মোয়াজ্জেম হোসেন, কলাপাড়া (পটুয়াখালী)
অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি সাগরকন্যা খ্যাত কলাপাড়া উপজেলার কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। এটি দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র সৈকত যেখানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত অবলোকন করা যায়। এই অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে সারা বছর জুড়ে দেশ বিদেশ থেকে পর্যটকেরা এখানে এসে ভিড় জমান। কিন্তু প্রাকৃতিক নানা বিপর্যয়ের কারণে কুয়াকাটা হারাতে বসেছে তার অপরূপ সৌন্দর্য।
বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, বালু ক্ষয়, ভাঙন সহ নানা রকমের প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে হুমকির সম্মুখীন সাগরকন্যার রূপ। বঙ্গোপসাগরের ঢেউয়ের ঝাপটায় ধুয়ে যাচ্ছে কুয়াকাটা সৈকতের বালু। বেড়িয়ে এসেছে মাটির স্তর। হুমকির মুখে রয়েছে সৈকত লাগোয়া টুরিজম পার্ক, মসজিদ, মন্দির, টুরিস্ট পুলিশ বক্স, পাবলিক টয়লেট ও বনাঞ্চল। গত কয়েক দিনের সাগরের বিক্ষুব্ধ ঢেউয়ের তাণ্ডবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পর্যটকদের বিনোদন কেন্দ্র কুয়াকাটা জাতীয় উদ্যান। বর্তমানে দীর্ঘ ১৮ কিলোমিটার সৈকত একেবারেই সৌন্দর্যহানি হয়ে পড়েছে।
সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা গেলেই দেখা যায়, শুধু লেখাই রয়েছে জাতীয় উদ্যান। সাগরের অব্যাহত উত্তাল ঢেউ অর্ধেক গিলে খেয়েছে উদ্যানকে। বাউন্ডারি দেয়ালসহ উদ্যানের বিভিন্ন ছোট ছোট আকর্ষণীয় স্থাপনা সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। ইকোপার্ক এলাকার মনোরম লেক, বনাঞ্চল এবং অবকাঠামোসহ অর্ধেকটা সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। সংরক্ষিত বনের হাজারো গাছ কেটে উজাড় করা হয়েছে। হাজারো একর বনভূমি সাগর গিলে খেয়েছে।
এ দিকে বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই জিরো পয়েন্টের পূর্ব ও পশ্চিম দিকে জিওটিউব ব্যাগে বালু ভর্তি করে সৈকত রক্ষার জন্য কাজ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এ কাজে ব্যয় ধরা হয় ৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। কিন্তু এতেও কাজে আসছে না। উত্তাল সাগরের ঢেউয়ে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে সৈকত। অবস্থা এমন যে, স্বাভাবিক ঢেউয়ের ঝাপটাতেই সৈকতের বালু ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। তবে পাউবো কর্তৃপক্ষ বলছেন, পাবলিক চলাচলের কারণে ব্যাগ ছিঁড়ে যাওয়ায় বালু বের হয়ে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আবুল হোসেন রাজু আজকের পত্রিকাকে বলেন, পানির উচ্চতার চেয়ে ব্যাগের উচ্চতা কম হওয়ায় কোন ভাবেই পানি আটকানো যাচ্ছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রতি বছর সৈকত রক্ষায় দায়সারা কাজ করেছে। এর ফলে কোন সুফল হচ্ছে না।
কুয়াকাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হোসেন হাওলাদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, সৈকত রক্ষার জন্য কুয়াকাটা পৌর সভার কোনো বাজেট নেই। সৈকত রক্ষার জন্য গ্রোইন বাঁধ নির্মাণ করা উচিত বলে তিনি জানান।
কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হালিম সালেহী বলেন, কুয়াকাটা সৈকত রক্ষায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সরেজমিনে পরিদর্শন করেছে। তবে পূর্ব পার্শ্বে জরুরিভাবে সৈকত রক্ষায় কিছু জিও ব্যাগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। স্থায়ী প্রকল্প পাঠিয়েছি। বরাদ্দ পেলে কাজ শুরু করা হবে বলে জানান।