হোম > পরিবেশ

মানিকছড়ির রাবার কারখানার বর্জ্যে নষ্ট হচ্ছে খেত-খামার

হিমেল চাকমা, রাঙামাটি

ফুরোমোন পাহাড়ের বুক চিরে নেমে আসা মানিকছড়ি ছড়ার ওপর এক সময় নির্ভর করত আশপাশের মানুষ। সুপেয় পানি পানসহ দৈনন্দিন ধোয়া-মোছার কাজ ও জমিতে সেচ দেওয়া হতো এ ছড়ার পানি দিয়ে। স্বচ্ছ জলাধারার ছড়াটি দূষণে এখন অস্তিত্ব সংকটে। রাঙামাটির মানিকছড়ির একটি রাবার কারখানার বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে ছড়ার পানি। 

কারখানার দূষিত পানি সরাসরি ফেলা হচ্ছে ছড়ায়। এতে মরছে মাছসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণী। পানি সংস্পর্শে হচ্ছে চর্মরোগ। জমিতে সেচ দিলে মরে যাচ্ছে ধান ও সবজি খেত। ধানগাছ মরে যাওয়ায় জমিতে সেচ দেওয়া বন্ধ রেখেছেন কৃষকেরা। 

যে ছড়ায় দূষিত পানি ফেলা হচ্ছে সেটি ফুরোমোন পাহাড় থেকে নেমে এসে সাপছড়ি, মানিকছড়ি, দেপ্পোয়াছড়ি মুখ, গাত্তছড়া, আমছড়ি, কার্বোপাড়া রংঙ্গ্যাছড়ি ওগেয়াছড়ি, আদর্শ গ্রাম, আজাছড়ি মারমা পাড়া হয়ে কাপ্তাই হ্রদে মিশে গেছে। শুষ্ক মৌসুমে এ ছড়ার ওপর নির্ভর করতে হয় এসব গ্রামের প্রায় ৩ হাজার মানুষকে। ভূগর্ভে পাথর থাকার কারণে এসব এলাকায় স্থাপন করা হয় না গভীর নলকূপ। ফলে ছড়ার পানি পান করাসহ গোসলে ব্যবহার করেন তাঁরা। 

মানিকছড়ি শিল্পনগরী এলাকায় মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, ছড়ায় আগে মানুষ গোসল করত। উৎপাদিত সবজি ধুয়ে বাজারে নিত। এখন এ ছড়ার পানি ব্যবহারই করা যাচ্ছে না। পানি ধরলে চুলকানিসহ চর্মরোগ হচ্ছে। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, ছড়ার পানি সাদা হয়ে দুধের মতো রং ধারণ করেছে। দুই পাড়ে ধানের জমিতে সেচ দেওয়া বন্ধ রেখেছেন কৃষকেরা। 

দোপ্পোছড়ি মুখ পাড়ার কৃষক নিক্সন চাকমা বলেন, জমিতে পানি সেচ দেওয়া হলে এ সেচের পানি যখন শুকিয়ে যায় তখন পুরো জমিতে একটি আবরণ পড়ে। এরপর ধানগাছের পাতা লালচে হয়ে যায়। আর ধানগাছ বাড়তে পারে না, মারা যায়। যার জমিতে এ পানি উঠেছে তার জমির এ অবস্থা হয়েছে। এ অবস্থায় সবাই পানি সেচ দেওয়া বন্ধ রেখেছে। 

শিল্পনগরী সড়ক মুখের বাসিন্দা সুষমা চাকমা বলেন, ‘আমার বাচ্চার বয়স তিন বছর। ছড়ায় পানিতে বাচ্চাকে গোসল করানোর পর পুরো শরীরে চর্মরোগ দেখা দিয়েছে। ডাক্তার দেখে বলেছে বাচ্চার শরীরে যে চর্মরোগ তা ভালো করতে হাই পাওয়ার ওষুধ দিতে হবে। কিন্তু সে এ ওষুধ নিতে পারবে না। এমন অবস্থায় খুব কষ্টে আছি। বাচ্চাটা সারা দিন কান্না করে।’ 

মানিকছড়িতে দায়িত্বরত সরকারি চাকরিজীবী নয়ন চক্রবর্তী বলেন, রাবার কারখানাটি এলাকার বায়ু দূষণ করেছে চরমভাবে। এর আশপাশে আর মুক্ত বাতাস নেই। এমন দুর্গন্ধ, আশপাশে খেলাধুলা বা ঘুরে বেড়ানো যায় না। 

রাবার কারখানায় গিয়ে দেখা গেছে, স্থানীয় ছড়া নির্ভর পরিবারগুলোর জন্য একটি পানির ট্যাংক বসানো হয়েছে। সেখান থেকে পানি সংগ্রহ ও গোসল করছেন এসব পরিবারের সদস্যরা। কারখানার পাশে ছড়ায় ভাসমান অবস্থায় মরা তেলাপিয়া, পুঁটি, বেলে, চিংড়ি মাছ দেখা গেছে। কারখানার ভেতরে গিয়ে দেখা গেছে পাঁচটি পাকা হাউজে রাখা হয়েছে রাবার মিশ্রিত পানি। 

কারখানার শ্রমিক মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘আমরা একটি অ্যাসিড ব্যবহার করি। এটি হাতে ধরি। আমাদের কিছু হয় না। আর্মিরা আমাদের কারখানার বর্জ্য পরীক্ষা করে কিছুই পায়নি। কারখানার বর্জ্য আমরা কারখানার বাইরে এক সপ্তাহ রাখি। এরপর ছড়ায় ফেলি।’ 

রাঙামাটি সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু মো. মনিরুজ্জামান বলেন, দূষিত পানির জমিতে সেচ দেওয়ার কারণে জমির ওপরে একটি রাবার আবরণ জমা হচ্ছে। এ জমির ও ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। পানি বিষাক্ত হলে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন করা সম্ভব হবে না। কারখানা বন্ধ করতে বলছি না, এটি সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে দূষণ রোধ করতে হবে। না হলে এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে এখানে।’ 

 রাবার কারখানায় যে কেমিক্যাল ব্যবহার করা হচ্ছে তা মানব শরীর, ফসল, পরিবেশ ও জীব-বৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতিকর। এটি পানিতে দূষণ করছে। এর প্রভাব সবখানে ফেলবে। দূষণ দীর্ঘমেয়াদি হলে এ এলাকার মানুষ ক্যানসারেও আক্রান্ত হবে বলে জানান রাঙামাটি প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো ভিসি প্রাণ ও রসায়নবিদ ড. কাঞ্চন চাকমা। 

রাঙামাটি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোস্তফা জাভেদ কায়সার বলেন, কারখানাটি যদি পরিবেশের ক্ষতি করে তাহলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

এদিকে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) রাঙামাটির শিল্প নগরী কর্তৃপক্ষ প্লট বরাদ্দ দিলেও পরিবেশবান্ধব পরিকল্পিত কারখানা গড়ে তোলা হচ্ছে কিনা তা নিয়ে কোন নজরদারি নেই। 

রাঙামাটি বিসিকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘আমি রসায়ন বিজ্ঞানে পড়াশোনা করেছি। কারখানায় ক্ষতিকারক কিছুই নেই। যা বলা হচ্ছে সব মিথ্যা। আর্মিদের পরীক্ষা করতে বলেছি। তারা পরীক্ষা করে কিছুই পায়নি। এটি পরীক্ষা করে ক্ষতিকারক কিছু পেলে আমি বন্ধ করে দেব। সে ক্ষমতা আমার আছে। এ নিয়ে আমাকে অনেকে বিরক্ত করছে। সাংবাদিকও আমার পিছে লেগে আছে। সব বুঝি এরা চাঁদার জন্য মূলত এ কাজ করছে।’

পরিবেশ ধ্বংসের মূলেবাজার অর্থনীতি

ঢাকার বাতাস আজ ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’, ভয়াবহ দূষণ করাচিতে

কুতুবদিয়া দ্বীপে নতুনভাবে বনায়নের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে: পরিবেশ উপদেষ্টা

জলবায়ু পরিবর্তন: ২০৭০-৯০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক জিডিপি কমবে ৫০ শতাংশ

ঢাকার বাতাস আজ ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’, শীর্ষে তাসখন্দ

কামরাঙ্গীরচরে তিন পলিথিন কারখানা সিলগালা, জব্দ ১০০ টন

হাতিরঝিল ও পান্থকুঞ্জ পার্ক রক্ষায় নাগরিক সংলাপ

বায়ুদূষণ রোধে অভিযান: ২৪ লাখ টাকা জরিমানা

ঢাকার বাতাস খুবই অস্বাস্থ্যকর, মাস্ক পরার পরামর্শ আবহাওয়া অধিদপ্তরের

দাবানলের জন্য জলবায়ু পরিবর্তন কতটা দায়ী

সেকশন