আজিনুর রহমান আজিম, পাটগ্রাম (লালমনিরহাট)
দেশের মানচিত্রে জেলা সদর থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত উপজেলা পাটগ্রাম। বিভাগীয় শহর ও জেলা থেকে এ ধরনের দূরত্বের উপজেলা দেশে আর নেই বললেই চলে। ইচ্ছা থাকলেও এই প্রত্যন্ত উপজেলা থেকে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা দুরূহ হয়ে ওঠে; বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের বেলায়। এ ক্ষেত্রে নারীদের পড়ালেখায় অনন্য ভূমিকা রাখছে পাটগ্রাম মহিলা মহাবিদ্যালয়। নান্দনিক পরিবেশ আর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মেলবন্ধন এবং পরিচালনা পর্ষদের চেষ্টায় বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে উপজেলার নারীদের একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি।
পাটগ্রাম উপজেলায় ডিগ্রি ও স্নাতক পর্যায়ে পড়ার জন্য মোট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে তিনটি। বেসরকারি দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পাটগ্রাম মহিলা মহাবিদ্যালয় অন্যতম। এর অবস্থান পাটগ্রাম পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আন্তজেলা এলাকায়। ৭ আগস্ট ১৯৯৭ সালে এ মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আবিদ আলীর উদ্যোগে কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাকালে কলেজটির জন্য ৮৫ শতাংশ জমি দান করেন প্রয়াত বিরাজ কুমার হিসাবিয়া ও তাঁর ছেলে বিশ্বজিৎ কুমার হিসাবিয়া আলো। পরবর্তী সময়ে কলেজের নিজস্ব অর্থায়নে ৫১ শতাংশ জমি কেনা হয়। মাত্র ৯৮ জন নারী শিক্ষার্থী নিয়ে পাটগ্রাম মহিলা মহাবিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। কলেজটি উদ্বোধন করেন লালমনিরহাটের তখনকার জেলা প্রশাসক তড়িৎ কান্তি রায় চৌধুরী।
শুরু থেকে সুনামের সঙ্গে পাঠদান অব্যাহত রয়েছে পাটগ্রাম মহিলা মহাবিদ্যালয়ে। ২০০৫ সালে স্নাতক (ডিগ্রি) ও ২০১৬ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতি, ইতিহাস ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অনার্স পাঠদানের অনুমোদন পায় এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এখানে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ের পাঠদান করা হয়। এটি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পরীক্ষাকেন্দ্রও।
কলেজটি পড়ালেখা ও অন্যান্য অবস্থানে ভালো করায় ২০০২ সালে উচ্চমাধ্যমিক ও ২০২১ সালে স্নাতক (ডিগ্রি) পর্যায়ের এমপিওভুক্ত হয়। প্রতিবছরই এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক ও অনার্স পরীক্ষায় পাসের হার প্রায় ৭০ শতাংশ।
সবুজে ঘেরা এই কলেজে একাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোতাহার হোসেন অডিটরিয়াম এবং সরকারের দেওয়া একটি চারতলা ভবন রয়েছে। বর্তমান এখানে দেড় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। এখানে শিক্ষক ও কর্মচারী রয়েছেন ৬৪ জন।
পাটগ্রাম মহিলা মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান নীলু। তিনি জানিয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নারীদের শিক্ষাবিস্তারে এ মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত। সরকারঘোষিত নির্দিষ্ট ফি ছাড়া অতিরিক্ত কোনো অর্থ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হয় না। শ্রেণিপাঠের মান বজায় রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়। ফলসহ অন্যান্য বিষয়ে অভিভাবকদের আস্থা অর্জন করায় কলেজটিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা সব সময় বেশি থাকে বলেও জানান মিজানুর রহমান নীলু।
পাটগ্রাম উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আফরোজা বেগম বলেন, এই উপজেলায় শুধু নারীদের শিক্ষায় এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আলাদাভাবে ভূমিকা রাখছে।