ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। অভ্যুত্থানের মুখে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরবর্তীতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। শেখ হাসিনার পতনের পর জণসাধারণের আনীত অভিযোগের ভিত্তিতে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী গ্রেপ্তারও হয়েছে।এর পাশাপাশি অনেক নেতা-কর্মী বিদেশ চলে গেছেন, আবার অনেকে নিজেদের আত্মগোপনে রেখেছেন। এসবের মাঝেও অনেক আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী নিজেদের উপস্থিতি জানান দিতে প্রতিকূল অবস্থাতেও মাঝেমধ্যে ঝটিকা মিছিল বের করার তথ্য গণমাধ্যমে এসেছে। এরই মধ্যে বিশাল জনতার একটি মিছিলেরভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। পোস্টটির ক্যাপশনে লেখা হয়, ‘উত্তাল ঢাকা, আমরা যখন মরতে শিখেছি, তখন কেউ আমাদের দাবাতে পারবে না’। ভাইরাল এই ভিডিওতে ‘শেখ হাসিনা, শেখ হাসিনা,’ জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’, ‘শেখ হাসিনা ভয় নাই, রাজপথ ছাড়িনাই’ শব্দে স্লোগানের আওয়াজ শোনা যায়।
‘হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু’ নামক ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গতকাল (০২ ডিসেম্বর) রাত ১০ টা ৩৭ মিনিটে পোস্টকৃত ভিডিওটি সবচেয়ে ভাইরাল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল পোস্টটি রাত ১০টা ৪৫ পর্যন্ত সাড়ে ৩৭ হাজারবার দেখা হয়েছে। ভিডিওটির কমেন্টে একাধিক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে “জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু” কমেন্ট করেছেন। আবার কেউ কেউ পুরোনো ভিডিও বলে দাবি করছেন করছেন। ‘শ্রাবণী সায়নি’ নামে অ্যাকাউন্ট লিখেছে, “জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু জয় হোক মানবতার নেত্রী শেখ হাসিনার।”
দাবির সত্যাতা যাচাইয়ের জন্য ভিডিও থেকে কিছু কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হয়। তাতে দেখা যায় গত ২৬ নভেম্বর রাত ৯টা ৪১ মিনিটে ‘মো. ইমরান হাসান (Md Imran Hassan)’ নামের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। ক্যাপশনে লেখা হয় “এডভোকেট আলিফ হত্যার প্রতিবাদে উত্তাল শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।”
ভিডিওতে রাস্তায় মিছিলরত জনগণকে, “দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা”, “ইসকনের ঠিকানা, এই বাংলায় হবেনা” , “জঙ্গিবাদের আস্তানা, এই বাংলায় হবেনা”, “ইসকনের আস্তানা, ভেঙ্গে দাও-গুড়িয়ে দাও”, “ইসকন তুই জঙ্গি, ফ্যাসিবাদের সঙ্গী” স্লোগান শোনা যায়।
তবে সম্পুর্ণ ভিডিওতে কোথাও “শেখ হাসিনা, শেখ হাসিনা”, “জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু”, “শেখ হাসিনা ভয় নাই, রাজপথ ছাড়িনাই” শব্দে স্লোগানের আওয়াজ শোনা যায়নি।
অনুসন্ধানে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি) ইসকন বিরোধী সেদিনের স্লোগানের মূহুর্তের আরও কিছু পোস্ট পাওয়া যায়।
ফেসবুক পোস্টগুলো থেকে পাওয়া এসব তথ্যের ভিত্তিতে অনুসন্ধানে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান কালের কণ্ঠের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
ওই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ২৬ নভেম্বর বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও ইসকনের সাবেক নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে তার অনুসারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলাকালে সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এই ঘটনার প্রতিবাদে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) শিক্ষার্থীরা রাত ৯টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে।
উল্লেখ্য, গত ২৬ নভেম্বর সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে কারাগারে নেওয়ার সময় চট্টগ্রাম আদালতের পাশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আইনজীবীদের সঙ্গে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের অনুসারীদের সংঘর্ষ চলাকালে সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ মিছিল ও মানবন্ধন করা হয়।
এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে হত্যার প্রতিবাদ মিছিলের ভিডিওতে আওয়ামী লীগের মিছিলের অডিও প্রযুক্তির সাহায্যে এডিট করে প্রচার করা হয়েছে।