চলমান ছাত্র আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে ‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ’-এর ব্যানারে রাজপথে নামেন চলচ্চিত্র, আলোকচিত্র, থিয়েটারসহ শোবিজের নানা অঙ্গনের কর্মীরা। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী বেলা ১১টায় জাতীয় সংসদ ভবনের সামনের রাস্তায় মানববন্ধন করার কথা থাকলেও ভিন্ন একটি দলের কর্মসূচি চলমান থাকায় সেখানে দাঁড়ানো সম্ভব হয়নি শিল্পীদের। কর্মসূচির অন্যতম আহ্বায়ক নির্মাতা আকরাম খান বলেন, ‘সংসদ ভবনের সামনে যাওয়ার পথে কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তারা আমাদের জানিয়েছেন, সেখানে আরও একটি কর্মসূচি চলছে। পুলিশ কর্মকর্তারা আমাদের কোনো প্রকার বাধা প্রদান করেননি, বরং অনুরোধ করেছেন, পাশেই ফার্মগেট এলাকায় আনন্দ সিনেমা হলের সামনে কর্মসূচি করার। আমরা তাই স্থান পরিবর্তন করে ফার্মগেট এলাকায় দাঁড়িয়েছি।’
স্থান নিয়ে জটিলতা কাটলেও বাধা হয়ে দাঁড়ায় বৃষ্টি। তবে কোনো বাধাই থামাতে পারেনি শিল্পীসমাজকে। বৃষ্টিতে ভিজে উপস্থিত শিল্পীরা ব্যানার হাতে স্লোগান দিতে দিতে এসে দাঁড়ান ফার্মগেট এলাকায়, রাজপথে। উপস্থিত সবাই ছাত্রদের এই আন্দোলনে ছাত্রদের ৯ দফা দাবির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে চলমান হত্যা, সহিংসতা, গণগ্রেপ্তার আর হয়রানি বন্ধ করার দাবি জানান। এ সময় উপস্থিতি ছিলেন অভিনেতা মামুনুর রশীদ, মোশাররফ করিম, ইরেশ যাকের, সিয়াম আহমেদ, আজমেরী হক বাঁধন, মোস্তফা মনওয়ার, সাবিলা নূর, রাফিয়াত রশীদ মিথিলা, নাজিয়া হক অর্ষা, শ্যামল মওলা, নির্মাতা নুরুল আলম আতিক, আকরাম খান, অমিতাভ রেজা চৌধুরী, মাতিয়া বানু শুকু, রেদওয়ান রনি, আশফাক নিপুণ, আদনান আল রাজিব, পিপলু আর খান, সৈয়দ আহমেদ শওকি প্রমুখ।
সমাবেশে অভিনেতা ও নাট্যজন মামুনুর রশীদ বলেন, ‘গত জুলাই মাসব্যাপী কী ঘটনাগুলো ঘটেছে, কত প্রাণ গেছে! এর মধ্যে শিশুরাও রয়েছে। এই বেদনা প্রকাশ করার ভাষা আমাদের নেই।’
অভিনেতা মোশাররফ করিম বলেন, ‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজের পক্ষ থেকে আমরা সকল মানুষের পক্ষে। আমাদের দেশে বর্তমানে যে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, তাতে আমাদের আর ঘরে বসে থাকার মতো অবস্থা নেই। আমরা শান্তি চাই। আমরা সকল নির্যাতন, গোলাগুলি, হত্যা, রক্ত—এগুলো আর দেখতে চাই না। এগুলোর বাইরে আমরা থাকতে চাই। আমরা শান্তি চাই।’
নির্মাতা অমিতাভ রেজা চৌধুরী বলেন, ‘আমরা সুবিধাবাদী, লুম্পেন, আমাদের দিয়ে হবে না, হবে এই নতুন প্রজন্ম দিয়ে। তারাই পরিবর্তন আনবে। নতুন প্রজন্মের ৯ দফা দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন এবং সংহতি জানাই। সংহতি জানাই এ দেশের সমস্ত তরুণদের যারা মাঠে এই মুহূর্তে আন্দোলন করছে। বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে প্রতিটি হত্যার বিচার করা হোক। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তাদেরকে ছেড়ে দিতে হবে।’
নির্মাতা ও প্রযোজক রেদওয়ান রনি বলেন, ‘ছাত্রদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে, তার প্রতিবাদ জানাই। সকল হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার হবে, সেটা যেন নিশ্চিত করা হয়। এই দাবি নিয়েই আমরা সবাই রাস্তায় দাঁড়িয়েছি।’
অভিনেত্রী মিথিলা বলেন, ‘এইভাবে শিশুদের, ছাত্রদের প্রাণ যেন না যায়। এটা খুব দুঃখজনক ঘটনা। যেকোনো বিবেকসম্পন্ন মানুষই চাইবে এ ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে। আমি নিজে শিক্ষার্থী, শিশুদের নিয়ে কাজ করেছি সারাটা জীবন। আমি চাই এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হোক।’
নির্মাতা আশফাক নিপুণ বলেন, ‘আমরা অনেক বছর ধরে যে ধরনের বৈষম্য দেখছি, দেখেও কথা বলতে পারছি না, সেই বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছাত্ররা কথা বলছে। আজকে ছাত্ররাই আমাদের শিক্ষক। ওদের কাছ থেকে শিখছি। আমরা ছাত্রদের দাবির সঙ্গে সংহতি জানাই। যাদেরকে আটক করা হয়েছে, তাদের দ্রুত মুক্তি দেওয়া হোক এবং ছাত্ররা কী বলতে চায় সেটা রাষ্ট্র শুনুক। এত দিন সবাই বলে এসেছে, এখন ছাত্ররা বলছে। দয়া করে তাদের কথা শুনুন। তারা রাষ্ট্রের শত্রু না। তারা একটি মানবিক সমাজ গড়তে চায়। আমরা সবাই একটি মানবিক সমাজে থাকতে চাই।’
অভিনেত্রী নাজিয়া হক অর্ষা বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের এত রক্ত, এত ক্ষত—এটা আমি মেনে নিতে পারছি না। এটা মোটেও প্রত্যাশিত নয়। তাদের দাবিগুলো নিয়ে যদি শুরুতে আলোচনা করা যেত, তাহলে এত মানুষ রক্তাক্ত হতো না। কোনো ধরনের আলোচনা না করে আচমকা কাউকে তুলে নিয়ে যাওয়া, গুলি করা। এটা হতে পারে না।’