জবি প্রতিনিধি
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) জুতা পরা অবস্থায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ওঠার প্রতিবাদ করায় রসায়ন বিভাগের দুই শিক্ষার্থীর ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে মার্কেটিং বিভাগের কয়েক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে। এ হামলায় রসায়ন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তামান্না তাবাসসুম ও আকাশ আলী আহত হন।
আহত শিক্ষার্থী আকাশ আলীকে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে পরবর্তী সময়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, জুতা পায়ে এক মেয়ে ও ছেলে শহীদ মিনারে উঠলে প্রতিবাদ করেন রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী আকাশ। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি শুরু হয়। একপর্যায়ে জুতা পায়ে শহীদ মিনারে ওঠা মেয়েটির বন্ধু মাহী আকাশকে ধাক্কা দিতে গেলে আকাশ তাঁর হাত সরিয়ে দেন। মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী মাহী তাঁর বিভাগের বন্ধু অনিককে ফোন দিলে ১৫ থেকে ২০ শিক্ষার্থী এসে আকাশকে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করেন। এ মারধরের সময় আকাশের সঙ্গে থাকা এক নারীশিক্ষার্থীর ওপরও হামলা চালান তাঁরা।
রসায়ন বিভাগের শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘আমি হতবাক হয়ে গেছি। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এমন ভয়ংকর রূপ ধারণ করতে পারে। আমার সামনেই আমার শিক্ষার্থীকে তিন দফা মেরেছে।’
ভুক্তভোগী আকাশ বলেন, “আমরা বিভাগের প্রোগ্রামের জন্য স্টেজের কাজ করছিলাম। বিদ্যুৎ চলে গেলে চা খাওয়ার জন্য নিচে আসি। তখন এক নারী শিক্ষার্থী ও তার সঙ্গে থাকা এক ছেলে জুতা পায়ে শহীদ মিনারে ওঠে। তাদের এ বিষয়ে বললে মেয়েটি বলে, ‘আমার ইচ্ছা তাই জুতা পায়ে উঠেছি।’ একপর্যায়ে ছেলেটি আমার ওপর চড়াও হয়। এরপর আমি তাকে আঘাত করেছি; এ কথা বলে তার বন্ধু অনিককে ফোন দেয়। তখন অনিক ১৫ জনেরও বেশি ছেলে নিয়ে এসে আমার ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। তারা কয়েক দফায় শহীদ মিনারের সামনে এবং গণিত বিভাগের সামনে আমার ওপর হামলা করে। আমার বুকে কিল-ঘুষি ও পেটে লাথি মারে। শহীদ মিনারে থাকা একটি বাঁশ দিয়েও আমাকে আঘাত করে অনিক। আমাকে বাঁচাতে গিয়ে আমার বান্ধবী তামান্নাও আহত হয়।’
এ হামলায় নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মার্কেটিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী অনিক কুমার দাশের বিরুদ্ধে। অনিক কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহসভাপতি কাজী জিয়া উদ্দিন বাসেতের কর্মী।
অনিক বলেন, ‘আমার বন্ধু মাহী আমাকে ফোন দিলে শহীদ মিনারে যাই। গিয়ে দেখি তার (মাহী) সঙ্গে একজনের (আকাশ) কথা-কাটাকাটি চলছে। এ সময় আমি অসুস্থ থাকায় পেছনে ছিলাম, বাকিরা গিয়ে আকাশকে মেরেছে।’
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলেন, ‘এটা বিভাগের শিক্ষার্থীদের একটা বিষয় বলে জেনেছি। ছাত্রদলের কেউ জড়িত কি না খতিয়ে দেখব।’
রসায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম লুৎফর রহমান বলেন, ‘আমার বিভাগের একজন শিক্ষার্থীকে বিভাগের শিক্ষকের সামনেই এভাবে মেরেছে, এটা দুঃখজনক। এই ন্যক্কারজনক ঘটনার বিচার চাই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অতি দ্রুতই ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, ‘সন্ধ্যার দিকে শহীদ মিনার চত্বরে একটা মারামারির ঘটনা ঘটেছে শুনেছি। সহকারী প্রক্টর ফেরদৌস স্যার তাৎক্ষণিক উপস্থিত হয়েছেন। রসায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান আমাকে বিষয়টি অবগত করেছেন। লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’