টানা পাঁচ বছর বিশ্বসেরা গবেষকদের তালিকায় এসআই কামরুজ্জামান

প্রকাশ : ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ১৬: ১০

সম্প্রতি বৈশ্বিক র‌্যাঙ্কিং প্রস্তুতকারী সংস্থা অ্যালপার ডগার (এডি) সায়েন্টিফিক ইনডেক্স ২০২৫ সালের বিশ্বসেরা গবেষকদের নিয়ে বার্ষিক তালিকা প্রকাশ করেছে। তালিকায় আবারও স্থান পেয়েছেন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মাভাবিপ্রবি) ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী এবং বাংলাদেশ পুলিশের উপপরিদর্শক মো. কামরুজ্জামান।

এ নিয়ে টানা পাঁচবার গবেষণায় র‌্যাঙ্কিং প্রস্তুতকারী সংস্থাটির তালিকায় স্থান পেলেন কামরুজ্জামান। বর্তমানে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) অধীনে ঢাকা মেট্রোতে কর্মরত রয়েছেন তিনি। তাঁর বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার সদর উপজেলায়।

বিশ্বসেরা গবেষকদের নিয়ে প্রকাশিত তালিকাটিতে এ বছর বিশ্বের ২২০টি দেশের ২৪ হাজার ৩৬৪টি প্রতিষ্ঠানের ২৪ লাখ ৫৩ জন গবেষক ও বিজ্ঞানী স্থান পেয়েছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশের ২১৮টি সরকারি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ১৬ হাজার ৭৫৬ জন গবেষকের নাম উঠে এসেছে, যার মধ্যে মাভাবিপ্রবির সাবেক শিক্ষার্থী ও পুলিশ কর্মকর্তা কামরুজ্জামান অন্যতম।

এ বিষয়ে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।  তিনি তাঁর অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে গিয়ে জানান, একজন অপরাধবিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে এ-সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি দীর্ঘ ৯ বছর ধরে গবেষণা করে আসছেন। ২০১৯ সাল থেকে পুলিশের উপপরিদর্শক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেও তিনি তাঁর গবেষণা কার্যক্রম চলমান রেখেছেন। ভবিষ্যতেও দেশের অপরাধের ধরন ও কারণ অনুসন্ধান, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, পুলিশের সার্বিক সংস্কার ও আধুনিকীকরণের লক্ষ্যে এসব গবেষণা তিনি চলমান রাখবেন।

তালিকায় স্থান পাওয়া মাভাবিপ্রবির ১৭৫ গবেষকের মধ্যে ৭ম স্থানে এবং বাংলাদেশে ৭৪২তম স্থানে রয়েছেন এসআই কামরুজ্জামান। এ ছাড়া ল অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ ক্যাটাগরির ক্রিমিনোলজি, ভিকটিমোলজি ও এ-সংক্রান্ত বিষয়ে গবেষণায় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ম ও বাংলাদেশে ২য় অবস্থানে রয়েছেন।

দেশের বাইরের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অপরাধবিজ্ঞান বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে দেশের কল্যাণে কাজ করার স্বপ্ন দেখেন এই তরুণ গবেষক। এ বিষয়ে মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞানে পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন অপরাধ সম্পর্কে সচেতন ও সমাজকে অপরাধমুক্ত করতে গবেষণার কাজ করেছি। দীর্ঘ প্রায় ৬ বছর গবেষণা-সংক্রান্ত কাজে বিভিন্ন সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা আমাকে সহযোগিতা করেছেন। এ জন্য আমি তাঁদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ।’

এডি সায়েন্টিফিক ইনডেক্স সারা বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের শেষ ৬ বছরের কাজের তথ্য বিশ্লেষণের পর তা এইচ-ইনডেক্স, আইটেন-ইনডেক্স স্কোর এবং সাইটেশনের ওপর ভিত্তি করে তালিকা প্রকাশ করে। এতে নিজ নিজ গবেষণার বিষয় অনুযায়ী গবেষকদের বিশ্ববিদ্যালয়, নিজ দেশ, মহাদেশীয় অঞ্চল ও বিশ্বে নিজেদের অবস্থান জানা যায়।

তা ছাড়া সূচকটিতে গবেষকদের বিশ্লেষণ ও বিষয়গুলো নির্দিষ্ট ক্যাটাগরিতে গণ্য করা হয়। কৃষি ও বনায়ন, কলা, নকশা ও স্থাপত্য, ব্যবসায় ও ব্যবস্থাপনা, অর্থনীতি, শিক্ষা, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি, ইতিহাস দর্শন ও ধর্মতত্ত্ব, আইন, চিকিৎসা, প্রকৃতিবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞানসহ মোট ১২টি ক্যাটাগরিতে প্রতিবছর এ তালিকা প্রকাশ করা হয়।

সংস্থাটির ২০২৪ সালের তালিকাতেও উঠে এসেছিল মো. কামরুজ্জামানের নাম। শুধু তাই নয়, ২০২১ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে এডি সায়েন্টিফিক ইনডেক্স প্রকাশিত বিশ্বসেরা গবেষকদের তালিকায় স্থান পেয়েছেন তিনি।

২০২১ সালের পর থেকে প্রতিবছরই মাভাবিপ্রবির গবেষকদের মধ্যে সেরা দশে স্থান পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক এই শিক্ষার্থী। এ ছাড়া বিষয়ভিত্তিক ক্যাটাগরিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ও দেশে প্রথম সারিতে স্থান পেয়ে আসছেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।

শুধু গবেষণায় নয়, সামাজিক ও মানবিক বিভিন্ন কাজেও সক্রিয় তিনি। টাঙ্গাইল সদর উপজেলার চৌরাকররা গ্রামে ২০১০ সালে গড়ে তোলেন বাতিঘর আদর্শ পাঠাগার। প্রতিষ্ঠার পর থেকে পাঠাগারটি গ্রামের মানুষের মধ্যে পাঠাভ্যাস তৈরি ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে সেলুন, বাসস্ট্যান্ড ও স্টেশন অণু পাঠাগার স্থাপনসহ শিক্ষামূলক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি আর্তমানবতার সেবায় বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালনা করে আসছে।

কামরুজ্জামান সম্পর্কে তাঁর গ্রামের মনসুর হেলাল ও হাবিবুর রহমান বলেন, তিনি ছাত্রাবস্থায় গবেষণার পাশাপাশি বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় লেখালেখি করতেন। নতুন সমাজ গড়ার লক্ষ্যে নিজ গ্রামে ‘বাতিঘর আদর্শ পাঠাগার’ স্থাপন করেন। একঝাঁক তরুণ স্বেচ্ছাসেবী ছাত্র গ্রন্থাগারটি পরিচালনা করেন। তাঁর লক্ষ্য সমাজের মানুষকে অপরাধমুক্ত করা। তাই বই পড়ার বিকল্প নেই। একটি ভালো বই তাঁদের সুন্দর জীবনের পাশাপাশি সুশীল হিসেবে পরিণত করতে পারে।

কানাডার সেরা ৫ বিশ্ববিদ্যালয়

সাইফুল ইসলামের ‘ইংলিশ থেরাপি’

১৫৬ বছরে ঐতিহ্যের চট্টগ্রাম কলেজ

৬৪ জেলার ৬৪ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দিচ্ছে আইইউবিএটি