জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম কবি ও সংগীত স্রষ্টা হিসেবে সমধিক পরিচিত। তাঁর সৃষ্টিশীল জীবনকালে (১৯২০-১৯৪২) তিনি অনেক নাটকও রচনা করেছেন এবং নিজের নাটকের পাশাপাশি অন্য নাট্যকারের নাটক মঞ্চায়নের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই বাঁধ দিয়ে পদ্মা নদীর প্রবাহ বন্ধ করে দেওয়ার পরিকল্পনার পরিপ্রেক্ষিতে কাজী নজরুল ইসলাম ১৯৩০ সালের দিকে রচনা করেছিলেন নাটক ‘সেতু-বন্ধ’। কবির এই নাটক ঢাকার মঞ্চে এবার মঞ্চায়িত করল বাঁশরী রেপার্টরি থিয়েটার।
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে মঞ্চায়িত হয় এই নাটক। কাজী নজরুল ইসলামের এই নাটক মঞ্চে নির্দেশনা দিয়েছেন স্বনামধন্য নাট্যব্যক্তিত্ব গোলাম সরোয়ার। নাট্যভাবনা ও পরিকল্পনা করেছেন ড. ইঞ্জিনিয়ার খালেকুজ্জামান। নাটক নির্মাণের বিভিন্ন দায়িত্বে ও অভিনয়ে আছেন সুপরিচিত ও দক্ষ নাট্যশিল্পীরা। এটি ছিল ‘সেতু-বন্ধ’ নাটকের প্রথম শো।
নাটকের কাহিনিতে দেখা যায়, স্বর্গের দেবী পদ্মা জানতে পারে স্বচ্ছ জলরাশি নিয়ে প্রবাহিত পদ্মা নদীতে যন্ত্রদানবকুল বাঁধ নির্মাণের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। পদ্মা দেবী এই অপমান সইবে না। পদ্মার গতিবেগ রুখে দিয়ে জলাশয়কে নষ্ট করে দেওয়া দানবকুলের অভিলাষকে রুখে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে মেঘরাজ পবন ও অন্যান্য দেবতার সহায়তা প্রত্যাশা করেন তিনি। মেঘরাজ, পবন, ঝঞ্ঝা, তরঙ্গ সেনাদল নিয়ে পদ্মা দেবীর সহায়তায় এগিয়ে আসে মেঘদেবী। শুরু হয় তুমুল লড়াই। লড়াইয়ে বিধ্বস্ত হয়ে যায় দানবকুলের ষড়যন্ত্র, স্বর্গরাজ্য প্রবেশের সব প্রচেষ্টা হয়ে যায় ব্যর্থ। তবু মৃত্যুকাতর কণ্ঠে যন্ত্রদানব উচ্চারণ করে আমার মৃত্যু নেই দেবী, আমি আবার নতুন দেহ নিয়ে ফিরে আসব। পদ্মা দেবীও জবাব দেয়—জানি যন্ত্ররাজ, তুমি বারবার আসবে, কিন্তু প্রতিবারই তোমার এভাবে মৃত্যুদণ্ড নিয়ে ফিরে যেতে হবে।
শরতের সন্ধ্যায় নাট্যাঙ্গনের বিশিষ্ট অভিনেতা, অভিনেত্রী, কলাকুশলীদের নিয়ে আনন্দঘন পরিবেশে মঞ্চায়িত হয় নাটকটি। মঞ্চায়নের পর অসংখ্য দর্শকের মনেও স্থান করে নিয়েছে এই মঞ্চায়ন। সবাইকে দিয়েছে পূর্ণতা। আর ‘সেতু-বন্ধ’ নাটকটিতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন শারমিন সঞ্চিতা খানম পিয়া, সুরভী রায়, চন্দ্রিমা দেয়া, জান্নাতুল ফেরদৌস হ্যাপী, হাসিনা আক্তার নিপা, মেহরান সানজানা, মোনালিসা মোনা, জয়িতা মহলানবীশ, শিবলী সাদিক প্রমুখ।