ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন জায়গায় গণপিটুনিতে নিহতের বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে। এসবের মধ্যে আলোচিত তিনটি ঘটনা ঘটে রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয় চট্টগ্রামে জেলাটির আঞ্চলিক ভাষার জনপ্রিয় গান ‘মধু হই হই আঁরে বিষ খাওয়াইলা’ গেয়ে গেয়ে এক যুবককে মারধরের ভিডিও। মারধরে ওই যুবকের মৃত্যু হয়।
ফেসবুকে এক যুবককে চ্যাংদোলা করে মারধরের ৩১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। গত শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) ‘এস কে জুয়েল (Sk Juwel)’ নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটি ‘আমাদের বাংলাদেশের সব মেধাবী শিক্ষার্থীরা’ ক্যাপশনে পোস্ট করা হয়। ভিডিওটি আজ বুধবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ৭ হাজারের বেশি শেয়ার হয়েছে, ভিডিওটি দেখা হয়েছে ৪ লাখ ১৭ হাজার বার। একই ভিডিও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ছাত্রলীগের নির্যাতনের ভিডিও দাবিতেও বেশ কিছু ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করা হয়েছে। গত রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) দ্য নিউ নেশন পত্রিকার সাংবাদিক শিমুল পারভেজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটি পোস্ট করে লেখা হয়, ‘পালিয়ে যাওয়া আপার সোনার ছেলেরা যেভাবে নির্যাতন করত!’ ভাইরাল ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, এক যুবকের চার হাত–পা ধরে শূন্যে ঝুলিয়ে রেখেছেন চার যুবক। আর লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটাচ্ছেন আরও দুই যুবক। এ সময় আশপাশে আরও কয়েকজন যুবককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। উপুর হয়ে থাকায় মারধরের শিকার যুবকের মুখ দেখা যাচ্ছে না। ভিডিওটিতে সেই যুবককে চিৎকার করতে শোনা যাচ্ছে।
ভিডিওটি থেকে কিছু কি–ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চে তুরস্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম এনসনহাবের–এর ওয়েবসাইটে একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। ২০১৫ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে ভিডিওটি সম্পর্কে বলা হয়, এটি ভারতের ঘটনা। ধর্ষণের অভিযোগে ওই যুবককে মারধর করা হয় এবং একপর্যায়ে তাঁর মৃত্যু হয়। প্রতিবেদনটিতে ঘটনাটি ভারতের কোন অঞ্চলের, কখন ঘটেছে সে সম্পর্কিত কোনো তথ্য নেই। রিভার্স ইমেজ সার্চে ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ডেইলি মোশনেও ভিডিওটি পাওয়া যায়। প্ল্যাটফর্মটিতে ভিডিওটি ৯ বছরে আগে পোস্ট করা হয়েছে। তবে ভিডিওর ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো বর্ণনা পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শেরেবাংলা হলের আবাসিক ছাত্র আবরার ফাহাদকে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে নিয়ে রাতভর নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়। ওই সময়ও একই ভিডিও আবরার হত্যার ফুটেজ দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল।
অনুসন্ধানে প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে এটি স্পষ্ট, বাংলাদেশে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে ভাইরাল ভিডিওটির কোনো সম্পর্ক নেই। এটি দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন দাবিতে ইন্টারনেটে বিদ্যমান।