বাঘ শিকার ও পাচারে বিশ্বের মধ্যে অন্যতম শীর্ষ দেশ হিসেবে সামনে এসেছে বাংলাদেশের নাম। যদিও বাংলাদেশ সরকারর বারবার দাবি করেছে যে, তারা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছে তারপরও দেশে বাঘ শিকারের হার খুব একটা কমেনি। গতকাল শুক্রবার প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গবেষণাটি করেছে বিভিন্ন প্রজাতির বাঘ নিয়ে কাজ করা সংগঠন প্যানথেরা এবং চাইনিজ একাডেমি অব সায়েন্স যৌথভাবে এই গবেষণা করেছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, সুন্দরবনে শিকার করা বাঘগুলোর বিভিন্ন অংশ বিশ্বের ১৫টি দেশে পাচার করা হয়। এর মধ্যে ভারত এবং চীনেই সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য গন্তব্য।
ভারত এবং বাংলাদেশ উভয় দেশে বিস্তৃত সুন্দরবনে সাধারণত ‘রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার’ প্রজাতির বাঘের দেখা মেলে। এই সুন্দরবনেই বিশ্বের অধিকাংশ রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের বসবাস। কিন্তু আশঙ্কার বিষয় হলো, বাংলাদেশ থেকে এখনো বাঘ শিকারের পর সেগুলোর বিভিন্ন অংশ পাচার কর হয় বিদেশে।
বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর অন্তত ২০০০ কোটি ডলারের পশুর চামড়া, হাড় এবং মাংসের কালোবাজারি হয়ে থাকে। এই তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশেরও নাম। এ বিষয়ে প্যানথেরা এবং চাইনিজ একাডেমি অব সায়েন্সের গবেষণার গবেষক রব পিকলস বলেছেন, ‘আমরা আগে যতটা ভেবেছিলাম বাঘ পাচারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ তার চেয়েও অনেক বেশি বড় ভূমিকা পালন করে।’
২০১৬ সালে বাংলাদেশ সরকার সুন্দরবনকেন্দ্রিক পাচারকারী চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান শুরুর আগে, এই অঞ্চলে পাচারের ব্যবসা ছিল খুবই আকর্ষণীয়। অভিযান শুরুর পর অন্তত ১১৭ পাচারকারীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। কয়েক শ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং অনেকে আবার সরকারের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় আত্মসমর্পণ করে জীবন বাঁচিয়েছেন। ফলে কিছু সময়ের জন্য একটি শূন্যতা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু কিছুদিন পরেই অন্তত ৩০টি বিশেষজ্ঞ বাঘ পাচার সিন্ডিকেট এবং অন্যান্য পাচারকারীরা সেই শূন্যতা পূরণ করেছে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, সিন্ডিকেটের লোকজন ব্যবসায়ের আড়ালে নিজস্ব লজিস্টিক কোম্পানির মাধ্যমে পাচার পরিচালনা করে থাকে এবং কিছু ক্ষেত্রে বন্যপ্রাণী ব্যবসার লাইসেন্সের মাধ্যমে তাদের কার্যকলাপ গোপন করে। আন্তর্জাতিক চক্রের বাইরে দেশের অভ্যন্তরেও বাঘের বিভিন্ন অংশের চাহিদা বেড়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে গবেষণায়।
তবে গবেষণার বিষয়বস্তুকে বিতর্কিত বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশ সরকারের বিভাগীয় ফরেস্ট অফিসার আবু নাসের মহসিন হোসেন। তিনি বলেন, সরকারের অভিযান অবৈধ পাচার বাণিজ্যকে স্থবির করে দিয়েছে। তিনি এএফপিকে বলেন, ‘আমরা সুন্দরবনে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিয়েছি। গত পাঁচ বছরে কোনো বাঘ মারা যায়নি। বাঘের সংখ্যাও বেড়েছে।’
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে প্রকাশিত একটি সরকারি বাঘশুমারি অনুসারে—সুন্দরবনের বাংলাদেশের অংশে মাত্র ১১৪টি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার বাস করে। যা চার বছর আগের সংখ্যা থেকে সামান্য বেশি। আগামী বছর নতুন করে বাঘের সংখ্যার হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করা হবে।