সম্প্রতি বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণ শহরের তকমা পেয়েছে পাকিস্তানের জ্যাকোবাবাদ শহর। গত ১৫ মে শহরটির তাপমাত্রা ছিল ৫১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দীর্ঘদিন ধরেই শহরটিতে এই সংখ্যার কাছাকাছি তাপমাত্রা বিরাজ করছে। এই অস্বাভাবিক উচ্চ তাপমাত্রা বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে শহরটির নারীদের জন্য। বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদের জন্য।
জ্যাকোবাবাদের পরিস্থিতি এতই বিপজ্জনক যে—শহরটিতে শীত নিবারণের পাশাপাশি দাবদাহ থেকে শরীরকে রক্ষায় নিজেদের কম্বলে মুড়িয়ে নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। কারণ, শীতের সময় তীব্র শীত আর গরমের সময় লু হাওয়ার কারণে শরীরকে বাইরের তীব্র দাবদাহ থেকে রক্ষা করতে কম্বলই সঙ্গী হয়ে উঠে। আর এ কারণে, শহরটির অধিবাসীদের মধ্যে একটি প্রচলিত হাস্যরসাত্মক বাক্য রয়েছে যে—‘আমরা যদি নরকেও যাই তবে সেখানেও কম্বল নিয়ে যেতে হবে।’
প্রায় ২ লাখ মানুষের বসবাস পাকিস্তানের জ্যাকোবাবাদ শহরে, যার অধিকাংশই নারী। সোনারি এবং ওয়াদেরি নামে দুই তরুণী গর্ভবতী জানালেন, এই তীব্র গরমে তাদের ভয়াবহ জীবনযাপনের সংগ্রামের কথা। তাঁরা তাদের পিরিয়ড দীর্ঘায়িত হওয়াসহ নানা ধরনের জটিলতার ঝুঁকি নিয়ে বাস করেন। ১৯৯০ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে চালানো প্রায় ৭০ টির মতো গবেষণা থেকে এই কথা আরও নিশ্চিত হওয়া গেছে।
ওই ৭০টি গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের মেটা অ্যানালাইসিস করে গবেষকেরা দেখেছেন, প্রতি ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য গর্ভবতী নারীর মৃত সন্তান প্রসব এবং অপরিণত সন্তান প্রসবের সম্ভাবনা প্রায় ৫ শতাংশ বেড়ে যায়। এই গবেষণাটি ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত হয়। বিশ্বে শিল্প যুগের পূর্ববর্তী সময়ের চেয়ে বর্তমান সময়ের তাপমাত্রা অন্তত ১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। ফলে, স্বাভাবিকভাবে বলা যেতেই পারে যে—এই অঞ্চলে গর্ভবতী নারীদের সন্তান জন্ম দেওয়া ক্রমশ বিপজ্জনক হয়ে উঠছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল কনসোর্টিয়াম অন ক্লাইমেট অ্যান্ড হেলত এডুকেশনের পরিচালক সিসিলা সোরেনসেন জানিয়েছেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে নারীরা কী পরিমাণে ক্ষতির সম্মুখীন হন বা হচ্ছেন তা খুব ‘সামান্যই নথিভুক্ত’ করা হয়। তিনি বলেন, ‘আমরা এর সঙ্গে (বৈশ্বিক উষ্ণায়ন) নারীর স্বাস্থ্যের কি সংযোগ রয়েছে তার খুব সামান্যই জানি। কারণ আমরা এই বিষয়ে কোনো তথ্যই সংগ্রহ করি না। অনেক ক্ষেত্রে তো গরিব নারীরা ন্যূনতম চিকিৎসাও পায় না।’
সিসিলা সোরেনসেন আরও বলেন, ‘বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি গর্ভবতী নারীদের জন বড় চিন্তার বিষয়।’
সম্প্রতি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো বিশেষ করে পাকিস্তান ও ভারতে বেশ কয়েকটি দাবদাহের ঘটনা ঘটেছে। সামনের দিনগুলোতে এই দাবদাহ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা।
পাকিস্তানের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী শেরি রহমান রয়টার্সকে বলেছেন, নারীরাই বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির আঘাতের চিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছেন। তাই আগামী দিনে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নারীদের সমস্যার বিষয়গুলো আরও নির্দিষ্টভাবে নির্ণয় করে সে বিষয়ে কাজ করতে হবে। শেরি রহমান বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন পিছিয়ে পড়া গ্রামীণ নারীদের জন্য বড় হুমকি হিসেবে হাজির হয়েছে।’
কেবল পাকিস্তানেই নয়, ভারতের একাধিক রাজ্যে এরই মধ্যে তীব্র দাবদাহ এবং পানিশূন্যতায় সাধারণ মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত। বিগত কয়েক বছর ধরেই এই অঞ্চলে গ্রীষ্ম দীর্ঘায়িত হচ্ছে। বৃষ্টিপাত এবং খরা দুটোই অনিয়মিতভাবে নিয়মিত ঘটনা হয়ে উঠেছে। আর এর প্রভাব গিয়ে পড়ছে এই অঞ্চলের নারীদের স্বাস্থ্যের ওপর। বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদের ওপর। এই অঞ্চল ক্রমশ গর্ভবতী নারীদের জন্য নরকতুল্য হয়ে উঠেছে।
রয়টার্স থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান