বিশ্বে কার্বনের সবচেয়ে বড় ভান্ডার আমাজন রেইনফরেস্ট। কিন্তু ২০২৩ সালে প্রবল খরার কবলে পড়ে আমাজন। নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে জলবায়ু সংকট খরাটিকে বিধ্বংসী রূপ দিতে সহায়তা করে।
খরাটি অনেক জায়গায় সবচেয়ে ভয়াবহ রূপে দেখা দেয়। বৈজ্ঞানিক স্কেলেও সর্বাধিক ‘ব্যতিক্রম’ স্তরে আঘাত করে। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, তেল, গ্যাস এবং কয়লা পোড়ানো থেকে বিশ্ব-উষ্ণায়নের ঘটনা না হলে খরা অনেক কম তীব্র হতো।গবেষণায় আরও দেখা গেছে প্রাকৃতিক এল নিনো এ ঘটনায় ভূমিকা রাখলেও তা অতি সামান্য। এসব তথ্য জানা যায় ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে।
আমাজন অঞ্চল অর্থাৎ আমাজনাস রাজ্যে বাস করা লাখ লাখ মানুষ এই খরায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এখানকার কোনো কোনো নদীর পানি শত বছরের বেশি সময় ধরে সর্বনিম্ন সীমায় রয়েছে। এখানে খাবার পানির সংকট, চাষাবাদের পর্যাপ্ত পানি নেই। তেমনি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বিদ্যুৎ উৎপাদনও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
খরা দাবানলের পরিস্থিতি আরও খারাপ করেছে এবং জলের উচ্চ তাপমাত্রা সেখানে ব্যাপক মৃত্যুর কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। যার মধ্যে এক সপ্তাহে ১৫০ টিরও বেশি বিপন্ন গোলাপি ডলফিনের মৃত্যু উল্লেখযোগ্য। গত বছরের সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে মূলত আমাজনের লেক তেফে এলাকায় এই ডলফিনদের মৃতদেহ পাওয়া যায়।
‘আমাজন জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াইকে যেমন বেগবান করতে পারে তেমনি পিছু হটাতে পারে।’ বলেন ব্রাজিলের ফেডারেল ইউনিভার্সিটি অব সান্তা কেতারিনার অধ্যাপক এবং গবেষণা পরিচালনা করা ওয়ার্ল্ড ওয়েদার অ্যাট্রিবিউশান টিমের সদস্য অধ্যাপক রেজিনা রড্রিগেজ।
‘যদি আমরা অরণ্যটিকে রক্ষা করতে পারি তবে এটি ভূমিতে কার্বনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভান্ডার হিসেবে কাজ করা অব্যাহত রাখবে,’ বলেন তিনি, ‘কিন্তু যদি আমরা মানবসৃষ্ট সংকট ও বন উজাড় অব্যাহত রাখি তকে এটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাবে। তবে এটি প্রচুর কার্বন-ডাই-অক্সাইডের নিঃসরণ ঘটাবে। আমাদের রেইনফরেস্টটি রক্ষা করতে হবে এবং যত দ্রুত সম্ভব জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে দূরে সরে যেতে হবে।’
দলটির অপর এক সদস্য রেডক্রস রেডক্রিসেন্টের গবেষক সিম্ফিওয়ি স্টুয়ার্ট বলেন, ‘আমাজনে বাস করা বহু সম্প্রদায় কখনো এমন খরা দেখেইনি। মানুষদের খাবার, ওষুধ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের জন্য লম্বা পথ ভ্রমণ করতে হয়েছে, নদীর শুকনো অংশে নৌকা ঠেলে পার করতে হয়েছে। সরকারি হস্তক্ষেপগুলি জলবায়ু উষ্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খরার তীব্রতার জন্য প্রস্তুত করতে সম্প্রদায় গুলিকে সহায়তা করার উপযোগী হওয়াটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
২০২৩ সালের প্রবাল খরা ৫০ বছরের একবার প্রত্যাশা করার কথা বলে মত প্রকাশ করা হয় গবেষণায়। তবে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে তবে প্রতি ১৩ বছরের একবার এমন ভয়াবহ খরার আশঙ্কা আছে।
বিজ্ঞানীরা বলেছেন, গত দশকগুলিতে বিপুল অরণ্য উজাড় খরা পরিস্থিতি খারাপ করছে। কারণ গাছপালা কাটার অর্থ জমি কম জল ধরে রাখতে পারবে।
সাম্প্রতিক তথ্যগুলি দেখায় যে আমাজন রেইনফরেস্ট বিপর্যয়ের চুড়ান্তসীমার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এতে এটি বিশ্ব জলবায়ু এবং জীববৈচিত্র্যের ওপর বড় প্রভাব সৃষ্টিকারী অবস্থান হারিয়ে ফেলতে পারে। এই শতাব্দীর গোড়ার দিক থেকে এখানকার আদিম অরণ্যের শতকরা ৭৫ ভাগ আগের অবস্থা হারিয়েছে। যার অর্থ খরা এবং দাবানলের পরে আগের অবস্থা পুনরুদ্ধার করতে আরও বেশি সময় লাগবে।