রাজধানীর মোহাম্মদপুরের চন্দ্রিমা মডেল টাউন। মূল সড়ক থেকে গলির ভেতরে এগোতে থাকলে হঠাৎই একটি বাড়ির নিচতলা থেকে হয়তো ভেসে আসতে শুনবেন একক বা সমবেত কণ্ঠে কোনো গান বা কোনো সংলাপ। সেটা লক্ষ্য করে এগিয়ে গেলেই দেখবেন বাড়ির নিচতলায় গ্যারেজের মতো একটি স্থানে মহড়া করছে এক দল শিশু-কিশোর। মনে করার কোনো কারণ নেই যে, তারা এমনিতেই হল্লা করছে। একটু খোঁজ করলেই জানবেন যে, তারা মহড়া করছে; নাটকের। তারা একটি নাটকের দলের সদস্য; নাম টোকাই নাট্যদল, যার কান্ডারির নাম শেখ মেহেদী হাসান সাজু।
১৯৯৬ সাল, ছেলেধরার আতঙ্ক তখন সারা দেশে। একই সময়ে নাটকপাগল শেখ মেহেদী হাসান সাজু নিজের চাকরি হারিয়ে দিশেহারা। এমন সময় কিছু সুবিধাবঞ্চিত শিশুকে প্লাস্টিকের বোতল বাজিয়ে গান গাইতে দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলেন সাজু। খেয়াল করলেন, এই শিশুরা নির্দ্বিধায় মন খুলে গান গাইতে পারে, নাচতে পারে। নিজেই নিজের জীবিকার ব্যবস্থা করে। সাজুর মাথায় এল, এই শিশুদের সহজাত মেধাকে সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে যুক্ত করলে কেমন হয়? যে-ই চিন্তা সে-ই কাজ। কৌশলে মিশতে শুরু করলেন ভাগ্যাহত শিশুদের সঙ্গে। মহড়ার জায়গার খোঁজে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের কার্যালয়ে হাজির হলেন। সেখানে গিয়ে নিজের ইচ্ছার কথা জানালে মিলে যায় সম্মতি। শুরু হলো নাটকের মহড়া। দলের নাম ঠিক করা হলো ‘টোকাই’। সেই থেকে ‘টোকাই নাট্যদল’।
টোকাই নাট্যদল সম্পর্কে দলটির নাট্যপরিচালক শেখ মেহেদী হাসান সাজু বলেন, ‘অনেকেই ব্যঙ্গার্থে টোকাই বলে। প্রকৃতপক্ষে আমরা সবাই টোকাই। কেউ প্রতিষ্ঠা টোকাই, কেউ প্রতিপত্তি টোকাই, কেউবা অর্থ-সম্মান। টোকাই একটা নাম। রূপক অর্থে আমরা একটা সুস্থ সমাজ চাই। শিশুদের জন্য একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ, সুন্দর একটা বাংলাদেশ চাই। যেখানে কোনো শোষণ থাকবে না, কোনো বৈষম্য-বঞ্চনা থাকবে না। সে রকম একটা সমাজ টোকাচ্ছি আমরা।’