Ajker Patrika
হোম > ফ্যাক্টচেক

খালেদা জিয়া কি জামায়াতকে ‘বেইমান, মুনাফেক’ বলেছিলেন

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক

খালেদা জিয়া কি জামায়াতকে ‘বেইমান, মুনাফেক’ বলেছিলেন
প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে মিত্রতার সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। সম্প্রতি ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এই সম্পর্কে আপাত টানাপোড়েন দেখা যাচ্ছে। দুই দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বক্তব্য থেকেও সেটির ইঙ্গিত মিলছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত ২৯ আগস্ট একটি জাতীয় দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘জামায়াতের সঙ্গে আমরা এই মুহূর্তে আর জোটবদ্ধ নাই।’ এর একদিন পর জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর বাস্তবে কোনো জোট নেই।’

এমন প্রেক্ষাপটে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রায় ১ মিনিটের একটি বক্তব্যের ভিডিও দীর্ঘদিন ধরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার হয়ে আসছে। গতকাল শনিবার একই ভিডিও মাইক্রোব্লগিং সাইট এক্স–এ মিহাদ আহমেদ নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে ‘স্টেপ ডাউন ইউনূস’ হ্যাশট্যাগ দিয়ে টুইট করা হয়। ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন সময় ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছে।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জামায়াতে ইসলামীকে ‘বেইমান, মুনাফেক’ বলেছেন দাবিতে এক্স পোস্ট। ছবি: এক্স
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জামায়াতে ইসলামীকে ‘বেইমান, মুনাফেক’ বলেছেন দাবিতে এক্স পোস্ট। ছবি: এক্স

ভিডিওটিতে খালেদা জিয়াকে বলতে শোনা যায়, ‘জামায়াতে ইসলাম, এরা, এরা হলো বেইমান, মুনাফেক। এরা মুনাফেক। এদের কাছে দেশ বড় নয়, মানুষ বড় নয়, মানুষের জীবন বড় নয়। ঠিক কিনা? আপনারা দেখেছেন না, পার্বত্য চট্টগ্রামে বৌদ্ধ মন্দিরগুলার কী অবস্থা করেছে! ভেঙে নষ্ট করে সব তছনছ করে দিয়েছে। হিন্দুদের মন্দিরে গিয়ে আক্রমণ করে মন্দির ভাঙে, মূর্তি ভাঙে, তাদের অলংকার চুরি করে। হিন্দু ধর্মের ভাইদের বাড়িঘর, জমি–জায়গা তারা দখল করে। এই হলো তাদের প্রকৃত চেহারা। খুন–খারাবি এটা ইসলামের মধ্যে নাই। ইসলাম হলো সবচেয়ে পবিত্র ধর্ম, শান্তির ধর্ম। এই দুনিয়াই শেষ নয়। এরপর যে দুনিয়া হবে সেটাই আসল। আল্লাহ তায়ালা কাউকে মাফ করবে না খারাপ কাজ করলে, অন্যায় কাজ করলে।’

খালেদা জিয়া কি এমন কথা বলেছেন?

খালেদা জিয়ার বক্তব্যটি সম্পর্কে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চে ইউটিউবে শাহজালাল সাজু নামের একটি চ্যানেলে ২০২২ সালের ২৮ জুন পোস্ট করা একটি ভিডিও পাওয়া যায়। প্রায় ২৩ মিনিটের ভিডিওটি খালেদা জিয়ার নামে প্রচারিত বক্তব্যটির দীর্ঘ সংস্করণ। ভিডিওটিতে থাকা তথ্যানুযায়ী, এটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ধারণকৃত।

ভিডিওটির ৪ মিনিট ৫৭ সেকেন্ডে খালেদা জিয়া বলেন, ‘এই সরকারের হাতে কোনো ধর্মের মানুষ নিরাপদ নয়। আপনারা দেখেছেন না, পার্বত্য চট্টগ্রামে বৌদ্ধ মন্দিরগুলোতে কী অবস্থা করেছে! সারা দেশে হিন্দুদের মন্দির ভেঙে দিয়েছে। এ কারণে এ সরকারের ওপর সাধারণ মানুষের কোনো আস্থা নেই। এরা বেইমান, মুনাফেক। এদের কাছে টাকা আর ক্ষমতাই বড়।’

একই ভিডিওর ৮ মিনিট ৩৪ সেকেন্ডে খালেদা জিয়া বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামকে বলে...জামায়াতে ইসলাম বিএনপির সঙ্গে আছে, এখন তাই জামায়াতে ইসলামকে নানা অপবাদ দেওয়া হয়। জামায়াত ইসলাম খারাপ, জামায়াতে ইসলামীকে কখনো জঙ্গি বানায়, কখনো স্বাধীনতা–বিরোধী, যা ইচ্ছা তাই বলে। কিন্তু জামায়াতে ইসলাম যখন আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছিল তখন তারা ছিল আওয়ামী লীগের বন্ধু, স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি।’

২০১৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আয়োজিত সমাবেশে আওয়ামী লীগ ও জামায়াতকে নিয়ে খালেদা জিয়ার বক্তব্য। ছবি: বাংলা নিউজ ২৪

খালেদা জিয়ার এই বক্তব্যের সূত্রে প্রাসঙ্গিক কি–ওয়ার্ড অনুসন্ধানেনিউজ পোর্টাল বাংলানিউজ ২৪–এ ২০১৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ওই দিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নিয়াজ মোহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ২০ দলীয় জোট আয়োজিত জনসভায় টানা পৌনে এক ঘণ্টা বক্তব্য দেন বিএনপি নেতা খালেদা জিয়া।

বক্তব্যের একপর্যায়ে আওয়ামী লীগের হাতে কোনো ধর্মই নিরাপদ নয় উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘সময় আসবে, তখন ভুলে যাবেন না। এদের হাতে আপনাদের রক্ত। শুধু আলেম বা মুসলমান না, কোনো মানুষই নিরাপদ না। চট্টগ্রামে বৌদ্ধ মূর্তি ভেঙে দিয়েছে। সারা দেশে হিন্দুদের মন্দির ভেঙে দিয়েছে। এ কারণে এ সরকারের ওপর সাধারণ মানুষের কোনো আস্থা নেই। এরা বেইমান, মুনাফেক। এদের কাছে টাকা আর ক্ষমতাই বড়।’

একাত্তরে যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে খালেদা জিয়া বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে আছে বলে এখন জামায়াতে ইসলাম খারাপ, স্বাধীনতা–বিরোধী। কিন্তু এই জামায়াত আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছিল। তখন তারা স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি ছিল।’

সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগাম নির্বাচনের দাবিতে এবং গুম–খুন–নির্যাতন, জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা ও বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতাসংসদের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে ২০ দলীয় জোট সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশে জোট নেতাদের মধ্যে বক্তব্য দেন জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমানও।

এ ছাড়া খালেদা জিয়া জামায়াতে ইসলামীকে কখনো প্রকাশ্যে ‘বেইমান, মুনাফেক’ বলেছেন কোনো তথ্য পাওয়া যায় না।

সংবাদমাধ্যমে পাওয়া তথ্য ও ইউটিউবের দীর্ঘ ভিডিওটি থেকে এটি নিশ্চিত, খালেদা জিয়া ‘বেইমান, মুনাফেক’ শব্দদ্বয় উল্লেখ করেছেন আওয়ামী লীগ সম্পর্কে। তাঁর এই বক্তব্য কাটছাঁট করে জামায়াতে ইসলামী প্রসঙ্গে দেওয়া বক্তব্যের সঙ্গে জুড়ে দিয়ে দাবি করা হচ্ছে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জামায়াতে ইসলামীকে ‘বেইমান, মুনাফেক’ বলেছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা factcheck@ajkerpatrika.com

দুই নারীর ব্যাগ থেকে লাশ উদ্ধারের দাবিতে ছড়ানো ভিডিওটি বাংলাদেশের নয়, ভারতের

ঢাকায় আউটসোর্সিং কর্মচারীদের বিক্ষোভকে আ.লীগের প্রকাশ্য মিছিল বলে প্রচার

দেশে ডাকাতির ভিডিওর দাবিতে ছড়াল ইন্দোনেশিয়ার ভিডিও

ঢাকার রাস্তায় ধর্ষণের দৃশ্য দাবিতে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি ভারতের

ট্রাম্পের গাড়িবহরকে আইসিসির শুনানিতে শেখ হাসিনার লবিস্টদের বহর দাবিতে প্রচার

ভারতের ঘটনাকে ঢাকার নবাবপুরে স্বর্ণকারের দোকানে ডাকাতি বলে প্রচার

কফি পানে মানুষের শারীরিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়— প্রচলিত ধারণাটি কি বিজ্ঞানসম্মত

ভারতীয় অভিনেত্রীর উন্মুক্ত বক্ষের দৃশ্যকে বাংলাদেশি তরুণীর ধর্ষণবিরোধী প্রতিবাদ বলে প্রচার

‘তরুণীকে ১৮ জন মিলে ধর্ষণ ও হত্যা’ দাবিতে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি পুরোনো

শহীদ মিনারে প্রবেশে মির্জা ফখরুলকে বাধা—ভাইরাল ছবিটির সত্যতা জানুন