ব্যতিক্রমী পদ্ধতিতে সন্তান পালনের জন্য পরিচিত একটি বিপন্ন প্রজাতির পুরুষ ব্যাঙেরা সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে ৩৩টি ক্ষুদ্র ব্যাঙাচির জন্ম দিয়েছে। ভয়ংকর একটি ছত্রাকজনিত রোগ থেকে এই প্রজাতিটিকে রক্ষা করতে বিজ্ঞানীরা এই উদ্যোগ নিয়েছেন।
সোমবার বিবিসি জানিয়েছে, ডারউইনের ব্যাঙ নামে পরিচিত এই ব্যাঙের ব্যাঙাচিগুলো তাদের বাবার স্বরযন্ত্রের থলির ভেতরে বেড়ে ওঠে এবং পরিণত হয়ে বাবার মুখ দিয়েই বেরিয়ে আসে।
এই অনন্য বাবারা চিলির দক্ষিণ উপকূলের দূরবর্তী একটি দ্বীপ থেকে লন্ডন চিড়িয়াখানায় পৌঁছাতে নৌকা, বিমান ও গাড়িতে চড়ে ৭ হাজার মাইল পথ অতিক্রম করেছে।
চার্লস ডারউইন প্রথমবারের মতো এই ব্যাঙ প্রজাতির সন্ধান দেন ১৮৩৪ সালে। সংরক্ষণবিদেরা মনে করেন, সংরক্ষিত পরিবেশে এই ব্যাঙদের পালন করলে, বর্তমানে বিপন্নপ্রায় এই প্রজাতির প্রাকৃতিক আবাসস্থল নিরাপদ করার সময় পাওয়া যাবে।
জানা গেছে, অ্যাম্ফিবিয়ান ছত্রাকজনিত রোগ কাইট্রিডিওমাইকোসিস অন্তত ৫০০ প্রজাতির উভচর প্রাণীকে আক্রান্ত করেছে। এই রোগটিকে অন্যতম ধ্বংসাত্মক সংক্রামক রোগ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
২০২৩ সালে দক্ষিণ চিলির পার্ক তান্তাউকো অরণ্যে ডারউইনের ব্যাঙের দেহে প্রাণঘাতী ওই কাইট্রিড ছত্রাকের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়। এই ব্যাঙেরা অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং মাত্র এক বছরের মধ্যেই এই প্রজাতির ৯০ ভাগ বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
তবে গত অক্টোবরে লন্ডন চিড়িয়াখানার সংরক্ষণবিদেরা ছত্রাকমুক্ত ব্যাঙের একটি দল খুঁজে পান। কাজটি ছিল চ্যালেঞ্জিং। কারণ এই ব্যাঙেরা খুবই ছোট এবং মসযুক্ত আবাসস্থলের সঙ্গে মিশে থাকে। তবে শেষ পর্যন্ত ব্যাঙগুলোকে বিশেষভাবে তৈরি জলবায়ু-নিয়ন্ত্রিত বাক্সে করে দীর্ঘ ও জটিল পথে পরিবহন করে লন্ডনে নিয়ে আসা হয়।
এই প্রজাতির প্রতিটি পূর্ণবয়স্ক পুরুষ ব্যাঙের ওজন ২ গ্রামেরও কম এবং দৈর্ঘ্য ৩ সেন্টিমিটারেরও কম। স্বরযন্ত্রের থলির ভেতরেই সন্তানদের রেখে লালন পালন করে এরা।
স্যার ডেভিড অ্যাটেনবরোর প্রকৃতি বিষয়ক সিরিজ ‘লাইফ অন আর্থ’-এর একটি ক্লিপে দেখা যাবে, কীভাবে দক্ষিণ ডারউইন ব্যাঙের ছানা জন্ম নেয়।
লন্ডন-ভিত্তিক ‘ইনস্টিটিউট অব জুলজি’-এর গবেষক আন্দ্রেস ভ্যালেনজুয়েলা সানচেজ বলেন, ‘এই ব্যাঙগুলো শুধুমাত্র তাদের প্রজাতির ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং কাইট্রিড ছত্রাক প্রতিরোধ এবং বৈশ্বিক উভচর প্রাণীদের রক্ষায় আমাদের গবেষণার জন্যও অপরিহার্য।’