শুরুটা দুরন্ত ছিল। একেবারে সাঁই সাঁই বেগ যাকে বলে। কিন্তু লম্বা রিলে রেসে শুধু গতি থাকলেই হয় না। হতে হয় কৌশলী ও কুশলী। তা না হলে দেখা যায়, টান টান উত্তেজনার ম্যাচে ভালো শুরুর পরও কিছু ক্ষেত্রে চ্যাম্পিয়নের ট্রফি হাতছাড়া হয়ে যায়। দৌড়েও বিষয়টা তেমনই।
গভীর রাতে একটা দৌড়ের শুরু। দৌড় মানেই তো প্রতিযোগিতা। আজকালের দুনিয়ায় মূল লড়াই করতে হয় সেনাদের, কোচ বসে থাকেন আড়ালে। সেখান থেকে সুতো নাচে, নাচে পুতুল। তবে কখনো কখনো সেনাপতিকেও রথ থেকে নামতে হয় যুদ্ধক্ষেত্রে। সেনাদের পা হড়কানোর ভয় থাকলে, ব্যাটন নিয়ে এগোতে হয় সেনাপতিকেই।
এমনই এক গভীর রাতেই রুহুল আমিনকে সেনাপতি হয়ে যুদ্ধ জয়ে নামতে হয়। আপাত সমাধানও হয়। কিন্তু এরপরই ঘটতে থাকে একের পর এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা, যাতে কিনা সেনাপতিকেই মুহূর্তের জন্য বনে যেতে হয় অসহায় দর্শক। তাঁর সাজানো রণক্ষেত্র তখন পাগলা হাতির দাপটে ছন্নছাড়া হওয়ার জোগাড়! কিন্তু পাগলা হাতিকে বশে আনবে কে?
ঈদের দিনে স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম হইচই উপহার দিয়েছে ওয়েব সিরিজ ‘দৌড়’। রায়হান খানের পরিচালনায় এ সিরিজে মুখ্য চরিত্রে মূলত আছেন মোশাররফ করিম (রুহুল আমিন), ইন্তেখাব দিনার (আকমল) ও তারিক আনাম খান (হায়দার)। দৌড়ে জয়ী হওয়ার প্রতিযোগিতায় এঁরা সবাই আছেন। ৯ পর্বের সিরিজে ধীরে ধীরে উন্মোচিত হতে থাকে একেক চরিত্রের একেক রূপ। তাতে যেমন যখন-তখন মেজাজ হারানো ঠিকাদারের দেখা মেলে, তেমনই চূড়ান্ত বাজে ব্যবহারেও মেজাজ না হারানো একান্ত বাধ্যগত কর্মীকে পাওয়া যায়। আবার কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বের করে ফেলা সৎ পুলিশ অফিসারকে যে কোণঠাসা হয়ে থাকতে হয়, সেই বয়ানও উঠে আসে অবলীলায়। রাখঢাক ছাড়াই বড় কর্তাদের বলতে শোনা যায়, সত্য না পেলে সত্যের মুখোশধারী মিথ্যাই সই!
‘দৌড়’ ওয়েব সিরিজটির প্রথম পর্ব থেকেই উত্তেজনার পারদ ক্রমশ উঁচুতে উঠেছে। গল্পটা টান টান, তাতে সন্দেহ নেই। ওয়েব সিরিজে এমন ‘কী হয়, কী হয়’ ঘরানার গল্পেরই কদর বেশি। ‘দৌড়’ সেদিক থেকে সফল। গল্পের বিন্যাস এমনভাবেই করা যে, এক পর্বের শেষে পরবর্তী পর্বে যাওয়ার লোভ সামলানো কঠিন। কিন্তু তা করতে গিয়ে কি তালগোলও কিছুটা পাকেনি? কিছু কিছু ক্ষেত্রে অন্তত লজিক্যাল কনক্লুশন টানা যায়নি। হ্যাঁ, ফিকশনে সব সময় যুক্তি খুঁজতে নেই বটে। তবে সাত বছরের শিশু কতক্ষণ একটা বদ্ধ জায়গায় চেঁচামেচি না করে থাকবে, তার একটা আন্দাজ থাকা উচিত ছিল। উচিত ছিল গল্পে দেখানো সময়ের একটা বিশ্বাসযোগ্য ঘড়ি। আর কে না জানে, একটা সম্ভাবনাকে আফসোসে পরিণত করতে কিছু ছোট ছোট ভুলই যথেষ্ট।
আর তাতে যোগ্য সংগত দিয়েছেন ইন্তেখাব দিনার। পর্দায় একান্ত বাধ্যগত সর্বংসহা ‘ম্যানেজার’ চরিত্রের সার্থক রূপায়ণ ঘটিয়েছেন তিনি। আবার প্রয়োজনমতো অত্যন্ত মসৃণভাবে বদলে দিয়েছেন চরিত্রের গতিপথ। অন্যদিকে পুলিশ কর্মকর্তার চরিত্রে তারিক আনাম খান ছিলেন অনবদ্য। বড় কর্তা হিসেবে আজাদ আবুল কালাম ও একগুঁয়েমির কারণে উন্নতি না হওয়া অফিসার তারিক আনাম খানের পর্দার কথোপকথন সত্যিই উপভোগ্য।
দৌড়-এর আরেক সিজনের স্পষ্ট সংকেত প্রথম সিজনে দেওয়া হয়েছে। থাকবে আরও চমক, আরও শিহরণ। আশা রাখি, ভালো শুরুর সেখানে আর ছন্দপতন হবে না। আমরা নিশ্চয়ই সত্যিকারের ট্রফি জেতা ‘দৌড়’ দেখতে পাব তখন, রুহুল আমিনের ভাষায় ‘দাঁত উড়িয়ে’ দেওয়া দৌড়!