শ্যামনগর সরকারি মহসিন ডিগ্রি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এস এম জান্নাতুল নাঈম। পড়াশোনার পাশাপাশি পরিবেশ ও জলবায়ু নিয়ে কাজ করে আজ সবার পরিচিত মুখ তিনি। নিজের প্রতিষ্ঠিত সংগঠনের মাধ্যমে করে যাচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবী, মানবিক ও সচেতনতামূলক বিভিন্ন কাজ। এর স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন নানান সম্মাননা ও পুরস্কার। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ভিএসও বাংলাদেশ কর্তৃক আয়োজিত ন্যাশনাল ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০২৩-এ জেলা পর্যায়ে প্রথম স্থান অর্জন, ইউএসএআইডি আয়োজিত আইডিয়া কমপিটিশনে ‘সেভিং মাদার নেচার, সেভিং আস’ ২০২৩ ক্যাম্পেইনে জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন। নাঈমের সংগঠনের নাম ‘শরুব ইয়ুথ টিম’।
নাঈমের জন্ম সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার একটি প্রত্যন্ত গ্রামে। শৈশব থেকে নিজ এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, সুপেয় পানির সংকট ইত্যাদি তাঁকে খুব নাড়া দিত। স্নাতক পর্যায়ে আসতেই চারদিকে দেখা দেয় করোনার প্রাদুর্ভাব। অন্য সবার মতো নাঈমও গৃহবন্দী হয়ে পড়েন। দুরন্ত চটপটে নাঈমের কাছে ঘরে বন্দী থাকা বেমানান ঠেকল। ফেসবুকে খুলে ফেললেন ‘শ্যামনগরের রূপ বৈচিত্র্য’ নামে একটি গ্রুপ। সেখানে নিজের জন্মস্থান শ্যামনগরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তুলে ধরবেন বলে ঠিক করলেন।
প্রকৃতির ছবি গ্রুপে পোস্ট করা থেকেই প্রকৃতি সংরক্ষণের বিষয়টি বিবেচনায় আসে নাঈমের। সে জন্য ২০২১ সালের ২৫ জুলাই গড়ে তোলেন ‘শরুব ইয়ুথ টিম’ নামে একটি সংগঠন। অল্প কয়েকজন বন্ধুবান্ধবকে নিয়েই যাত্রা
শুরু। ৬ জন সদস্য নিয়ে শুরু হওয়া সংগঠনটির সদস্য সংখ্যা এখন প্রায় ৩১০ জন। দুর্যোগকালীন মানুষের পাশে দাঁড়ানো, সুপেয় পানি পৌঁছে দেওয়া, নলকূপ স্থাপন, নারীদের সেলাই মেশিন বিতরণ, বৃক্ষরোপণ, ক্লাইমেট স্ট্রাইক, ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প, ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠশালা, মাদকবিরোধী কার্যক্রম, পরিবেশ আন্দোলনসহ নানান কার্যক্রম পরিচালনা করছে শরুব ইয়ুথ টিম।
কিছু সুহৃদের অর্থায়ন ও সংগঠনের সদস্যদের চাঁদা শরুব ইয়ুথ টিমের অর্থের মূল উৎস। এ ছাড়া অনেক সময় সংগঠনের পাওয়া সম্মাননার অর্থ স্বেচ্ছাসেবামূলক ও মানবিক নানান কাজে ব্যয় করা হয়ে থাকে। পরিবেশ ও জলবায়ুকেন্দ্রিক কাজ করলেও সংগঠনটির সদস্যরা বন্যায় ত্রাণ নিয়ে ছোটেন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাছে। দুর্যোগে মানুষের হাতে পৌঁছে দেন খাদ্যসামগ্রী।
উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় ২৫টি নলকূপ স্থাপন করে ‘শরুব ইয়ুথ টিম’। সম্প্রতি একটি স্কুলে শিক্ষার্থীদের সুপেয় পানির কষ্ট দূর করতে বড় একটি পানির ড্রাম স্থাপন করেছে সংগঠনটি। সে ড্রাম ২০০ শিক্ষার্থীর পানির কষ্ট দূর করেছে। ঘূর্ণিঝড়সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে শ্যামনগরের মানুষ, বিশেষ করে নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে নারীদের আর্থিকভাবে সচ্ছল করে তোলার চেষ্টা করছে সংগঠনটি। এ জন্য নয়টি পরিবারকে সেলাই মেশিন দিয়েছেন নাঈম ও তাঁর সংগঠনের সদস্যরা। পরিবেশ ভালো রাখতে তাঁরা এলাকার বিভিন্ন জায়গায় নানান জাতের গাছ লাগিয়েছেন। সংগঠনের সদস্যরা ১০ হাজারের মতো তালবীজ রোপণ করেছেন বিভিন্ন রাস্তার পাশে।
ভবিষ্যতে পরিবেশ আন্দোলনের একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে চান নাঈম।