Ajker Patrika
হোম > পরিবেশ

ইউরোপের নদীগুলোতে চীনা কাঁকড়ার আগ্রাসন

ইউরোপের নদীগুলোতে চীনা কাঁকড়ার আগ্রাসন

বিজ্ঞানীরা সাধারণত কোনো প্রাণীকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু চায়নিজ মিটেন ক্র্যাবদের মারতে তৎপর তাঁরা। কারণ, এই লোমশ নখের কাঁকড়া ইউরোপের নদীগুলোতে বিপর্যয় সৃষ্টি করছে। 

বিজ্ঞানীরা এদের মোকাবিলা করার একটি কৌশল অবশ্য খুঁজে পেয়েছেন। সামনের নখগুলো ঢেকে থাকা ঘন চুলের কারণে এরা চায়নিজ মিটেন কাঁকড়া নাম পেয়েছে। এই কাঁকড়া রীতিমতো ত্রাস সৃষ্টিকারী একটি প্রজাতি। এদের গাঢ় বাদামী শরীর তিন ইঞ্চি পর্যন্ত হতে পারে এবং ছড়ানো নখের কারণে ১০ ইঞ্চি পর্যন্ত বিস্তৃত হয় এদের আকার, যা মোটামুটি একটি ডিনার প্লেটের আকার।

বিশ্বের ১০০টি সবচেয়ে আক্রমণাত্মক বহিরাগত প্রজাতির মধ্যে একটি এটি। এরা প্রায় সবকিছু খায়। ভূমির পাশাপাশি স্বাদু এবং নোনাজলেও বেঁচে থাকতে পারে। এদের প্রজনন হারও পিলে চমকে দেওয়ার মতো। একেকবারে স্ত্রী কাঁকড়া আড়াই লাখ থেকে ১০ লাখ ডিম পাড়ে।

ইউরোপের ১০০ বছরের বেশি আগে জার্মানির এক নদীতে প্রথম এদের খোঁজ মেলে। ধারণা করা হয়, জাহাজের ভারসাম্য রক্ষার জন্য যে পানি ব্যবহার করা হয়, তার মাধ্যমে এশিয়া থেকে ইউরোপে পাড়ি জমায় এরা। আর এখন ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) ২৭ দেশের মধ্যে ১৮টিতেই এরা ছড়িয়ে পড়েছে। শুধু তা-ই নয়, এদের ক্ষতিকর প্রভাবেরও শেষ নেই। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য জলজ খাদ্যশৃঙ্খল ব্যাহত করা, জলজ কিছু প্রাণীর মধ্যে প্লেগ সংক্রমণ করা এবং তীর ক্ষয় বৃদ্ধি করা উল্লেখযোগ্য।

আর মিটেন ক্র্যাব বা কাঁকড়ার সংখ্যা কমানোর একটি উপায় খুঁজছিলেন বিজ্ঞানীরা। কারণ, এটা করতে পারলে জলের বাস্তুতন্ত্র রক্ষা করা সহজ হবে। ২০২৩ সালে ইইউর অর্থায়নে এ লক্ষ্যে ‘ক্ল্যানসি’ নামের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে যুক্ত হন বিভিন্ন গবেষক।

নদীতে বসানো একটি ধাতব চ্যানেল বা খাল স্থাপন করে ফাঁদ পাতা হচ্ছে কাঁকড়ার জন্য। ছবি: সিএনএনএখন পর্যন্ত সবচেয়ে সফল পদ্ধতি হলো বেলজিয়ামের ইউনিভার্সিটি অব অ্যান্টেয়ার্প এবং ফ্লানডারস এনভায়রনমেন্ট এজেন্সির উদ্ভাবিত একটি ফাঁদ। ২০১৮ সালে এ ধরনের তিনটি ফাঁদ বসানো হয় দেশটিতে। এগুলোর মাধ্যমে এখন পর্যন্ত আনুমানিক ৩০ লাখ কাঁকড়া ধরা সম্ভব হয়েছে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকুয়াটিক ইকোলজি বিষয়ের অধ্যাপক জোনাস শোলিংক।

নদীতে বসানো একটি ধাতব চ্যানেল বা খাল স্থাপন করা হয়। যেটি কাঁকড়াগুলো নদীর তীরে ঢোকার সময় পড়ে। এরা তখন খাঁচার দিকে যাওয়া পাইপ বরাবর হামাগুড়ি দিতে বাধ্য হয়। তারপর খাঁচা থেকে এদের সংগ্রহ করা হয়।

ইইউর প্রকল্পের বাইরে একই নকশার আরেকটি ফাঁদ গত বছর যুক্তরাজ্যে বসানো হয়। আগামী বছরগুলোতে বেলজিয়াম, জার্মানি, ফ্রান্স এবং সুইডেনজুড়ে এ ধরনের আরও ফাঁদ বসানোর পরিকল্পনা আছে ইইউর নতুন প্রকল্পে।

ফাঁদগুলো সেই জায়গাগুলোকে টার্গেট করে বসানো হবে, যেখান দিয়ে বিপুলসংখ্যক কাঁকড়া চলে যায়। 

শরৎকালে প্রাপ্তবয়স্ক কাঁকড়াগুলো ডিম ছাড়ার জন্য মিষ্টি জল থেকে সমুদ্রে চলে যায় এবং বসন্তে ছোট কাঁকড়াগুলো সমুদ্র থেকে নদীতে ভ্রমণ করে। এ সময়কালে তারা সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান হয়। স্লুইসগেটের চারপাশে জড়ো হয় বা ডাঙার দিকে চলে যায়।

শোলিংক জানান এই কাঁকড়া ইউরোপীয় পরিবেশে বিপুল সংখ্যায় বাড়ার কয়েকটি কারণ আছে। এদের কোনো প্রাকৃতিক শত্রু নেই। আর এরা মোটামুটি সবকিছু খেতে পারে। জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে পানির উষ্ণতা বৃদ্ধিও এদের পরিচিতি পরিবেশে বাস করার সুযোগ করে দিচ্ছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনুমান, এই প্রজাতির কারণে এক বছরে সদস্যদেশগুলোর ১ হাজার ২০০ কোটি ইউরোর অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তাই ইইউর ২০৩০ সালের জীববৈচিত্র্য কৌশল এই প্রজাতিগুলো বিস্তার রোধে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন, ফাঁদগুলো একটি সাশ্রয়ী সমাধান দেয়। জার্মানিতে অবস্থিত আলফ্রেড ওয়েগেনার ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী এবং ক্ল্যানসি প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত ইয়ান জুকো মনে করেন, ভবিষ্যতে এই ফাঁদ গভীর, প্রশস্ত নদীর পরিবর্তে ছোট উপনদীতেও স্থাপন করা হবে। ব্যস্ত মৌসুমে, তীরের উভয় পাশের বাক্সগুলো নিয়মিতভাবে চেক করে খালি করতে হবে। না হলে কাঁকড়ার পাহাড় জমে যাবে।

একবার ফাঁদে ধরা পড়লে কাঁকড়াগুলো পাইপ বরাবর হামাগুড়ি দেয় এবং উভয় পাশে বাক্স পৌঁছে যায়। তারপর সেখান থেকে সংগ্রহ করা হয়। বেলজিয়ামের তিনটি ফাঁদে এ পর্যন্ত ৩০ লাখ কাঁকড়া ধরা পড়েছে।

জুকো ব্যাখ্যা করেছেন, ইইউর বিভিন্ন দেশে ভিন্ন প্রাণী কল্যাণবিধি রয়েছে। জার্মানিতে, বিজ্ঞানীরা শুধু সেদ্ধ করে বা বৈদ্যুতিক প্রবাহ ব্যবহার করে কাঁকড়া মারার অনুমতি পান। যেখানে বেলজিয়ামে বালতিতে কাঁকড়া হিমায়িত করা হয়। তিনি আশা করেন, মৃত কাঁকড়ার উপযুক্ত ব্যবহারের একটি উপায়ও বের হয়ে আসবে প্রকল্পে।

শোলিংক জানান, মিটেন কাঁকড়াগুলো চীনে একটি মৌসুমি উপাদেয় খাবার। তবে ইউরোপীয় বাজারে জনপ্রিয় নয় এখনো। ফাঁদে ধরা পড়া অনেক কাঁকড়াই কম বয়স্ক, যেখানে চীনে যেগুলো খাওয়া হয় সেগুলো প্রাপ্তবয়স্ক। তবে বেলজিয়ামের একটি ফাঁদ থেকে সংগৃহীত কাঁকড়াগুলো স্থানীয় চিড়িয়াখানায় পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

৯ বছরে মাত্র ৩১ দিন নির্মল বাতাসে নিশ্বাস নিতে পেরেছে ঢাকাবাসী

চীনা বিনিয়োগে সৌদি আরবে লাফিয়ে বাড়ছে সৌর বিদ্যুতের ব্যবহার

বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলেও বাড়বে তাপমাত্রা: আবহাওয়া অধিদপ্তর

ঢাকার বায়ুমানে আরও কিছুটা উন্নতি, খুবই অস্বাস্থ্যকর বাতাস নিয়ে শীর্ষে দিল্লি

সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারে শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন বন্ধ

বিশ্বের দূষিততম শহর ভারতের বার্নিহাট, বাড়ছে ত্বক ও শ্বাসকষ্টের রোগী

আজ ঢাকার বাতাসে দূষণ কমেছে, শীর্ষে দিল্লি

দুপুরের আগেই ঢাকাসহ ২০ জেলায় বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে

ইতিবাচক সামাজিক পরিবর্তন আনতে ‘এলজি অ্যাম্বাসেডর চ্যালেঞ্জ’

মনপুরায় লোকালয় থেকে উদ্ধার মায়াবী হরিণ বনে অবমুক্ত