Ajker Patrika
হোম > ফ্যাক্টচেক

দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র কাঠের মসজিদ কি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায়

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক

দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র কাঠের মসজিদ কি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায়

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার উদয়তারা বুড়িরচর গ্রামে অবস্থিত সম্পূর্ণ কাঠের তৈরি দৃষ্টিনন্দন এক মসজিদ। এটিকে ‘দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র কাঠের নির্মিত মসজিদ’ দাবি করে দীর্ঘদিন ধরে দেশের সংবাদমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। এসবের মধ্যে কালের কণ্ঠ, সময় টিভি, বার্তা ২৪, এখন টিভি, ডেইলি বাংলাদেশসহ বেশ কিছু গণমাধ্যম আছে।

শুধু সংবাদমাধ্যমেই নয়, উন্মুক্ত বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়ায়ও মসজিদটিকে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র কাঠের তৈরি মসজিদ দাবিতে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। গত সোমবার (২৪ জুন) জাতীয় দৈনিক কালবেলার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফরমেও একই দাবিতে ভিডিও প্রতিবেদন পোস্ট করা হয়েছে। এর মধ্যে সংবাদমাধ্যমটির ফেসবুক পেজের পোস্টটি মঙ্গলবার (২৫ জুন) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দেখা হয়েছে ৭৫ হাজারবার, ইউটিউবের ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় আড়াই হাজারবার। 

কালবেলার ফেসবুক পেজতবে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের অনুসন্ধানে দেখা যায়, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার উদয়তারা বুড়িরচর গ্রামে অবস্থিত কাঠের তৈরি মসজিদটি দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র নয়। 

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানে ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের ট্যুরিজম ডিপার্টমেন্টের সরকারি ওয়েবসাইটে ‘মসজিদ জিনাত বক্স’ নামে একটি মসজিদের বর্ণনা পাওয়া যায়। মসজিদটি সম্পর্কে ওয়েবসাইটটিতে বলা হয়েছে, মসজিদটি কর্ণাটকের ম্যাঙ্গালুরু শহরের বন্দর এলাকায় অবস্থিত। মসজিদটি ভারতীয় স্থাপত্যশৈলীর জন্য বিখ্যাত। 

ধারণা করা হয়, মসজিদটি ৬৪৪ খ্রিষ্টাব্দের দিকে আরব মুসলিম বণিকদের হাতে প্রতিষ্ঠিত। এটি কর্ণাটকে অবস্থিত একমাত্র মসজিদ, যা সম্পূর্ণ কাঠের তৈরি। এই মসজিদের প্রধান আকর্ষণ হলো, সেগুন কাঠের তৈরি ১৬টি স্তম্ভের ওপরে দাঁড়ানো এর অভ্যন্তরীণ কাঠামো। এই স্তম্ভগুলো বিভিন্ন শৈল্পিক প্রতীক, ফুল ও নকশা দিয়ে সজ্জিত। মসজিদটির দেয়াল, দরজা এবং মেঝে গোলাপ কাঠ এবং সেগুন কাঠের নকশা দিয়ে সজ্জিত। 

ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের মসজিদ জিনাত বক্স মসজিদটি সম্পূর্ণ কাঠের তৈরি। ছবি: কর্ণাটক রাজ্যের টুরিজম ডিপার্টমেন্টমসজিদ জিনাত বক্সের বর্ণনায় ওয়েবসাইটটিতে আরও বলা হয়েছে, মসজিদটির ভেতরে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনকাহিনি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। দক্ষিণ ভারতের মহীশূর রাজ্যের শাসক টিপু সুলতান সতেরো শতকে মসজিদটি সংস্কার করেন এবং তাঁর নিজের মেয়ে জিনাথ বক্সের নামে এটির নামকরণ করেন। 

ইউটিউবে ‘ওই লাভ ইসলাম’ নামের একটি চ্যানেলে মসজিদটি নিয়ে ভ্লগও পাওয়া যায়। প্রায় ১১ মিনিট দীর্ঘ ভ্লগটির শুরুতেই ২ মিনিট ২৪ সেকেন্ডে মসজিদটির প্রবেশমুখে মসজিদটি সম্পর্কে বর্ণনা পাওয়া যায়। ওই বর্ণনা অনুসারে, মসজিদটি ৬৪৫ খ্রিষ্টাব্দে নির্মিত। এখানেও মসজিদটি সম্পূর্ণ কাঠ দিয়ে নির্মিত উল্লেখ করা হয়েছে। 

ভিডিওটির ধারা বর্ণনায় উপস্থাপকও বলেন, পুরো মসজিদটি কাঠ দিয়ে নির্মিত। এ ছাড়া ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুতে মসজিদটি সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। ২০১৬ সালের ২১ মে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে ভারতের সেন্ট্রাল মুসলিম কমিটির তৎকালীন সেক্রেটারি হানিফ আলীর একটি বক্তব্য পাওয়া যায়। তিনিও দ্য হিন্দুকে বলেন, এটিই সম্ভবত কর্ণাটক রাজ্যের একমাত্র মসজিদ, যেটি পুরোপুরি কাঠ দিয়ে তৈরি। 

ম্যাঙ্গালুরু টুডে নামের কর্ণাটকের স্থানীয় একটি ওয়েবসাইটে ‘মসজিদ জিনাত বক্স’-এর অভ্যন্তরের বেশ কিছু ছবি পাওয়া যায়। এসব ছবিতেও মসজিদটি কাঠ দিয়েhttps://  নির্মিত বলে প্রতীয়মান হয়।

সুতরাং, এটি স্পষ্ট যে, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার উদয়তারা বুড়িরচর গ্রামে অবস্থিত কাঠের তৈরি মসজিদটি দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র নয়। এমন মসজিদ ভারতের কর্ণাটকেও রয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা factcheck@ajkerpatrika.com

ভারতে ভূত তাড়ানোর ভিডিওকে বাংলাদেশে মসজিদে মস্তকবিহীন লাশ বলে প্রচার

জলমহাল নিয়ে পুলিশ-জনতা পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার দৃশ্যকে ‘আ.লীগের সংগঠিত প্রতিরোধ’ বলে প্রচার

ঝাল খাবার খেলে পাকস্থলীতে আলসার হয়! চিকিৎসাবিজ্ঞান কী বলে

‘দেশ লুটেরা-মাফিয়াদের কবলে’—অন্তর্বর্তী সরকার নয়, আ.লীগের উদ্দেশে বলেছিলেন মির্জা ফখরুল

ঘামের মাধ্যমে মানুষের শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের হয়! চিকিৎসাবিজ্ঞান কী বলে

ভোক্তা অধিকারের অভিযানকে রেস্তোরাঁয় সমন্বয়কদের চাঁদাবাজি বলে প্রচার

মধু খেলে অ্যালার্জি ভালো হয়! চিকিৎসাবিজ্ঞান কী বলে

বন্ধু মোদির সঙ্গে দেখা করতে ভারতে ডোনাল্ড ট্রাম্প— ভিডিওটি পুরোনো

ছদ্মবেশে বাসায় ঢুকে শিশু চুরির ভিডিওটি সাজানো

দুই নারীর ব্যাগ থেকে লাশ উদ্ধারের দাবিতে ছড়ানো ভিডিওটি বাংলাদেশের নয়, ভারতের