বাংলাদেশ ছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের অবকাঠামো তৈরির জন্য দক্ষ কারিগর তৈরির পাশাপাশি বেকারদের হাতেকলমে শিখিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছে দেশের একটি প্রতিষ্ঠান। মিরপুর অ্যাগ্রিকালচার ওয়ার্কশপ অ্যান্ড ট্রেনিং স্কুল থেকে ঘুরে এসে সেই গল্প জানাচ্ছেন জুবায়ের ইবনে কামাল।
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাংলাদেশের অর্থনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে রেমিট্যান্স পাঠানো এসব প্রবাসীর বেশির ভাগই শ্রমিক। অর্থনীতিতে এত বড় ভূমিকা রাখা শ্রমিকেরা কোথায় প্রশিক্ষণ পান?
এই উত্তর খুঁজতে আপনাকে দৃষ্টি ফেরাতে হবে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে। দেশ ও দেশের বাইরে অবকাঠামো উন্নয়নে যাঁরা কাজ করে যাচ্ছেন, তাঁদের হাতেকলমে শিক্ষা দেয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এগুলোর মধ্যে অন্যতম মিরপুর অ্যাগ্রিকালচার ওয়ার্কশপ অ্যান্ড ট্রেনিং স্কুল (মটস)। এ ট্রেনিং সেন্টারের অবস্থান রাজধানীর পল্লবীতে।
ক্যাম্পাসের এক পাশে সারি সারি আমগাছসহ বিভিন্ন বৃক্ষের সমারোহ, অন্য পাশে প্রশাসনিক ভবন। ট্রেনিং সেন্টারের শিক্ষার্থীর বেশির ভাগই সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষ। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা এসব শিক্ষার্থী স্বল্পদৈর্ঘ্য প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজের ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে চান। এ রকম একজনের সঙ্গে কথা হলো সেখানে। তিনি হারুন আহমেদ, এসেছেন দিনাজপুর থেকে। অভাবের সংসারে অষ্টম শ্রেণির বেশি পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি তাঁর। কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষতা না থাকায় কর্মসংস্থানও জোটেনি। বন্ধুর মাধ্যমে মিরপুর অ্যাগ্রিকালচার ওয়ার্কশপ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারের কথা শুনে সেখানে ওয়েল্ডিং শিখতে দেড় মাসের সংক্ষিপ্ত কোর্সে ভর্তি হয়েছেন। হারুন জানান, এখানে ভর্তি হওয়ার আগে ওয়েল্ডিং সম্পর্কে কোনো ধারণাই ছিল না তাঁর। ‘এখানে ভর্তি হওয়ার পর স্যার শিখাইল ওয়াল্লিং (ওয়েল্ডিং)। দেড় মাসে ৩০ ক্লাস। ২৬ ক্লাস করছি, এখনই ভালো ফিনিশিং দিতে পারি’, বলছিলেন হারুন।
দেড় ও তিন মাসের প্রশিক্ষণের বাইরে তিন ও চার বছরের ডিপ্লোমা কোর্স রয়েছে এ প্রতিষ্ঠানে। তিন বছরের কোর্সে অটোমোবাইল ও মেশিনিস্ট নামে দুটি আলাদা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে। প্রথম বিষয়টির আওতায় অটোমোবাইল এবং কৃষিকাজে ব্যবহৃত ইঞ্জিন ও যন্ত্রপাতি সংযোজন, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ, ওয়েল্ডিং, শিট মেটালসহ ইলেকট্রিক্যাল বিভিন্ন কাজের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। অন্যদিকে মেশিনিস্ট বিষয়ের আওতায় লেদ, মিলিং, ড্রিলিং, গ্রাইন্ডিং ও অন্যান্য মেশিনে যন্ত্রাংশ তৈরি, মেশিন রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদি কাজে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ ছাড়া ইলেকট্রিক্যাল, সিভিল, মেকানিক্যাল ও অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে চার বছরের ডিপ্লোমা কোর্সের সুযোগও রয়েছে এখানে।