Ajker Patrika
হোম > ফ্যাক্টচেক > বিদেশ

আসামের অবৈধ অভিবাসী নয়, এটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ছবি

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক

আসামের অবৈধ অভিবাসী নয়, এটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ছবি

সম্প্রতি ভারতের ফেসবুক ও টুইটার ব্যবহারকারীদের অনেকেই একটি ছবি পোস্ট করে দাবি করছেন, সেটি আসামের অবৈধ অভিবাসীদের ছবি।

বিজেপি নেতা এবং উত্তর দিল্লির সাবেক মেয়র রবীন্দ্র গুপ্ত ছবিটি তাঁর টুইটার অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেছেন। হিন্দি ভাষায় লেখা ক্যাপশন গুগল ট্রান্সলেটরের সাহায্যে অনুবাদ করলে দাঁড়ায়—‘দেশের মানুষের চাকরি চলে যাচ্ছে অনুপ্রবেশকারীদের কাছে। খাদ্য দেওয়া হচ্ছে তাদের, যারা দেশের নিরাপত্তা ভাঙার জন্য কাজ করে। বিজেপি সরকার অনুপ্রবেশকারীদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করার দিকে এগোচ্ছে, কংগ্রেস পার্টি আমাদের আটকাতে পারবে না: এইচএম।’

ক্যাপশনে হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে লেখা হচ্ছে, ‘অবৈধ অভিবাসীদের থেকে আসাম মুক্ত করুন।’ বিজেপির বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও সাধারণ ফেসবুক-টুইটার ব্যবহারকারী ছবিটি একই ধরনের ক্যাপশন দিয়ে পোস্ট করেছেন।

ফ্যাক্টচেক
ভাইরাল হওয়া ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতিতে অনুসন্ধান করে দেখা যায়, এটি বাংলাদেশে আশ্রিত মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ছবি।

ইন্ডিয়া টিভি নিউজ নামের একটি সংবাদমাধ্যমে ২০১৭ সালের ১৮ অক্টোবর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। বার্তা সংস্থা এপির বরাতে প্রকাশিত ছবিটির ক্যাপশনে লেখা হয় এটি রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ১৭ অক্টোবর তোলা হয়েছে।

এরপরও বিভিন্ন সময়ে সংবাদমাধ্যমে ছবিটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের উল্লেখ করে প্রকাশিত হয়েছে।

ছবির ক্যাপশনে ‘এইচএম’ শব্দটি ব্যবহার করে মূলত ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে (হোম মিনিস্টার) উদ্ধৃত করা হচ্ছে বলে বোঝানো হয়েছে। টুইটে ব্যবহৃত উদ্ধৃতিটি ২০১৮ সালে অমিত শাহ রাজস্থানে নির্বাচনী প্রচারের সময় এক সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্য থেকে নেওয়া হয়েছে। বিজেপির ভেরিফায়েড ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৮ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি ভিডিওতে ওই সম্মেলন সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়। রাজস্থানের পালিতে বিভিন্ন পশ্চাৎপদ পেশার মানুষকে নিয়ে ওই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

আসামে অবৈধ অভিবাসন বিতর্ক
আসামে অবৈধ অভিবাসন নিয়ে বিতর্ক বেশ পুরোনো। আসামের ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনস বা এনআরসির প্রথম তালিকাটি প্রকাশিত হয় ১৯৫১ সালে। তৎকালীন পূর্ববঙ্গ পাকিস্তানের অংশ হওয়ার পর লাখ লাখ লোক সীমান্ত অতিক্রম করে নবগঠিত ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেয়।

এই সমস্যা আবার দেখা দেয় ১৯৬০ ও ১৯৭০-এর দশকে। প্রথমটি ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ও দ্বিতীয় পর্যায়ে বাংলাদেশে পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতার লক্ষ্যে আন্দোলন শুরু হওয়ার প্রেক্ষাপটে। সে সময় অনেক মানুষ পালিয়ে ভারতে চলে যায়। এদের একাংশ আসামে আশ্রয় নেয়।

অল আসাম স্টুডেন্ট ইউনিয়ন (আসু) ১৯৭৯ সালে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। ১৯৮৩ সালে এই আন্দোলন সহিংস রূপ নেয়, যাতে ২০০০ সন্দেহভাজন অবৈধ অভিবাসী প্রাণ হারান। এদের বেশির ভাগই ছিলেন মুসলমান।

আসু এবং কয়েকটি আঞ্চলিক দল এই প্রশ্নে শেষ পর্যন্ত ১৯৮৫ সালে রাজীব গান্ধীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে একটা চুক্তিতে আসে।

চুক্তিতে বলা হয়, কেউ যদি ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের আগে থেকে আসামের বাসিন্দা বলে নিজেকে প্রমাণ করতে না পারে, তবে তাকে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে এবং তাকে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে বিবেচনা করা হবে।

২০১৯ সালে নতুন করে নাগরিকদের তালিকা প্রকাশের পর থেকে এই বিতর্ক ভিন্ন মাত্রা পায়। দুই দেশের রাজনীতিতেও এর প্রভাব লক্ষ করা যায়।

সিদ্ধান্ত
ভারতের আসামের ‘অবৈধ অভিবাসী’ দাবিতে যে ছবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটি বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ২০১৭ সালে বার্তা সংস্থা এপির তোলা।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা factcheck@ajkerpatrika.com

অন্ধকারে রাস্তায় পড়ে জখম তরুণী, ভাইরাল ভিডিওটির ঘটনাস্থল বাংলাদেশ নয়

লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানল ঠেকাতে আজান— ভাইরাল ভিডিওটি পাকিস্তানের

লস অ্যাঞ্জেলেসে আগুন নেভাতে গিয়ে বিমান বিধ্বস্ত হয়নি, ভাইরাল ভিডিওটি চিলির

ঢাকায় কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষকে হিন্দু নির্যাতনের ঘটনা দাবি বিজেপি নেতার

নূর হোসেন দিবসে রক্তাক্ত কৃষক লীগের নেত্রীকে ‘ধর্ষিত হিন্দু নারী’ বলে এক্সে ভারতীয়দের গুজব

নাসার মহাকাশযান মেরিনার ১ কোডিংয়ে হাইফেনের ভুলে ধ্বংস হয়নি, সত্যিটা জানুন

ভারতের নির্বাচন: বাংলাদেশি আলেমের পুরোনো ভিডিও দেখিয়ে মুসলিম বিদ্বেষী প্রচার

‘ভারতে জাল ভোট দিতে কৃত্রিম আঙুল’, ভাইরাল ছবিটির নেপথ্যে

‘হিট স্ট্রোকে ফেরিওয়ালার মৃত্যু’ দাবিতে ভাইরাল ছবিটি ছয় বছরের পুরোনো

নির্বাচনী প্রচারণার পাঁচ দিনে মোদির যত মিথ্যাচার, লাগাম পরাবে কে