হোম > পরিবেশ

শৈবাল থেকে গাড়ি ও উড়োজাহাজের জ্বালানি, বিনিয়োগে এগিয়ে আসছে পেট্রোলিয়াম কোম্পানিগুলোও

অনলাইন ডেস্ক

পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য রক্ষায় শৈবাল জৈব জ্বালানির গুরুত্ব বাড়ছে। ছবি: ভিরিডোস

শৈবাল থেকে জৈব জ্বালানি উৎপাদন নিয়ে মার্কিন প্রতিষ্ঠান ভিরিডোসের সঙ্গে দীর্ঘসময় ধরে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছিল আমেরিকার বহুজাতিক তেল ও গ্যাস করপোরেশন এক্সন–মোবিল। গত বছর তারা এ গবেষণার অংশীদারত্ব ছেড়ে দিলে জ্বালানি খাতে আলোড়ন পড়ে যায়। এক্সন–মোবিল অর্থ উপার্জনের আরও ভালো সুযোগের সন্ধানে শৈবাল থেকে জৈব জ্বালানি উৎপাদন নিয়ে গবেষণা ছেড়ে দেয়।

অনেক জাতের শৈবাল জৈব জ্বালানির সমৃদ্ধ উৎস। এ কারণে শৈবাল থেকে জৈব জ্বালানি উৎপাদনে আগ্রহ বাড়ছে। তবে এ প্রক্রিয়া বেশ ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ। এ ছাড়া এর সংরক্ষণ ও দূষণসহ বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। তবুও বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, জৈব জ্বালানি (বায়োফুয়েল) খাতে শৈবালের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। জৈব জ্বালানি উৎপাদনের প্রচলিত উৎসগুলোর চেয়ে ১০ থেকে ১০০ গুণ বেশি জ্বালানি উৎপাদন করতে পারে শৈবাল।

প্রচলিত জৈব জ্বালানির ক্ষেত্রে আবাদযোগ্য জমির ব্যবহার নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে শৈবাল জৈব জ্বালানির ক্ষেত্রে সে সমস্যা নেই। যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক হিসাবে দেখা যায়, ২০২৩–২৪ মৌসুমে যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত ৩৭ শতাংশ ভুট্টা ইথানল শিল্পে ব্যবহৃত হয়েছে।

২০১৮ সালে যখন এক্সন–মোবিল শৈবাল জৈব জ্বালানি নিয়ে কাজ করছিল, তখন প্রচলিত জ্বালানি উৎসগুলোর বদলে শৈবাল চাষে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিল। এই জ্বালানি উৎসের প্রয়োজনীয়তার পেছনে ভূমি সংকটসহ অনেক কারণ তুলে ধরেছিল তারা। কোম্পানিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ভুট্টাসহ অন্যান্য প্রচলিত জ্বালানি উৎসের ফসলগুলোর মতো শৈবাল চাষে মিঠা পানির প্রয়োজন হয় না। সাগর বা অন্যান্য লবণাক্ত পানিতে শৈবাল চাষ করা যায়। এতে মিঠা পানির ক্রমবর্ধমান সংকট মোকাবিলায় সহায়ক হয়।

এক্সন–মোবিল আরও জানায়, শৈবাল কার্বন শোষণ করে। ভুট্টা থেকে উৎপন্ন ইথানলের চেয়ে এটি কম গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন করে। এ ছাড়া ভুট্টা থেকে ইথানল উৎপাদনে চাষাবাদ, সার এবং পরিবহনসহ আরও অন্যান্য খাতে জ্বালানি ব্যয় করতে হয়।

শুরুতে এত ইতিবাচক প্রচারণা চালালেও এক্সন–মোবিল ২০২৩ সালে শৈবাল জৈব জ্বালানি নিয়ে গবেষণা থেকে সরে দাঁড়ায়।

তবে মাইক্রোঅ্যালজি নিয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান ভিরিডোস এ নিয়ে কাজ বন্ধ করেনি। এখন ইউনাইটেড এয়ারলাইনস ভেঞ্চার্স, শেভরন ও ব্রেকথ্রু এনার্জি ভেঞ্চার্সের মতো বড় কোম্পানিগুলো এই খাতে প্রাথমিকভাবে ২ কোটি ৫ লাখ ডলার বিনিয়োগ করেছে।

পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য রক্ষায় শৈবাল জৈব জ্বালানির গুরুত্ব বাড়ছে। ছবি: ভিরিডোস

এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ৫০ লাখ ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়ে ইউনাইটেড এয়ারলাইনস জানায়, ভিরিডোস সাগরে শৈবাল চাষ করে। এ ছাড়া উর্বর জমি ও মিঠাপানির সংকট রয়েছে এমন এলাকাতেও তারা শৈবাল চাষ করতে সক্ষম। ভিরিডোসের শৈবালগুলো উচ্চ জ্বালানি সমৃদ্ধ হয়ে থাকে।

শৈবাল জৈব জ্বালানি নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে কাজও বাড়ছে। গত ১৫ নভেম্বর এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শৈবাল জৈব জ্বালানির ভবিষ্যৎ এবং ‘বড় প্রবৃদ্ধি’র সম্ভাবনা তুলে ধরে আন্তর্জাতিক বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিসার্চ অ্যান্ড মার্কেটস।

প্রতিষ্ঠানটি জানায়, জৈব জ্বালানির উৎস জোয়ার, ভুট্টা ও ভুট্টার অবশিষ্টাংশের চেয়ে শৈবাল প্রায় ২০ গুণ বেশি জ্বালানি উৎপাদন করতে পারে। শৈবাল জৈব জ্বালানি বাজার থেকে ২০২২ সালে ৬০৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার আয় হয়েছে। ২০২৯ সালের মধ্যে এই খাতের বাৎসরিক ক্রমযোজিত প্রবৃদ্ধির হার ৯ দশমিক ০৮ শতাংশ হবে এবং বাজারের আকার দাঁড়াবে ১ হাজার ১১৫ কোটি ২০ লাখ ডলার।

উত্তর আমেরিকায় জ্বালানি সংকট এবং গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানোর প্রয়োজন এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎস ব্যবহার বাড়াতে শৈবাল জৈব জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোর আগ্রহ বাড়ছে বলে জানিয়েছে রিসার্চ অ্যান্ড মার্কেটস।

এরই মধ্যে আইডাহো ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি, কোল্ড কারেন্ট কেল্প, জিই ভেরনোভা, রটগার্স বিশ্ববিদ্যালয় ও সাউথ ডাকোটা স্কুল অব মাইনস অ্যান্ড টেকনোলজির উদ্যোগে শৈবাল থেকে উড়োজাহাজের জ্বালানির উৎপাদনের একটি প্রকল্পও চলমান। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য, ক্যাটালাইটিক হাইড্রোথার্মাল লিকুইফেকশন প্রযুক্তি উন্নত করে সাগরের শৈবাল থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি উৎপাদনে প্রয়োগ করা, যা পরবর্তীতে উড়োজাহাজের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হবে।

এ ছাড়া কানেকটিকাট বিশ্ববিদ্যালয়ও আইডাহো ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির সঙ্গে স্থানীয়ভাবে চাষ করা শৈবাল থেকে অ্যারেস্টেড অ্যানেরোবিক ডাইজেশন (এএডি) সিস্টেম ব্যবহার করে উড়োজাহাজের জ্বালানি উৎপাদনের যৌথ প্রকল্পে যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে।

ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণের পাশাপাশি, পরিবেশগত এবং জনস্বাস্থ্য রক্ষায়ও শৈবাল জৈব জ্বালানি গুরুত্ব পাচ্ছে। ক্যারিবিয়ান সাগরে ভাসমান শৈবাল পচে গিয়ে যে দূষণের সৃষ্টি হয় তা কমাতেও এই জ্বালানি উৎপাদনে নজর দেওয়া হচ্ছে। মার্কিন জ্বালানি বিভাগ জানায়, শৈবাল জৈব জ্বালানির মাধ্যমে গ্রিনহাউস গ্যাস (জিএইচজি) নির্গমন ৫০ শতাংশের বেশি কমানো সম্ভব হবে।

তথ্যসূত্র: ক্লিনটেকনিকা

পরিবেশ ধ্বংসের মূলেবাজার অর্থনীতি

ঢাকার বাতাস আজ ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’, ভয়াবহ দূষণ করাচিতে

কুতুবদিয়া দ্বীপে নতুনভাবে বনায়নের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে: পরিবেশ উপদেষ্টা

জলবায়ু পরিবর্তন: ২০৭০-৯০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক জিডিপি কমবে ৫০ শতাংশ

ঢাকার বাতাস আজ ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’, শীর্ষে তাসখন্দ

কামরাঙ্গীরচরে তিন পলিথিন কারখানা সিলগালা, জব্দ ১০০ টন

হাতিরঝিল ও পান্থকুঞ্জ পার্ক রক্ষায় নাগরিক সংলাপ

বায়ুদূষণ রোধে অভিযান: ২৪ লাখ টাকা জরিমানা

ঢাকার বাতাস খুবই অস্বাস্থ্যকর, মাস্ক পরার পরামর্শ আবহাওয়া অধিদপ্তরের

দাবানলের জন্য জলবায়ু পরিবর্তন কতটা দায়ী

সেকশন