চট্টগ্রাম নগরীর জেএম সেন হলের পূজামণ্ডপে ইসলামি ভাবধারার সংগীত পরিবেশনের ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে সরগরম দেশের সোশ্যাল মিডিয়া। এ ঘটনায় নগরীর কোতোয়ালি থানায় মামলা হওয়ার পর শহিদুল করিম ও নুরুল ইসলাম নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার মধ্যেই এবার ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে পূজার অনুষ্ঠানে ‘দে দে পাল তুলে দে, মাঝি হেলা করিস না। ছেড়ে দে নৌকা আমি যাব মদিনা’ শিরোনামের একটি গান পরিবেশনের ভিডিও। আড়াই মিনিটের ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, এক নারী শিল্পী দুর্গাপূজার অনুষ্ঠানের মঞ্চে গানটি পরিবেশন করছেন।
‘বাঁশেরকেল্লা’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে গতকাল শুক্রবার (১১ অক্টোবর) ভিডিওটির একটি স্ক্রিনশট পোস্ট করা হয়। পোস্টটির ক্যাপশনে লেখা, ‘এবার ঠিক আছে। পুরো হালাল ও সর্বজনীন গান এটা। কোনো সমস্যা নাই। দুর্গা পূজার ষ্টেইজে চলছে, দে দে পাল তুলে দে মাঝি হেলা করিস না, ছেড়ে দে নৌকা মাঝি যাবো মদিনা।’ আবার ‘জয় বাংলা পেইজ’ নামের আরেকটি পেজ থেকে ভিডিওটি শেয়ার করে ক্যাপশনে লেখা, ‘এবার পূজামণ্ডপে মহিলা শিল্পীর ইসলামি গান শুনতে থাকেন— ‘মদিনায় নবী এল মা আমেনার ঘরে’।
পূজার মঞ্চে ‘দে দে পাল তুলে দে, মাঝি হেলা করিস না’ গানটি আসলে কখন, কোথায় গাওয়া হয়েছে?
ভিডিওটির উৎস অনুসন্ধানে ‘কেএসইউসি দুর্গা পূজা গ্রুপ (KSUC Durga Puja Group)’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে ভিডিওটি পাওয়া যায়। ভিডিওটি ২০১৮ সালের ২১ অক্টোবর গ্রুপটিতে পোস্ট করেন গ্রুপের অ্যাডমিন স্বপন কুমার দাশ। পোস্টটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, মঞ্চে যে নারী ‘দে দে পাল তুলে দে’ গানটি পরিবেশন করছেন, তাঁর নাম সুতপা গাঙ্গুলি। কেএসইউসি দুর্গা পূজার আয়োজনে তিনি এই গান পরিবেশন করেন।
কেএসইউসি সম্পর্কে অনুসন্ধানে জানা যায়, এটির পূর্ণ রূপ কোডিচিক্কানাহল্লি সর্বজনীন উৎসব কমিটি (Kodichikkanahalli sarbojanin utsav committee)। এটি ভারতের বেঙ্গালুরুভিত্তিক একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠানটি বেঙ্গালুরুতে দুর্গাপূজা উদ্যাপনের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন উৎসব আয়োজনের মাধ্যমে ভারতের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ প্রচারে কাজ করে।
ফলে নিশ্চিত যে, দুর্গা পূজার মঞ্চে ‘দে দে পাল তুলে দে...ছেড়ে দে নৌকা আমি যাব মদিনা’ গানের ভিডিওটি বাংলাদেশের নয় এবং ভিডিওটি ৬ বছরের পুরোনো।
এ ছাড়া ‘বাঁশের কেল্লা’ পেজটি থেকে গতকাল শুক্রবার রাত ১১টায় ‘দে দে পাল তুলে দে...ছেড়ে দে নৌকা আমি যাব মদিনা’ গানটি গাওয়ার ৩০ সেকেন্ডের আরও একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা, ‘এখানে “মদিনা যাওয়ার কথা উঠলেও” সম্ভবত এটা নিয়ে বেশি নাড়াচাড়া হবে না। আর এটাকে পুঁজি করে ছাত্রশিবির নিয়েও সাম্প্রদায়িক প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হবে না অনলাইনে। কারণ এখানে একে তো নারী শিল্পীর অংশগ্রহণ আছে, সঙ্গে বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার আছে।’
ভিডিওটি যাচাই করে দেখা যায়, এটিও ভারতের। ভিডিওটিতে দৃশ্যমান ব্যানারে দেখা যায়, দুর্গা পূজার এ আয়োজনটি করা হয়েছে ভারতের কলকাতার দক্ষিণ সুভাষ নগরে।
সুতরাং, বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে ভারতের দুর্গাপূজার মঞ্চে ‘দে দে পাল তুলে দে...ছেড়ে দে নৌকা আমি যাব মদিনা’ গান পরিবেশনের ভিডিওকে বাংলাদেশের দাবিতে প্রচার করা স্পষ্টত বিভ্রান্তিকর।