হোম > শিক্ষা

সিএসইতে না পড়েও আমাজনের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার সুদীপ

আমাজনের মতো টেকজায়ান্ট কোম্পানিতে চাকরি পাওয়ার অনুভূতি অসাধারণ ছিল। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য আমাজনের মতো কোম্পানিতে চাকরি পাওয়া একটা মাইলস্টোনের মতো। আমাজন পাড়ি দেওয়ার জার্নিটা মোটেও সহজ ছিল না। যখন নন-সিএসই (কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং) ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে কম্পিটিটিভ প্রোগ্রামিং শুরু করেছিলাম, তখন শুধু এসব কোম্পানির নাম শুনতাম। ভাবতাম, কোনো দিন যদি এসব কোম্পানিতে চাকরি করার সুযোগ হতো। এখন এমনই একটা কোম্পানিতে চাকরি করতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। 

স্বপ্ন দেখার শুরু
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের কাছে FAANG (Facebook, Apple, Amazon, Netflix, Google) খুবই পরিচিত একটা টার্ম। প্রথম যখন এ টার্মের সঙ্গে পরিচিত হই, তখন থেকেই স্বপ্ন, FAANG-এর কোনো একটা কোম্পানিতে চাকরি করব। তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের শেষ দিক থেকেই নিজেকে প্রস্তুত করেছি। 

প্রস্তুতির পেছনে
আমাজনের প্রস্তুতির একটা বড় অংশ বিহেভিওরাল প্রশ্নের (লিডারশিপ প্রিন্সিপাল রিলেটেড) জন্য প্রস্তুতি নেওয়া। প্রতিটি লিডারশিপ প্রিন্সিপল ভালোমতে বুঝে, সেই অনুযায়ী বিভিন্ন স্যাম্পল প্রশ্নের উত্তর তৈরি করে অনুশীলন করেছি। উত্তরগুলো STAR (Situation, Task, Action, Result) মেথড ফলো করে তৈরি করেছি। ভার্সিটি লাইফে নিয়মিত কম্পিটিটিভ প্রোগ্রামিং করাটা প্রবলেম সলভিং রাউন্ডগুলোর জন্য ছিল বিশাল প্লাস পয়েন্ট। তাই এটার জন্য বিশেষ প্রস্তুতি নিতে হয়নি। নিজেকে ঝালাই করার জন্য লিটকোডের (ওয়েবসাইট) সমস্যাগুলো সমাধান করেছি। যেহেতু ইন্টারভিউতে প্রবলেম সলভ করার জন্য বেশি সময় থাকে না, তাই প্রায়ই টাইমার ব্যবহার করে একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রবলেম সলভ করার অনুশীলন করেছি। অবজেক্ট অরিয়েন্টেড ডিজাইন রাউন্ডের জন্য অবজেক্ট অরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং ডিজাইন প্রিন্সিপল, ডিজাইন প্যাটার্ন, ক্লিন কোড—এসব নিয়ে পড়াশোনা করেছি। বিভিন্ন রকম ডিজাইনের প্রশ্ন সলভ করেছি। পাশাপাশি কীভাবে এসব ডিজাইন প্রিন্সিপল ও প্যাটার্ন ব্যবহার করা যায়, সেগুলো অনুশীলন করেছি। প্রস্তুতির আরেকটা বড় অংশ ছিল সবকিছু লিখিত ডকুমেন্ট করা, যা ইন্টারভিউর আগের সপ্তাহে দ্রুত রিভিশন দিয়ে কাজে লেগেছে। এ ছাড়া মক ইন্টারভিউ দেওয়া খুব উপকারী ছিল। এটা আমার নার্ভাসনেস কাটাতে আর কথা বলার জড়তা কাটাতে সাহায্য করেছে। 
যেসব চাকরির সুযোগ আমাজনে সিএসই আর নন-সিএসই দুই ব্যাকগ্রাউন্ডের জন্যই অনেক ধরনের চাকরির সুযোগ আছে। সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার, ম্যানেজার, ইউএক্স ইঞ্জিনিয়ার, ডেটা সায়েন্টিস্ট, প্রোগ্রাম ম্যানেজার, টেকনিক্যাল রিক্রুটার ইত্যাদি। তবে বাংলাদেশ থেকে সরাসরি চাকরি নিয়ে আসতে চাইলে সিএসই ব্যাকগ্রাউন্ডের চাকরি নিয়ে আসা তুলনামূলক সহজ। 

আমাজনে ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া
সব মিলিয়ে তিন ধাপে ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। প্রথমে ছিল একটি অনলাইন অ্যাসেসমেন্ট রাউন্ড, যেখানে কোডিং চ্যালেঞ্জ আর কিছু বিহেভিওরাল প্রশ্ন ছিল। অনলাইন টেস্ট ছিল আড়াই ঘণ্টার। দ্বিতীয় ধাপে ছিল ফোন ইন্টারভিউ। এখানেও ছিল একটা কোডিং চ্যালেঞ্জ, আর আমাজনের লিডারশিপ প্রিন্সিপলের ওপর ভিত্তি করে কিছু বিহেভিওরাল প্রশ্ন। এই ইন্টারভিউটা ছিল ১ ঘণ্টার। আর শেষ ধাপে ছিল ১ ঘণ্টা করে চার রাউন্ডের ইন্টারভিউ। প্রথম দুই রাউন্ডে ছিল কোডিং চ্যালেঞ্জ আর বাকি দুই রাউন্ডে অবজেক্ট-ওরিয়েন্টেড ডিজাইন প্রবলেম। প্রতি রাউন্ডের শেষে ২০-২৫ মিনিট ছিল আমাজনের লিডারশিপ প্রিন্সিপলের ওপর ভিত্তি করে কিছু বিহেভিওরাল প্রশ্ন। আগে শেষের ইন্টারভিউর রাউন্ডগুলো অনসাইটে হলেও কোভিডের পর থেকে সব ইন্টারভিউই অনলাইনে হয়। তাই প্রতিটা কোডিং ও অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড ডিজাইন রাউন্ডেই ইন্টারেকটিভ টেক্সট এডিটর ছিল। যেখানে ইন্টারভিউয়ার প্রশ্ন ও স্যাম্পল টেস্টকেস দিয়েছে। পাশাপাশি এখানেই কোডিং অথবা ডিজাইন করতে হয়েছে। 

যত সময় লাগতে পারে
এটা অনেকটাই নির্ভর করে প্রস্তুতির ওপর। প্রতিটা ধাপের আগেই ইন্টারভিউর তারিখ রিক্রুটারের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করা যায়, যাতে পরবর্তী রাউন্ডগুলোর যথাযথ প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় পাওয়া যায়। তবে পুরোপুরি প্রস্তুত থাকলে দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যেই সম্পূর্ণ ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া শেষ করা সম্ভব। সব কটি রাউন্ড সফলভাবে পার করলে মোটামুটি দু-এক সপ্তাহের মধ্যেই চাকরির অফার পাওয়া যায়। চাকরিতে যোগ দেওয়ার সময়টা অনেক ক্ষেত্রে অফিশিয়াল কাগজপত্র জোগাড় করা এবং বিভিন্ন দেশের ভিসা প্রসেসিং সময়ের ওপর নির্ভর করে থাকে। 

নতুনদের জন্য পরামর্শ 
ইউনিভার্সিটি লাইফে নিয়মিত প্রবলেম সলভিং করা আর কম্পিটিটিভ প্রোগ্রামিংয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকা। শুধু আমাজন নয়, মোটামুটি সব কোম্পানিতেই কোডিং ইন্টারভিউ থাকে। তাই ভার্সিটি লাইফ থেকেই প্রবলেম সলভিং করলে এ রাউন্ডগুলো ভালো করা সহজ হয়। এর সঙ্গে কম্পিউটার সায়েন্সের বেসিক যেমন—ডেটাবেইস, নেটওয়ার্কিং, অপারেটিং সিস্টেম, অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং—এগুলো ভালোমতো আয়ত্ত করা উচিত। লো লেভেল ডিজাইন, সিস্টেম ডিজাইন—এ রাউন্ডগুলোর জন্য এসব বিষয়ের ভিত শক্ত হওয়া খুবই জরুরি। আমাজনে চাকরির জন্য আবেদন করার প্ল্যাটফর্ম হলো amazon.jobs। এখানে সব রকম অভিজ্ঞতার জন্যই নিয়োগ তালিকা দেওয়া হয়। নতুন গ্র‍্যাজুয়েটদের জন্য কিছু গ্র‍্যাজুয়েট লেভেল চাকরি থাকে। সেগুলোতে আবেদন করলে ইন্টারভিউতে ডাক পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এ ছাড়া পরিচিত কেউ যদি আমাজনে চাকরিরত থাকেন, তাঁর কাছ থেকে রেফারেল নিয়ে আবেদন করলে ইন্টারভিউতে ডাক পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। 

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
আসলে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে শেখার শেষ নেই। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন কিছু শেখা, নিজের স্কিল বাড়ানো। এসব অভিজ্ঞতার মিশেলে ভবিষ্যতে আরও দক্ষ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হওয়াই আমার লক্ষ্য! আর কখনো সুযোগ ও ভালো আইডিয়া পেলে উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছা আছে। 

অনুলিখন: আনিসুল ইসলাম নাঈম  

ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ‘সিএসই ফেস্ট’ অনুষ্ঠিত

হতাশা কাটিয়ে এগিয়ে যাওয়ার উপায়

ঢাবির কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটের প্রস্তুতি

আইইএলটিএস লিসেনিং (পর্ব-২.৩)

সম্পূর্ণ অর্থায়িত চায়নিজ গভর্নমেন্ট স্কলারশিপ

দেশের ১৯ কেন্দ্রে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ

এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা আজ, শুরু সকাল ১০টায়

এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা শুক্রবার

আইইউবিএটির ৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপিত

সেকশন