ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) লাল তালিকায় মহাবিপন্ন প্রাণী সুমাত্রা গন্ডারে। ইন্দোনেশিয়ার একটি জাতীয় উদ্যানে এ প্রজাতির একটি গন্ডার শাবকের জন্ম হয়েছে। স্থানীয় স্ত্রী গন্ডার রাতু এবং যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও সিরসিন্নটি জুর এক সময়কার বাসিন্দা অন্দেলা মিলনের ফলে জন্ম নেওয়া তৃতীয় গন্ডার শাবক এটি।
গত শনিবার দক্ষিণ সুমাত্রা দ্বীপের ওয়ে কেম্বাস ন্যাশনাল পার্কে জন্ম নেয় এই স্ত্রী গন্ডারটি। ইন্দোনেশিয়ার পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে (আগের টুইট) এ তথ্য জানায় বলে নিশ্চিত করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
ইন্দোনেশিয়ার পরিবেশ ও বনমন্ত্রী সিতি নুরবায় বকর বলেন, ‘এটা শুধু ইন্দোনেশিয়া নয় গোটা বিশ্বের জন্য একটি আনন্দের সংবাদ।’
ইন্টারন্যাশনাল রাইনো ফাউন্ডেশন (আইআরএফ) সূত্রে জানা যায়, এক সময় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিপুল সংখ্যায় সুমাত্রা গন্ডারের বসতি ছিল। এখন ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন এলাকা মিলিয়ে ৮০টির কমও এ প্রজাতির গন্ডার টিকে আছে।
উল্লেখ্য এক সময় বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রামের অরণ্যেও সুমাত্রা গন্ডারের বিচরণ ছিল।
গন্ডার শাবকের জন্ম চোরাশিকার এবং বাসস্থান ধ্বংসের কারণে বিলুপ্তির ঝুঁকিতে থাকা একটি প্রজাতির জন্য নিঃসন্দেহে ভালো বার্তা বহন করছে।
ইন্দোনেশিয়ার পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের শেয়ার করা ছবিটিতে দেখা যায় প্রায় ২৭ কিলোগ্রাম (৬০ পাউন্ড) ওজনের নবজাতক গন্ডারটির শরীর কালো চুলে ঢাকা। মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল সে। একটি ছবিতে রাতুকে তার বাচ্চাকে মৃদু ঠেলা দিতে দেখা গেছে।
স্বাভাবিক জন্মের ৪৫ মিনিটের মধ্যে গন্ডার শাবকটিকে উঠে দাঁড়াতে দেখা যায়। চার ঘণ্টার মধ্যে তার মায়ের কাছ থেকে খাওয়া শুরু করে বলে জানায় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়।
সাধারণত উষ্ণমণ্ডলীয় গহিন অরণ্যে বাস এ প্রজাতির গন্ডারের। আইআরএফের দেওয়া তথ্য অনুসারে সুমাত্রায় সাধারণত একাকী বাস করতে পছন্দ করে এই গন্ডারেরা। স্ত্রী গন্ডার প্রতি ৩-৪ বছরে একটি বাচ্চার জন্ম দেয়।
বাসস্থানের ক্ষতি তাদের ইন্দোনেশিয়ার জঙ্গলের ছোট এলাকার মধ্যে আটকে ফেলেছে। সংরক্ষণবিদরা প্রজাতিটির টিকে থাকা নিয়ে উদ্বিগ্ন।
‘যেহেতু নির্জনে থাকতে পছন্দ করা প্রাণীটি ঘন জঙ্গলের আড়ালে থাকে, এদের সরাসরি দেখা পাওয়া বিরল ঘটনা। পায়ের ছাপের মতো পরোক্ষ লক্ষণ গুলিও খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে উঠছে।’ বলেছে আইআরএফ।
উল্লেখ্য ২০১৯ সালে প্রতিবেশী দেশ মালয়েশিয়ায় প্রজাতিটিকে স্থানীয়ভাবে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। সেখানকার বোর্নিও রাইনো স্যাংচুয়ারিতে ২০১৯ সালের ২৪ নভেম্বর ইমান নামের শেষ স্ত্রী গন্ডারটি ক্যানসারে মৃত্যুবরণ করে। তার মৃত্যু হয় অভয়ারণ্যের ট্যাম নামের শেষ পুরুষ গন্ডারটির মৃত্যুর কয়েক মাস পর। ক্লোনের মাধ্যমে দেশটিতে এই গন্ডারদের ফিরিয়ে আনতে চাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।