Ajker Patrika
হোম > পরিবেশ

কংক্রিটের নগরগুলো ‘আগ্নেয়গিরির লাভা’ হয়ে উঠছে যে কারণে

অনলাইন ডেস্ক

কংক্রিটের নগরগুলো ‘আগ্নেয়গিরির লাভা’ হয়ে উঠছে যে কারণে

যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের ফিনিক্সের বাসিন্দারা বেশ ভোগান্তির মধ্যেই দিনাতিপাত করছেন। ঘরের বাইরের যা তাপমাত্রা তার চেয়ে সড়ক, ঘরের দেয়াল, ছাদ কয়েকগুণ বেশি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। কংক্রিটের নগরে ঘরের মেঝে যেন হয়ে উঠেছে আগ্নেয়গিরির লাভা। ফলে হাঁটাচলা তো বটেই, কোথাও বসা কিংবা হাত দেওয়াও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে।

সম্প্রতি শহরটির চিকিৎসকেরা এমন বেশ কয়েকজন রোগীর চিকিৎসা করেছেন, যারা কিনা তাপমাত্রা বুঝতে না পারার কারণে দেয়াল ও খোলা আকাশের নিচে থাকা স্টিল ও কংক্রিটের সামগ্রী স্পর্শ করে শরীরের কিছু অংশ পুড়িয়ে ফেলেছে। 

বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের ফিনিক্সে অবস্থিত অ্যারিজোনা বার্ন সেন্টারের পরিচালক ড. কেভিন ফস্টার। গবেষণা করতে গিয়ে তিনি বিচিত্র অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন। তিনি দেখতে পান, পরিবেশে যে তাপমাত্রা বিরাজ করে, একই সময়ে তার চেয়ে অনেক বেশি তাপমাত্রা বিরাজ করে কংক্রিট নির্মিত কোনো কাঠামোতে। 

বিশ্বজুড়ে তাপমাত্রা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে সিমেন্ট ও কংক্রিট নির্মিত স্থাপনা। একই সঙ্গে তা শহুরে মানুষের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিও বাড়াচ্ছে মারাত্মকভাবে। সিমেন্ট ও কংক্রিটের স্থাপনার কারণেই একটি শহরের তাপমাত্রা এত বেশি বেড়ে যাচ্ছে যে, বিজ্ঞানীরা এই অবস্থাকে ‘উত্তপ্ত নগরদ্বীপ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। সম্প্রতি বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক নিবন্ধে বিষয়টি আলোচনা করা হয়েছে। 

কোনো স্থানের তাপমাত্রা পরিমাপ করার সময় মূলত সেখানকার ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১ মিটার ওপর পর্যন্ত বায়ুর অবস্থা বিবেচনা করা হয়। সে হিসেবে যখন কোনো স্থানের বায়ুর তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, একই সময়ে সেই স্থানের কংক্রিট বা অ্যাসফল্ট পৃষ্ঠের তাপমাত্রা হতে পারে ৬৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত, যা কিনা সহজেই কোনো মানুষের ত্বক ঝলসে দিতে পারে। কিন্তু নতুন গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই তাপমাত্রার ব্যবধানটা আরও বেশি হতে পারে। 
 
এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের ফিনিক্সে অবস্থিত অ্যারিজোনা বার্ন সেন্টারের পরিচালক ড. কেভিন ফস্টারের গবেষণা বলছে, একটি উত্তপ্ত দিনে অ্যাসফল্ট ও কংক্রিটের তাপমাত্রা বেড়ে ৮২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। 

সাধারণত তাপপ্রবাহের সময় বিভিন্ন পৃষ্ঠ সূর্যের আলো থেকে আসা তাপের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ শোষণ করে নেয়। পরে সেই তাপ আশপাশের তাপমাত্রা বাড়ানোর ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে বিভিন্ন পৃষ্ঠ শোষণ করা তাপ পরে বাতাসে অবমুক্ত করে সামগ্রিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে।

ঘাস বা মাটির মতো কিছু ভেদযোগ্য ও আর্দ্র পৃষ্ঠতল কম তাপ শোষণ করে। বিপরীতে অন্যান্য নির্মাণসামগ্রী যেমন অ্যাসফল্ট বা কংক্রিট সূর্যের শক্তির ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত শোষণ করতে সক্ষম। বিষয়টির এখানেই শেষ নয় বরং এই তাপ পরে আবার বায়ুমণ্ডলে ফিরে আসে। 

দ্রুত নগরায়ণ আরও দ্রুত সেই স্থানের তাপমাত্রার প্রকৃতি বদলে দিচ্ছে। যেমন, সাধারণ উন্মুক্ত ভূপৃষ্ঠকে বড় বড় সব দালান ও অ্যাসফল্টের রাস্তা দিয়ে ঢেকে ফেলা হচ্ছে। এর ফলে খোলা বা গ্রামীণ কোনো এলাকার তুলনায় একটি শহর অনেক বেশি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে; যেন শহরটি বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপ। বিষয়টি মাথায় নিয়েই বিজ্ঞানীরা এ ধরনের পরিস্থিতির নাম দিয়েছেন ‘উত্তপ্ত নগরদ্বীপ’। এই ‘উত্তপ্ত নগরদ্বীপের’ তাপমাত্রা নগরের ঠিক বাইরের কোনো একটি গ্রামীণ এলাকার তুলনায় অনেক বেশি। 

ইউএস এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সির মতে, ১০ লাখ বা তার বেশি মানুষের বসবাস রয়েছে এমন একটি শহরের বার্ষিক গড় তাপমাত্রা তার আশপাশের (গ্রামীণ বা উপশহর) এলাকার তুলনায় ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও বেশি হতে পারে। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাপমাত্রার এই পার্থক্য গ্রামীণ এলাকার তুলনায় ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হতে পারে। 

শহরগুলোর ‘উত্তপ্ত নগরদ্বীপ’ হয়ে ওঠার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। সবুজ এলাকা এবং গাছপালা বাষ্পীভবন (প্রস্বেদন) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই প্রক্রিয়ায় গাছপালা বাতাসে জলীয়বাষ্প ছেড়ে দিয়ে পরিবেশের তাপমাত্রা কমাতে সহায়তা করে।

বিপরীতে শহরের যে গঠন, তার কারণেই প্রচুর পরিমাণ তাপ আটকে দেয়। এ ছাড়া শহরের কংক্রিটের পৃষ্ঠ স্বাভাবিক ভূপৃষ্ঠের তুলনায় অনেক বেশি তাপ শোষণ করে এবং সঞ্চয় করে, যার ফলে আশপাশের তাপমাত্রা আরও বাড়ে। শহরের গাঠনিক বৈশিষ্ট্য—সূর্য থেকে আগত তাপের প্রতিফলন, তাপ নির্গমন এবং তাপ ধারণক্ষমতার কারণে তা ‘উত্তপ্ত নগরদ্বীপ’ হিসেবে পরিণত হওয়ার জন্য আদর্শ বলে বিবেচিত হয়।

ভূপৃষ্ঠের তাপীয় অবস্থা নজরদারি করা স্যাটেলাইটগুলোর চিত্র থেকে দেখা গেছে যে, এলাকার গাঠনিক বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে শহর ও গ্রামীণ এলাকার তাপমাত্রার পার্থক্য স্পষ্ট। যেমন শহরের পার্কগুলোর যে তাপমাত্রা তা শহরের অন্যান্য স্থানের চেয়ে বেশ কম দেখায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা গ্রামীণ এলাকার তাপমাত্রার কাছাকাছিও পৌঁছে যায়। আর তাই প্রচণ্ড গরমের হাত থেকে বাঁচতে বিজ্ঞানীরা বলছেন, শহরে ‘পকেট পার্ক’ বা ছোট আকারের পার্ক ভালো কাজে দিতে পারে।

শ্রবণস্বাস্থ্য রক্ষায় শব্দদূষণ রোধ জরুরি: পরিবেশ উপদেষ্টা

বায়ুমানের অবনতি, দূষিত শহর তালিকায় শীর্ষে ঢাকা

মার্কিন কৃষিতে রাসায়নিক সারের বিকল্প হয়ে উঠছে মানবমূত্র, বাড়ছে উৎপাদন

কমবে রাতের তাপমাত্রা, বৃষ্টি হতে পারে যেখানে

প্রথম রোজায় ঢাকার বায়ুদূষণ কমেছে, শীর্ষে ইয়াঙ্গুন

প্রথম রমজানে বৃষ্টির আভাস, আজ যেমন থাকবে আবহাওয়া

আজ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বায়ুদূষণের শহর ঢাকা, শীর্ষে উঠে এল বেইজিং

জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে বিপন্নতায় মানুষ ও প্রকৃতি

পরিবেশের সুরক্ষা ছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়: সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

ঢাকার বাতাস আজ ‘অস্বাস্থ্যকর’, শীর্ষে দিল্লি