সাগরতলে বিশাল এক ডুবো পর্বতের সন্ধান মিলেছে। গুয়াতেমালা উপকূলের প্রশান্ত মহাসাগরে এই পর্বতটির খোঁজ পান বিজ্ঞানীরা। পুরোনো কোনো একটি আগ্নেয়গিরির অবশিষ্টাংশ বলে ধারণা করা হচ্ছে পর্বতটিকে। সাগরতলের বেশির ভাগ পর্বতের উৎপত্তিই এভাবে।
সাগর নিয়ে গবেষণা করা অলাভজনক সংস্থা শ্মিট ওশান ইনস্টিটিউট এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায় পর্বতটির উচ্চতা ১ হাজার ৬০০ মিটার (৫ হাজার ২৪৯ ফুট)। অর্থাৎ পৃথিবীর সবচেয়ে লম্বা দালান বুর্জ খলিফার দ্বিগুণ পর্বতটির উচ্চতা। সাগর সম্পর্কে আরও জানার অংশ হিসেবে সংস্থাটির জুলাইয়ের এক অভিযানে পর্বতটির খোঁজ মেলে। ১৪ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে থাকা পর্বতটি সাগরপৃষ্ঠের ২ হাজার ৪০০ মিটার (৭ হাজার ৮৭৪ ফুট) নিচে।
গবেষণার কাজে ব্যবহৃত জাহাজ ফেলকরের সাহায্যে এই অভিযান পরিচালিত হয়। জাহাজটি ইকোসাউন্ডার ব্যবহার করে সমুদ্রের তলে অনুসন্ধান চালাতে সক্ষম। এটি সমুদ্রের তলদেশে শব্দ তরঙ্গ পাঠায়, সেটি সেখানে পৌঁছতে এবং ফিরে আসতে যে সময় লাগে তা পরিমাপ করে।
শ্মিট ওশান ইনস্টিটিউটের হাইড্রোগ্রাফার এবং মেরিন টেকনিশিয়ান টমার কেটার ওই জাহাজে ছিলেন। কেটার নিশ্চিত করেছেন যে সমুদ্রের গভীরতা পরিমাপকারী কোনো ডেটাবেইসে এই পর্বতটির উল্লেখ নেই।
‘দেড় কিলোমিটারেরও বেশি উচ্চতার একটি পর্বত, যেটি এত দিন ঢেউয়ের নিচে লুকিয়ে থাকা নিশ্চিত করে এখনো কত কিছু আমাদের আবিষ্কারের বাকি’, বলেন শ্মিট ওশান ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. জ্যোতিকা বিরমানি বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, ‘সম্পূর্ণ সমুদ্রতলের একটি মানচিত্র হলো আমাদের মহাসাগর বোঝার একটি মৌলিক উপাদান। তাই এমন একটি যুগে বসবাস করা উত্তেজনাপূর্ণ, যেখানে প্রযুক্তি আমাদের গ্রহের এই আশ্চর্যজনক অংশগুলোর মানচিত্র তৈরি করতে ও দেখতে সাহায্য করে।’
গুয়াতেমালার বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের ৮৪ নটিক্যাল মাইল দূরে আবিষ্কৃত হলো পর্বতটি। অনুমান করা হয় পৃথিবীতে এক হাজার মিটারের (৩ হাজার ২৮০ ফুট) বেশি উচ্চতার এক লাখের বেশি পর্বত আছে। সাগর, আবহাওয়া ও জলবায়ু নিয়ে কাজ করা মার্কিন সংস্থা ন্যাশনাল ওশানিক অ্যান্ড এটমসফোরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এনওএএ) মতে, এগুলোর ১০ ভাগের এক ভাগেও অনুসন্ধান চালানো যায়নি এখনো।
ই-মেইলে ইউনিভার্সিটি অব হাওয়াইয়ের অধ্যাপক লেস ওয়াটলিং জানান, সাগরতলের পর্বতগুলোতে সাম্প্রতিক সময়ে অনুসন্ধান চালানো সম্ভব হয়েছে। এর কারণ মানুষসহ সাবমারসিবল (বড় কোনো মাদার শিপ থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয় এমন খুদে জলযান) এবং দূরনিয়ন্ত্রিত যানের উন্নয়ন।
লেস ওয়াটলিং আরও জানান, যেসব পর্বত মানচিত্রে স্থান পায়নি কিংবা যেখানে অনুসন্ধান চালানো হয়নি, সেগুলো কোথায় থাকতে পারে সে সম্পর্কেও ধারণা আছে গবেষকদের। স্যাটেলাইট রাডার অল্টিমিটার সমুদ্রের উচ্চতায় সামান্য পার্থক্য শনাক্ত করতে সক্ষম। সাধারণত একটি পর্বতের ওপরে সাগরপৃষ্ঠ কিছুটা স্ফীত অবস্থায় থাকে। যা সাগর তলের পর্বত শনাক্তে সাহায্য করে।
কেটার জানান, যেখানে এবারের পর্বতটিকে শনাক্ত করা হয়েছে এর মোটামুটি ১১ কিলোমিটার দূরে স্যাটেলাইট আল্টিমিটার একটি পর্বতের উপস্থিতির ইঙ্গিত দেয়। সম্ভবত এটাই সাম্প্রতিক আবিষ্কৃত পর্বতটি। তবে বিভিন্ন কারণে পর্বতের যে অবস্থান দেখানো হয় তাতে বিচ্যুতি থাকতে পারে। পর্বতটি মানচিত্র আগে করা সম্ভব হয়নি, শুধু স্যাটেলাইট ডেটা থেকে এর অবস্থানের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল।
পর্বতগুলোর ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এগুলো সাগরতলের জীববৈচিত্র্যের একটি বড় আশ্রয়স্থল। এখানকার শক্ত জমিতে প্রবাল, স্পঞ্জ এবং অন্যান্য সামুদ্রিক অমেরুদণ্ডী প্রাণী ঝুলে বা আঁকড়ে থাকতে পারে।
গবেষকদের অনুমান শুধু সাগরে নির্দিষ্ট অঞ্চলে বসবাসকারী প্রাণীদের মধ্যে ১৫ থেকে ৩৫ শতাংশের বাস সাগরতলের পর্বতের বাস্তুতন্ত্রে। এ ছাড়া অস্থায়ীভাবে থাকা প্রাণীরাও খাওয়া, আশ্রয় এবং বংশবিস্তারের প্রয়োজনে এগুলোকে ব্যবহার করে।
‘সাগরতলের এসব পর্বতে জীববৈচিত্র্যের অভাবনীয় উপস্থিতির বিষয়টি সম্পর্কে তুলনামূলক সাম্প্রতিক সময়ে জানা গেছে,’ বলেন দ্য সাইলেন্ট ডিপ: ডিসকভারি, ইকোলজি অ্যান্ড কনজারভেশন অব দ্য ডিপ সি বইয়ের লেখক কসলো, ‘সম্ভবত এই আবিষ্কারের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো, এটি নিশ্চিত করে সমুদ্রতলের ভালো মানচিত্র এখন পর্যন্ত করা সম্ভব হয়নি।’