অনলাইন ডেস্ক
গালফ অব থাইল্যান্ডের পূর্ব উপকূলে প্রবাল প্রাচীর থেকে শুরু করে মাছ পর্যন্ত বিভিন্ন জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ সংকটের মুখে পড়েছে। এ মাসে ওই অঞ্চলে তাপপ্রবাহের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছানোয় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন বিজ্ঞানী ও স্থানীয় উপকারভোগীরা।
প্রায় পাঁচ মিটার (১৬ ফুট) পানির নিচে অবস্থিত একসময়কার বর্ণিল প্রবাল এখন প্রবাল ব্লিচিং নামে পরিচিত একটি প্রক্রিয়ার কারণে সাদা হয়ে গেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, পানির উচ্চ তাপমাত্রার কারণে এদের স্বাস্থ্যের যে অবনতি হচ্ছে, তার একটি লক্ষণ এটি।
এসব তথ্য জানা যায় সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে।
গালফ অব থাইল্যান্ডের পূর্ব অংশে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা এই মাসের শুরুর দিকে ৩২.৭৩° সেলসিয়াসে (৯০.৯১° ফারেনহাইট) এ পৌঁছেছে। পানির নিচের তাপমাত্রা আরও কিছুটা বেশি। এটা ৩৩° সেলসিয়াসের কাছাকাছি।
উপসাগরীয় উপকূলে একটা ডাইভ শেষে থাইল্যান্ডের ডিপার্টমেন্ট অব মেরিন অ্যান্ড কোস্টাল রিসোর্সেসের (ডিএমসিআর) সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী ললিতা পুটচিম বলেন, ‘একটিও স্বাস্থ্যবান প্রবাল খুঁজে পাইনি আমি। প্রায় সবগুলোতেই সাদাটে ভাব ধরেছে। খুব অল্প পরিমাণ প্রবালই আছে, যেগুলো আক্রান্ত হয়নি।’
ট্রাট দ্বীপপুঞ্জে ৬৬টির বেশি দ্বীপ রয়েছে, প্রবাল প্রাচীর আছে ২৮.৪ বর্গকিলোমিটারের বেশি। ললিতা দেখেছেন, ৩০ শতাংশের মতো প্রবাল ব্লিচিং বা সাদাটে হয়ে গেছে এবং ৫ শতাংশ ইতিমধ্যেই মারা গেছে।
‘জলের তাপমাত্রা না কমলে আরও প্রবাল মারা যাবে,’ বলেন ললিতা, ‘এটি শুধু বিশ্ব উষ্ণায়ন নয় বরং গ্লোবাল বয়েলিং’।
তাপমাত্রার বৃদ্ধি জলের অন্য প্রাণী ও উদ্ভিদের পাশাপাশি স্থানীয় জেলেদের জীবনযাত্রায়ও প্রভাব ফেলছে। এদের একজন সম্মেই সিংসুরা।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রতিনিয়ত সি ফুড সংগ্রহের হার কমছে। সামুদ্রিক খাবারের পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। আগে সিংসুরা ১০ হাজার বাথ (২৭৫ ডলার) পর্যন্ত উপার্জন করতে সক্ষম হতেন। কিন্তু এখন কখনো কখনো তিনি খালি হাতে ফিরে আসেন।
‘এখন অবস্থা ভালো নয়। আবহাওয়া আগের মতো নেই।’ হতাশা প্রকাশ করেন সিংসারা।
প্রবালপ্রাচীর সামুদ্রিক প্রাণীদের জন্য খাবার ও আবাসস্থল হিসেবে কাজ করে। এর পাশাপাশি উপকূলীয় ক্ষয় রোধকারী প্রাকৃতিক বাধা হিসেবে একে পরিচয় করিয়ে দেন বিজ্ঞানীরা।
বুরাফা ইউনিভার্সিটির সামুদ্রিক প্রযুক্তি অনুষদের ডিন সারাউত সিরিওয়ং বলেন, ‘যদি ব্লিচিংয়ের ফলে সামুদ্রিক প্রাণীর পরিমাণ হ্রাস পায়, তাহলে জেলেদের মাছ ধরার জন্য আরও বেশি খরচ করতে হবে। এতে বিক্রয়মূল্য বেড়ে যেতে পারে।’
‘এটি (কোরাল ব্লিচিং) খাদ্য নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করার পাশাপাশি আয়ের স্থিতিশীলতাও ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে।’ বলেন তিনি।