জেদ থেকে যদি ভালো কিছু হয়, তেমন জেদ মন্দ নয়। সহপাঠী তার আঁকা ছবি দেখায়নি বলে জেদ চেপে গিয়েছিল। সেই জেদ থেকে ছোটবেলায় আঁকাআঁকি শুরু। আর বড়বেলায় এসে তাতেই খানিক খ্যাতি জুটে যায়। এখন দেশ-বিদেশের চিত্র প্রদর্শনীতে তাঁর ছবি প্রদর্শিত হয়। তাঁর ডিজিটাল পেইন্টিংয়ের ভিডিও ভিউ কয়েক মিলিয়ন! এতে মাসে যা আয় হয়, তা দিয়ে নিজের খরচের অনেকটাই চলে যাচ্ছে। এতক্ষণ যাঁর কথা বলা হচ্ছিল, তাঁর নাম ইয়াসনা সরকার। পাবনার মেয়ে ইয়াসনা এখন থাকেন ঢাকায়।
ছবি আঁকা যেন অক্সিজেন
একটু একাকী থাকতে পছন্দ করেন ইয়াসনা। তাঁর এই একাকী সময়ের বন্ধু ক্যানভাস। প্রায় সব রকম মাধ্যমেই কাজ করেন তিনি। কিন্তু স্কেচ, অ্যাক্রিলিক আর জলরং মাধ্যমে তাঁর ছবিগুলো যেন একটু বেশিই মুগ্ধতা ছড়ায়। কাঠের গয়না তৈরি, তার ওপর অলংকরণে ইয়াসনা বেশ দক্ষ। তাঁর আঁকা মোট ছবির সংখ্যা হাজার পেরিয়েছে অনেক আগে।
সব চলছে সমানতালে
একদিকে পড়াশোনা, অন্যদিকে আঁকাআঁকি। ইয়াসনা জানান, কখনোই সমস্যা হয়নি তাঁর। পড়াশোনার পাশাপাশি ছবি আঁকলেই বরং পড়াটা ভালো হয় তাঁর। নিঝুম রাতের সুনসান নীরবতায় ইয়াসনার তুলির আঁচড়ে ফুটে ওঠে সব মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। ছবি আঁকার জন্য এমন সময় তাঁর বেশি পছন্দ। একসময়ের শখ ছবি আঁকা এখন তাঁর আয়েরও উৎস।
ছবি এঁকে আয়
ছবি আঁকা পেশা হিসেবে নেওয়া। আবার পড়াশোনার পাশাপাশি ছবি এঁকে হাতখরচ জোগানো সম্ভব—এমনটাই মনে করেন ইয়াসনা। কোনো মাসে ৫ হাজার আবার কোনো মাসে ২০ হাজার টাকা আয় হয় তাঁর। গত বছর প্রায় ৭৫ হাজার টাকা আয় করেছেন ছবি এঁকে। তবে আয় যেটাই হোক, ইয়াসনা তাতেই খুশি। তাঁর ছবি বিক্রির মাধ্যম অনলাইন প্ল্যাটফরম। ইয়াসনা’স পেইন্টিং তাঁর ফেসবুক পেজের নাম।
ডিজিটাল পেইন্টিংয়ে বাজিমাত
‘সহজ পাঠের গপ্পো’ ইয়াসনার একটি ডিজিটাল পেইন্টিং। যেখানে ছবির সঙ্গে আছে দুই ভাইয়ের কথোপকথন। এই পেইন্টিং অসংখ্য মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। ভিউ প্রায় ৬ মিলিয়ন। এমনিভাবে ‘তোমায় আমায় মিলে’, ‘তুমি আসবে বলে’ ইত্যাদি শিরোনামে ডিজিটাল পেইন্টিংয়ে কোনোটায় গান, কোনোটার সঙ্গে কবিতা জুড়ে দিয়েছেন তিনি। গড়ে তাঁর ভিডিওগুলোর ভিউ ১ লাখ পেরিয়ে গেছে অনেক আগেই। ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে তিনি ডিজিটাল পেইন্টিং শুরু করেন।
প্রদর্শনী
ভালো আঁকিয়ে যাঁরা, তাঁদের কমবেশি বিশ্বময় ডাক পড়ে। ইয়াসনাও এর বাইরে নন। দেশের বাইরে দুবাই ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে আয়োজিত প্রদর্শনীতে তাঁর ছবি প্রদর্শিত হয়েছে। এ ছাড়া তিনি ২০২২ সালে শিল্প বাংলা আর্ট এক্সিবিশন এবং বিভিন্ন অনলাইন প্রদর্শনীতে অংশ নেন।
প্রকৃতির মায়ায়
ক্যানভাসে অথবা ডিজিটাল মাধ্যমে—যেখানেই হোক না কেন, গাছপালা, প্রকৃতি, পশুপাখি বেশি ধরা দেয় ইয়াসনার ছবিতে। এসব বিষয়ে তিনি ছবি এঁকে মানুষকে সচেতন করতে চান।
রঙিন জীবন
ছবি আঁকা ইয়াসনার কাছে আনন্দদায়ক কাজ। তিনি এটি চালিয়ে যেতে চান সারা জীবন। ছবি আঁকা তাঁর সারা দিনের চিন্তা, মানসিক অবসাদ ও ক্লান্তি দূর করে।