নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
বায়ুদূষণ দিনে দিনে প্রকট হচ্ছে। শুধু বায়ুদূষণের কারণে দেশে মানুষের গড় আয়ু কমেছে পাঁচ বছর। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় এ তথ্য জানা গেছে। অবশ্য আগের তুলনায় বাংলাদেশে বায়ুদূষণ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি ঘটেছে। গত বছর একই প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় জানা গিয়েছিল, দেশে বায়ুদূষণের কারণে গড় আয়ু কমেছে প্রায় সাত বছর।
গবেষণাটি করেছে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশ্বিক বায়ুদূষণ পর্যবেক্ষণ সংস্থা এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউট। ‘এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি গতকাল বুধবার প্রকাশ করা হয়েছে। এই প্রতিবেদনে ২০২২ সালের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে জানানো হয়, বায়ুদূষণের পাশাপাশি দেশে শিশুর পুষ্টিহীনতার কারণে দেড় বছর এবং তামাক সেবনে দুই বছর করে গড় আয়ু কমছে।
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, বাংলাদেশের বাতাসে ক্ষতিকর বস্তুকণা পিএম-২.৫ পাওয়া গেছে প্রতি ঘনমিটারে ৫৪ মাইক্রোগ্রাম, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে ১২ গুণ বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মাত্রা অনুযায়ী বাতাসে কিছুতেই প্রতি ঘনমিটারে পাঁচ মাইক্রোগ্রামের বেশি পিএম-২.৫ বস্তুকণা থাকা উচিত নয়। আর দেশের পরিবেশ অধিদপ্তর বাতাসে পিএম-২.৫-এর গ্রহণযোগ্য মাত্রা নির্ধারণ করেছে প্রতি ঘনমিটারে ৩৫ মাইক্রোগ্রাম।
প্রতিবেদনে গাজীপুর ও নরসিংদীকে সবচেয়ে বেশি দূষিত জেলা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই দুই জেলায় বায়ুদূষণের কারণে গড় আয়ু কমছে ৬ বছর। এদিকে রাজধানীতে পিএম-২.৫-এর উপস্থিতি রয়েছে ৬১ দশমিক ৭ শতাংশ। এই শহরের বাসিন্দাদের বায়ুদূষণের কারণে গড় আয়ু কমছে ৫ দশমিক ৬ বছর। প্রতিবেদনে বলা হয়, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, চাঁদপুরে ২০২১ সালের তুলনায় বায়ুদূষণ কমেছে ২০ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের ৯৬ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ বছরজুড়ে দূষিত বায়ুর মধ্যে বসবাস করছে। সবচেয়ে কম দূষিত সিলেট শহরও বৈশ্বিক মাত্রার চেয়ে ৭ গুণ বেশি দূষিত।
প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বায়ুদূষণ কিছুটা কমার কথা উল্লেখ করা হলেও কী কারণে কমেছে তা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি। ২০২২ সালে জলবায়ু পরিস্থিতি লা লিনার প্রভাবে গড়মাত্রার চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত বায়ুদূষণ কমার কারণ হতে পারে বলে মন্তব্য করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের বায়ুমান শাখার পরিচালক জিয়াউল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা বিশ্বব্যাংকের কারিগরি সহায়তায় একটা জাতীয় বায়ুমান ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার খসড়া চূড়ান্ত করেছি। এটার মধ্য দিয়ে বায়ুদূষণের সব উৎসকে যাতে একটা রেগুলেশন ও পর্যবেক্ষণে নিয়ে আসা যায়, আমরা সে চেষ্টা করব।’ তিনি বলেন, ‘প্রথাগত ইটভাটা বায়ুদূষণের একটা অন্যতম উৎস। আমরা এগুলো বন্ধ করে ব্লক ইট উৎপাদন ও সরকারি উন্নয়ন কাজে ব্লক ইট ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব দিয়েছি। পাশাপাশি পুরোনো যানবাহন ও ঢাকার চারপাশের এলাকাগুলোয় রান্নায় লাকড়ির ব্যবহার কমাতে একটি ক্লিন কুকিং প্রজেক্ট হাতে নেব।’ এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে বায়ুদূষণ অনেক কমে আসবে বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা।