উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বের হিমবাহগুলো যে হারে গলতে শুরু করেছে, তাতে আগামী শতাব্দীতে আর কোনো হিমবাহ খুঁজে পাওয়া যাবে না বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশ্বের অধিকাংশ হিমবাহ (শেষ বরফ যুগের অবশিষ্টাংশ) জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গলে যাচ্ছে। বিশেষ করে ইউরোপের আল্পস পর্বতমালায় রেকর্ড পরিমাণে হিমবাহ ধসের ঘটনা ঘটছে। আল্পসের তাপমাত্রা প্রতি দশকে প্রায় ০.৩ সেলসিয়াস উষ্ণ হচ্ছে, যা বৈশ্বিক গড় থেকে প্রায় দ্বিগুণ দ্রুত।
সম্প্রতি সুইস হিমবাহবিদ আন্দ্রেয়াস লিন্সবাউয়ার বলেন, আল্পসের হিমবাহগুলো সর্বোচ্চ ক্ষতির দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। অন্তত ৬০ বছরের রেকর্ড তথ্য-উপাত্তের পরিপ্রেক্ষিতে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এই উদ্বেগজনক তথ্য জানান তিনি। শীতকালে কতটা তুষারপাত হয়েছে এবং গ্রীষ্মে কতটা বরফ গলছে তার পার্থক্য দেখে বিজ্ঞানীরা পরিমাপ করতে পারেন যে কোনো বছরে একটি হিমবাহ কতটা সংকুচিত হয়েছে।
গত শীতে তুলনামূলক কম তুষারপাত হয়েছিল। অথচ গ্রীষ্মের প্রথম দিকে দুটি বড় তাপপ্রবাহের মধ্য দিয়ে গেছে আল্পস। যার মধ্যে একটি জুলাই মাসে সুইস পাহাড়ি এলাকা জারমাটের একটি গ্রামে ৩০ সেলসিয়াসের কাছাকাছি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
এই তাপপ্রবাহের সময় যে উচ্চতায় জল জমেছিল, তা পরিমাপ করে হিমবাহবিদ আন্দ্রেয়াস লিন্সবাউয়ার বলেন, ‘সত্যিই সুস্পষ্ট যে, এটি একটি ভয়াবহ ঋতু’।
বর্তমান পরিস্থিতিতে আল্পসের হিমবাহ প্রত্যাশার চেয়ে দ্রুত অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে বলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। ২০২২ সালের মতো এমন আরও কয়েকটি বছর ধরে এটি ঘটতে পারে বলে জানিয়েছেন ম্যাথিয়াস হুস নামের সুইজারল্যান্ডের একজন হিমবাহ পর্যবেক্ষক।
অস্ট্রিয়া, ফ্রান্স ও ইতালির হিমবাহবিদরাও বলছেন, হিমবাহগুলো রেকর্ড ক্ষতির মুখে রয়েছে। অস্ট্রিয়ায়, ‘চূড়া পর্যন্ত হিমবাহ তুষারমুক্ত’ বলে জানিয়েছেন অস্ট্রিয়ান একাডেমি অব সায়েন্সেসের হিমবাহবিদ আন্দ্রেয়া ফিশার।
ইতালীয় গ্ল্যাসিওলজিকাল কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্কো গিয়ার্ডিনো বলেন, ‘গ্রীষ্মের পরে চূড়ান্ত ফলাফল দেখলে আপনি সহজেই অনুমান করতে পারবেন আল্পসে হিমবাহের কেমন ক্ষতি হবে।’