করাত কেনেন। 

হাসপিল সালেহর বাসা থেকে রাস্তার অপর পাশের ভবনের একটি খালি অ্যাপার্টমেন্টে কৌশলে প্রবেশ করেন। এরপর সেই অ্যাপার্টমেন্টের চাবি নকল করে সেখানে এমনভাবে নেস্ট ক্যামেরা স্থাপন করেন যাতে সালেহর বাড়ির যাবতীয় কিছুর ওপর নজরদারি করা যায়। 

হত্যাকাণ্ডের আগের দিনগুলোতে হাসপিল খুব আয়োজন করে প্রেমিকার জন্মদিন উদ্‌যাপন ও তাঁকে দামি উপহার দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। তিনি পার্টি বেলুন, বড় কেক, বিলাসবহুল হ্যান্ডব্যাগ, জুতা কেনেন, প্রাইভেট ইয়ট ট্যুর করেন এবং চুরি করা টাকা দিয়ে সোহোতে একটি বিলাসবহুল এয়ারবিএনবি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন। 

যদিও হত্যাকাণ্ডের দুই দিন পরই তাঁকে এক রহস্যময় নারীর সঙ্গে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে। দুজনে মিলে একগুচ্ছ বেলুন কিনতে দেখা যায়। হাসপিল তাঁর নতুন বান্ধবীর জন্মদিনে প্রচুর দামি উপহার ও কেক দিয়েছিলেন। 

হত্যাকাণ্ড
২০২০ সালের ১৩ জুলাই হাসপিল প্লাস্টিকের হেলমেট, বেসবল ক্যাপ এবং সানগ্লাস পরে সালেহর সঙ্গে তাঁর অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ের লিফটে প্রবেশ করেন। এ সময় হাসপিলের এমন পোশাক দেখে সালেহ কোভিড সতর্কতা নিয়ে তাঁর সঙ্গে রসিকতা করেছিলেন। তবে লিফটের দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গেই হাসপিল আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন। 

হাসপিল প্রথমে পেছন থেকে ফাহিম সালেহকে টেজার মেশিনের শক দিয়ে অজ্ঞান করে ফেলেন। এরপর তাঁর ঘাড়ে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করেন। 

হত্যাকাণ্ড গোপন করতে হাসপিল মিনি ভ্যাকুয়াম মেশিন দিয়ে অ্যান্টি–ফেলন আইডেন্টিফিকেশন ডিস্ক (এএফআইডি) খালি করে ফেলেন। কেননা ওই ডিস্কে একটি সিরিয়াল নম্বর থাকে যা অপরাধীকে শনাক্ত করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। 

এরপর আনুমানিক বেলা ৩টায় হাসপিল অ্যাপার্টমেন্ট ছেড়ে একটি উবারে করে নিউজার্সিতে যান। হাডসন নদী কতটা গভীর ও সেখানে কীভাবে আলামত ডুবিয়ে দেওয়া যেতে পারে—তা নিয়ে তিনি আগেই গবেষণা করেন। ওই নদীতে তিনি পরের দিন একটি আবর্জনার ক্যানে অনেক আলামত ফেলে দেন। 

হাসপিল পরের দিন ১৪ জুলাই সালেহর মরদেহ টুকরো টুকরো করতে এবং ঘটনাস্থল পরিষ্কার করতে অ্যাপার্টমেন্টে ফিরে আসেন। এরপরে তিনি করাত দিয়ে সালেহর শরীর টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলেন এবং সেগুলো আগেই কিনে রাখা ব্যাগে ভরেন। এ সময় করাতের ব্যাটারি ফুরিয়ে গেলে চার্জার কিনতে বেরিয়ে যান। 

হাসপিল যখন বাইরে যান তখন সালেহর চাচাতো ভাই তাঁকে দেখতে এসেছিলেন কারণ বিগত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁর কোনো সাড়া পাচ্ছিলেন না। এ সময় তিনি অ্যাপার্টমেন্টে ভাইয়ের টুকরো টুকরো এবং শিরশ্ছেদ করা দেহ আবিষ্কার করেন। তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশকে খবর দেন।

এদিকে হোম ডিপো থেকে ফিরে আসার পর হাসপিল সালেহর অ্যাপার্টমেন্টে পুলিশের উপস্থিতি লক্ষ্য করেন। এরপর তিনি প্রেমিকার জন্মদিন উদ্‌যাপনের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। 

হত্যার পরের দিনগুলোতে হাসপিল ‘খণ্ডিত দেহ’, ‘ফাহিম সালেহ’ এবং ‘নিউইয়র্কে টেক সিইওর হত্যা’ লিখে ইন্টারনেটে সার্চ করেন এবং গ্রেপ্তার হওয়ার আগে পর্যন্ত হাসপিল সালেহর পেপ্যাল অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলতে থাকেন।

শপথের দিনেই যেসব নির্বাহী আদেশ দিতে পারেন ট্রাম্প

ব্লিঙ্কেনের সংবাদ সম্মেলন থেকে ফিলিস্তিনি সাংবাদিককে টেনে হিঁচড়ে বের করে দিল

তীব্র ঠান্ডায় ট্রাম্পের অভিষেক ঘরে, ফিরে এল ৪০ বছর পুরোনো ঘটনা

যুক্তরাষ্ট্রে দাবানলে প্রাণহানি বেড়ে ২৭

টিকটক নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিল যুক্তরাষ্ট্র

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ট্রাম্পের শপথের আগেই বার্নিকাটসহ তিন কূটনীতিককে পদত্যাগের নির্দেশ

লস অ্যাঞ্জেলেসে দাবানলে ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের এক সপ্তাহ পর বাড়ি ফেরার পরামর্শ

দাবানলে পোড়া ভিটেমাটিতে এখন শুধুই হাহাকার, লস অ্যাঞ্জেলেসের বিপদ তবু কাটেনি

বন্ধ হচ্ছে আদানির ১০০ বিলিয়ন ডলার গায়েব করা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ

সেকশন